ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১

সোহানের বীরত্বে অবিশ্বাস্য জয় রংপুরের

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০০:১৯, ১০ জানুয়ারি ২০২৫

সোহানের বীরত্বে অবিশ্বাস্য জয় রংপুরের

মাত্র ৭ বলে অপরাজিত ৩২ রান করে রংপুরকে টানা ছয় জয় এনে দিয়েছেন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান (মাঝে)

রংপুর রাইডার্সকে কেউ থামাতেই পারছে না। দুরন্ত গতিতে ছুটেই চলেছে তাদের জয়রথ। এমনকি কাগজেকলমে অন্যতম শক্তিশালী গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল দুই দফার প্রচেষ্টাতেও থামাতে পারেনি তাদের। বৃহস্পতিবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফিরতি সাক্ষাতে নাটকীয় এক ম্যাচে বরিশালকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে রংপুর। ম্যাচটিতে জয় হাতের মুঠোয় এসে গিয়েছিল বরিশালের।

৭ উইকেট হারিয়ে শেষ ওভারে ২৬ রান প্রয়োজন ছিল বরিশালের। তখনই অবিশ^াস্য টর্নেডো দেখা গেছে রংপুর অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানের ব্যাটে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস অলরাউন্ডার কাইল মায়ার্সকে ৩ চার ও ৩ ছক্কা হাঁকিয়ে ৩০ রান তুলে অবিশ^াস্য এক জয় এনে দেন তিনি রংপুরকে। আগে ব্যাট করে বরিশাল নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৯৭ রান তোলে। জবাবে শেষ বলে সোহানের ছক্কায় ৭ উইকেটে ২০২ রান করে টানা ষষ্ঠ জয় তুলে নেয় রংপুর।

প্রথম সাক্ষাতে বরিশালকে ৮ উইকেটে হারিয়েছিল তারা। এবারও জিতল। ৫ ম্যাচে বরিশালের হার এ দুটিই। এই ম্যাচে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে স্বীকৃত টি২০ ক্রিকেটে ৮ হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়েছেন বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। 
টস জিতে আগে বরিশালকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় রংপুর। অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত  দেখেশুনে দারুণ শুরু এনে দেন বরিশালকে। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ৪৬ রান তোলে তারা। ১০ ওভারে আসে ৮১ রান। একাদশ ওভারের প্রথম বলে শান্ত ৩০ বলে ৫ চার, ১ ছয়ে ৪১ রান তুলে বিদায় নেন। ওই ওভারেই পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি শেষ বলে সাজঘরে ফেরান তামিমকে। এ বাঁহাতি ৩৪ বলে ৪ চার, ২ ছয়ে ৪০ রান করেন।

৭ হাজার ৯৯৩ রান নিয়ে এদিন খেলতে নেমে স্বীকৃত টি২০-তে ৮ হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়ে যান তিনি। এর পর মায়ার্স ও তাওহিদ হৃদয় ৫৯ রানের একটি জুটি গড়েন। যদিও মায়ার্স ব্যক্তিগত ২২ রানে কট বিহাইন্ড হয়েছিলেন, কিন্তু বলটি ‘নো’ হওয়ায় বেঁচে যান তিনি। এর পর সেই মায়ার্স করেছেন ঝড়ো ফিফটি। তাওহিদ অবশ্য ১৮ বলে ১ চার, ১ ছয়ে ২৩ রানেই বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু মায়ার্স মাত্র ২৯ বলে ১ চার ও ৭ ছক্কায় ৬১ রানে অপরাজিত থাকেন।

পাকিস্তানের অলরাউন্ডার ফাহিম আশরাফ ৬ বলে ১ চার, ২ ছক্কায় শেষদিকে ২০ রান করেন। তাদের এই বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে শেষ ৫ ওভারেই ৭৩ রান তোলে বরিশাল। নাহিদ রানা ১৯তম ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন শেষ ওভারে ২২ রান করে দিয়েছেন । ফলে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৯৭ রান তোলে বরিশাল। কামরুল ৩ ওভারে ৪৭ রানে ২ উইকেট নেন।

নাহিদ ৪ ওভারে ৪৭ রান দিয়ে কোনো সাফল্য পাননি। তবে অধিনায়ক সোহান চলতি আসরে অন্যতম সফল অফস্পিনার খুশদিল শাহকে বোলিং না করিয়ে সমালোচনার জন্ম দেন। খুশদিল ৫ ম্যাচে ৯ উইকেট শিকার করেছেন ওভারপ্রতি মাত্র ৫.৫৭ হারে রান খরচা করে। 
জবাব দিতে নেমে ৬৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা বিপাকে হারে। ওই সময় তৌফিক খান ২৮ বলে ৩ চার ও ৩ ছয়ে ৩৮ রানে যখন বিদায় নেন তখন ৯ ওভার সমাপ্ত হয়েছে। এর পর চতুর্থ উইকেটে ইফতিখার আহমেদ ও খুশদিল ৯১ রানের জুটি গড়েন। মাত্র ৫৩ বল থেকে তাদের করা এ জুটিতেই জয়ের আশা জেগে ওঠে। কিন্তু ইফতিখার ৩৬ বলে ৩ চার, ৩ ছয়ে ৪৮ রান এবং খুশদিল ২৪ বলে ২ চার, ৫ ছক্কায় ৪৮ রান করে পর পর দুই ওভারে বিদায়  নেন।

১৯তম ওভারে খুশদিল ফিরে যাওয়ার পরের বলেই শেখ মেহেদি হাসান (০) ফিল্ডিংয়ে সমস্যা করায় আউট হন। বাঁহাতি পেসার জাহানদাদ খান ওই ওভারের পঞ্চম বলে সাইফউদ্দিনকেও শিকার করেনে। ফলে বরিশাল নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যায় ম্যাচে। তখনো ৭ বলে ২৬ রান দরকার রংপুরের। শেষ ওভারে মায়ার্সকে ছক্কা হাঁকিয়ে শুরু করেন, শেষ বলেও ছক্কা হাঁকিয়ে রংপুরকে অবিশ^াস্য জয় এনে দেন তিনি। সব মিলিয়ে নেন ৩০ রান।

৭ বলে ৩ চার, ৩ ছয়ে ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন সোহান। ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ২০২ রান তুলে টানা ৬ ম্যাচে জয় তুলে নিয়ে শীর্ষস্থান অটুট রাখে রংপুর। জাহানদাদ ৪ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে ২টি এবং তানভীর ইসলাম, শাহীন শাহ আফ্রিদি, ফাহিম ও রিশাদ হোসেন ১টি করে উইকেট নেন।

×