গত ৩০ অক্টোবর কাঠমান্ডুতে স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার নারী সাফের ট্রফি জয় করেন বাংলার বাঘিনীরা
‘জীবনপথের বাঁকে বাঁকে, দিন যায় কথা থাকে, থেকে যায় কত স্মৃতি, হবে না কভু ইতি।’ ক্রীড়াঙ্গনের পঞ্জিকাবর্ষ থেকে অতিক্রান্ত হলো আরেকটি ফুটবলবর্ষ। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের ফুটবলের ক্ষেত্রে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে নারী ফুটবলে। পুরুষ ফুটবলের চেয়ে বেশি সফল ছিল নারী ফুটবলই। চলুন পড়ে ফেলা যাক বাংলাদেশের নারী ফুটবলের সালতামামি ২০২৪।
সাবিনা-সানজিদার ভারতের লিগে খেলা ॥ বছরের শুরুতেই ভারতীয় নারী লিগে খেলতে যান সাবিনা খাতুন ও সানজিদা আক্তার। কর্নাটকের কিকস্টার্ট ফুটবল ক্লাবের হয়ে খেলেন সাবিনা ও সানজিদা খেলেন ইস্ট বেঙ্গল নারী ক্লাবে। যদিও সাবিনা-সানজিদা কারোর ক্লাবই লিগে শিরোপা জেতেনি। তবে কলকাতায় সানজিদার গ্ল্যামার ও তারকা খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।
সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবলের শিরোপাজয় ও বিতর্ক ॥ ৮ ফেব্রুয়ারি ঘরের মাঠে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতে বাংলাদেশের মেয়েরা। কিন্তু এই শিরোপা তারা এককভাবে জিততে পারেনি। শিরোপায় ভাগ বসায় ভারত-ও। আর এ নিয়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ফাইনালে নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রথমে এক দলকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা, পরে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করা, শেষমেশ দুই দলকে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা... সবমিলিয়ে বিতর্কের পসরা সাজানো হয়েছিল কমলাপুর স্টেডিয়ামে।
ফাইনালে স্বাগতিক বাংলাদেশ মুখোমুখি হয় ভারতের। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হলে সরাসরি ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেও ৫-৫ গোলে সমতা থাকায় খেলা গড়ায় সাডেন ডেথে। সেখানেও ৬-৬ গোলে সমতা থাকে। তারপর লঙ্কান ম্যাচ কমিশনার ডি সিলভা জয়সুরিয়া দিলান ঝামেলা পাকান। তিনি সাডেন ডেথ প্রক্রিয়া বন্ধ করে রেফারিকে বলেন টসের মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন দল বেছে নিতে। অথচ এই প্রক্রিয়াটাই ছিল ‘গলদ’! পরে বাংলাদেশ এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করলে দীর্ঘসময় পর ম্যাচ কমিশনার দু’দলকেই যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে!
হিমালয়ের দেশে বিজয়-কেতন ওড়ালেন ইয়ারজানরা ॥ মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে আরেকটি সাফল্য কুড়িয়ে নেয় বাংলাদেশের মেয়েরা। সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে ভারতকে টাইব্রেকারে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় তারা।
এএফসি ওমেন্স চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বাংলাদেশের চার ফুটবলার ॥ আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) অধীনে প্রথমবার অনুষ্ঠিত হয় নারী চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। টুর্নামেন্টটিতে অংশ নিতে পারেনি বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংস নারী ফুটবল দল (বাফুফের গাফিলতায়)। তারপরও এই লিগে বাংলাদেশের চার নারী ফুটবলার খেলেন (সাবিনা খাতুন, মনিকা চাকমা, ঋতুপর্ণা চাকমা এবং মারিয়া মান্দা) ভুটানের ক্লাব রয়্যাল থিম্পু কলেজ এফসির হয়ে।
সিনিয়র সাফের শিরোপা অক্ষুণœ রেখে ইতিহাস ॥ ২০২২ সালে নেপালের মাটিতে প্রথমবার সিনিয়র সাফের শিরোপা জিতে ইতিহাস পড়েছিল বাংলার বাঘিনীরা। ২০২৪ সালেও একই ভেন্যুতে (অক্টোবরে) অনুষ্ঠিত হয় আসরটি। কিন্তু সেই আসরে সাবিনারা ভাল করতে পারবেন না, এমনটাই অনুমেয় ছিল। কারণ প্রস্তুতি ম্যাচের অভাব, ফিটনেস সমস্যা, বেতন না পাওয়ায় খেলোয়াড়দের মনে অসন্তোষ, কয়েক সিনিয়র খেলোয়াড়ের অনুপস্থিতি, গতবারের চেয়ে দলের শক্তিমত্তায় ভাটা, নতুন কোচের সঙ্গে বোঝাপড়া ও দলীয় সমন্বয়ের অভাব... এমনই নানা সমস্যা।
অনেকেই আশঙ্কা করেন বাংলাদেশ নারী দলটা হয়তো এবার গ্রুপপর্ব থেকেই বাদ পড়বে। কিন্তু সব ধারণাকে মিথ্যে প্রমাণ করে অপরাজিত চ্যাম্পিয়নই হয়ে যায় বাংলাদেশ! ফাইনালে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো উইমেন্স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতে তারা। ঋতুপর্ণা চাকমা হন টুর্নামেন্ট সেরা এবং সেরা গোলরক্ষক হন রূপনা চাকমা (টানা দ্বিতীয়বার)।