ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১

দাপুটে জয়ে শুরু খুলনার মিশন

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০০:৪৭, ১ জানুয়ারি ২০২৫

দাপুটে জয়ে শুরু খুলনার মিশন

বিপিএলের ইতিহাসে দ্রুততম ফিফটির পর খুলনা টাইগার্সের মাহিদুল ইসলাম অংকনের উদ্যাপন

তামিম ইকবালের নেতৃত্বে গত বিপিএলে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফরচুন বরিশাল। মেহেদি হাসান মিরাজেরও ছিল সেটি প্রথম শিরোপার স্বাদ। টাইগার অলরাউন্ডার এবার ঠিকানা বদলে জন্মস্থান খুলনা টাইগার্সের অধিনায়ক। মাঠের ক্রিকেটে বরাবরই সাহসী চরিত্রের অধিকারী মিরাজ  বলেছিলেন, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই মাঠে নামবে তার দল। সেই লক্ষ্যে টাইগার্সদের শুরুটা হয়েছে দুর্দান্ত। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) মঙ্গলবার দিনের প্রথম ম্যাচে চিটাগং কিংসকে ৩৭ রানে হারিয়েছে খুলনা।

টম ও’কনেলের বিরুদ্ধে টাইম আউটের আবেদন করেও পরে সেটি প্রত্যাহার, বোলিংয়ে ওশেন থমাসের ১ বলে ১৫ রান, মিরপুরে এমনি নাটকীয়তায় ভরপুর ম্যাচে অবশ্য নায়ক মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। বিপিএল বাংলাদেশী হিসেবে তার দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির (১৮ বলে ৫০) রেকর্ডর পর ২২ বলে অপরাজিত ৫৯ রানে ভর করে ৪ উইকেটে ২০৩ রানের বড় স্কোর গড়ে খুলনা। জবাবে ১৮.৫ ওভারে ১৬৬ রানে থামে চিটাগংয়ের সংগ্রহ। বিফলে যায় শামিম পাটোয়ারীর ৩৮ বলে ৭৮ রানের ঝড়ো ইনিংস।
হোম অব ক্রিকেট মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ২০২৪ বর্ষ বিদায়ের জন্য দেড় ঘণ্টা এগিয়ে দুপুর বারোটায় শুরু ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন চিটাগং অধিনায়ক মোহাম্মদ মিথুন। ১৭ বলে ২৬ রান করে মোহাম্মদ নাঈম আউট হলে আরেক ওপেনার উইলিয়াম বোসিস্তোর সঙ্গী হন মিরাজ। ১৮ বলে ১৮ রান করে ফেরেন অধিনায়ক। এরপর দ্রুতই ইব্রাহিম জাদরান (৭ বলে ৬) ও আফিফ হোসেন (৭ বলে ৮) আউট হলে ১১৭ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় টাইগার্স শিবির।

অপর প্রান্তে বোসিস্তোর সঙ্গী হন অঙ্কন। এরপরই আসে খুলনার ইনিংসের চেহারা পাল্টে দেওয়া সেই জুটি। শুরুর জড়তা কাটিয়ে ৩৬ বলে পঞ্চাশে পা-রাখেন বোসিস্টো। প্রায় চার বছরের বিরতির আগে ১১ টি২০ ম্যাচ খেলে তার সর্বোচ্চ রান ছিল ৩৬, স্ট্রাইক রেট ছিল ৯৭। সেই তিনি নিজেকে মেলে ধরলেন এবার ভিন্ন রূপে। ইনিংস শুরু করতে নেমে শেষ পর্যন্ত খেলে ৫০ বলে ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৫ রানে অপরাজিত থাকেন বোসিস্টো। স্বীকৃতি ক্রিকেটে তিনি সর্বশেষ খেলেছেন ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে, টি২০তে তার আগের ম্যাচটি ছিল ২০১৯ সালে। ক’দিন আগে নেপাল প্রিমিয়ার লিগে খেলে নতুনভাবে ফিরে আসেন অস্ট্রেলিয়ার ৩১ বছল বয়সী এ ব্যাটসম্যান। বোসিস্টোর সঙ্গে অঙ্কনের অবিচ্ছিন্ন পঞ্চম উইকেট জুটিতে খুলনার ৮৬ রান পায় মাত্র ৩৫ বলে।

 
জোড়া ধাক্কার পর ব্যাাটিংয়ে নামা অঙ্কন শুরু থেকেই ছিলেন বিধ্বংসী। ক্রিজে এসেই পরপরই টানা দুটি ছক্কা মারেন অফস্পিনার শামিম পাটোয়ারীকে। পরের ওভারে তিনটি ছক্কা মারেন পেসার শরিফুল ইসলামকে। এই বাঁহাতি পেসারের পরের ওভারে চার ও ছক্কা মেরে পঞ্চাশে পৌঁছে যান তিনি ১৮ বলে। বিপিএলে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের যা দ্রুততম ফিফটি। শেষ ওভারে আর ছক্কা মারতে না পারলেও ২২ বলে ১ চার ও ৬ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ৫৯ রানে। স্ট্রাইক রেট ২৬৮.১৮। বিপিএলে ফিফটি ছোঁয়া ইনিংসে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের আড়াইশ স্ট্রাইক রেটের ইনিংস এটিই প্রথম। টুর্নামেন্টটিতে এটিই বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের দ্রুততম ফিফটি।

২০২৩ সালে রংপুর রাইডার্সের হয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ১৯ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেছিলেন রনি তালুকদার। এ ছাড়া সব মিলিয়ে বিপিএলে এর চেয়ে কম বলে ফিফটি আছে আর মাত্র দুজনের- সুনিল নারাইন (১৩ বলে) ও উইল জ্যাকস (১৬ বলে)। মিরপুরে টি২০ সংস্করণে অঙ্কনের চেয়ে দ্রুত ফিফটি শুধু নারাইনেরই। ৪ উইকেটে ২০৩ রানের পাহাড়ে চড়ে মিরাজের খুলনা। বিপিএলের চলতি আসরে প্রথমবার দুইশ’ রানের স্কোর পায় কোন দল।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় ৫৬ রানে ৬ ও ৬৭ রানে ৭ উইকেট হারানো চিটাগংয়ের আশা কার্যত অনেক আগেই শেষ হয়ে যায়। এ পর্যায়ে ¯্রােতের বিপরীতে দুর্দান্ত পাল্টা আক্রমণে নিজের টি২০ ব্যাটিংয়ের সামর্থ্য আরেকবার দেখান শামিম পাটোয়ারী। উইকেটের চারপাশে খেলেন দারুণ সব শট। নবম উইকেটে ৪৭ বলে ৭৭ রানের জুটি গড়েন তিনি আলিস আল ইসলামের সঙ্গে। সেখানে আলিসের অবদান ১৮ বলে ৬, শামীমের রান ২৯ বলে ৬৯! ১৯তম ওভারে আবু হায়দার অবশেষে থামান শামিমকে।

বিপিএল ও টি২০তে নিজের আগে সেরা ৭১ ছাড়িয়ে এবার তিনি করেন ৭৮। ওই ওভারে খালেদের ব্যাটে দুটি ছক্কা হজম করে তাকে ফিরিয়েই চার উইকেট পূরণ করেন আবু হায়দার রনি। ২ উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ নওয়াজ। একটি করে শিকার হাসান মাহমুদ, মিরাজ ও নাসুম আহমেদের।  
সংক্ষিপ্ত স্কোর : খুলনা টাইগার্স : ২০৩/৪ (২০ ওভার; নাঈম শেখ ২৬, বোসিস্টো ৭৫*, মিরাজ ১৮, জাদরান ৬, আফিফ ৫৯*; আলিস ২/১৭, খালেদ ২/৪৫)। 
চিটাগং কিংস : ১৬৬/১০ (১৮.৫ ওভার; নাঈম ১২, পারভেজ ১৩, উসমান ১৮, মিঠুন ৬, হায়দার ০, শামীম ৭৮, ও’কনেল ০, ওয়াসিম ৮, আলিস ৬*, খালেদ ১৪*; টমাস ১/১৮, হাসান ১/৩০, আবু হায়দার ৪/৪৪, নাওয়াজ ২/১৩, মিরাজ ১/২৬)।
ফল : খুলনা টাইগার্স ৩৭ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা : মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন (খুলনা)।

×