উইকেট শিকারের আনন্দ তাসকিন আহমেদ (ডানে), রিশাদ হোসেন (বাঁয়ে) ও তানজিদ তামিমের, শুক্রবার কিংসটাউনে
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ৩ ফরম্যাটের মধ্যে বাংলাদেশ দলের বড় শক্তি ওয়ানডেতে। কিন্তু সেই ওয়ানডেতে ১০ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে সিরিজ হারের সঙ্গে হোয়াইটওয়াশও হয়েছে। বাংলাদেশ সেই হারের মধুর প্রতিশোধ নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টি২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে। শুক্রবার কিংসটাউনে আরনস ভেল গ্রাউন্ডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচে স্বাগতিকদের ৮০ রানের বড় ব্যবধানে বিধ্বস্ত করেছে টাইগাররা।
এটি টেস্ট খেলুড়ে কোনো দলের বিপক্ষে টি২০-তে সবচেয়ে বড় জয় বাংলাদেশের। ক্যারিবীয়দের এই প্রথম টি২০-তে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ। অথচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই ফরম্যাটেই সবচেয়ে ভয়ংকর দল ক্যারিবীয়রা। তারা র্যাঙ্কিংয়ে আছে ৪ নম্বরে। দুর্দান্ত এই সাফল্যে বড় অবদান বোলারদের। অফস্পিনার শেখ মেহেদি হাসান ৮ উইকেট নিয়েছেন ওভারপ্রতি মাত্র ৪.১৮ হারে রান খরচা করে। তাই ক্যারিয়ারে প্রথমবার সিরিজসেরা হয়েছেন তিনি। ফর্মে নেই লিটন কুমার দাস, কিন্তু তার নেতৃত্বে এবার অবিস্মরণীয় সাফল্য পেয়েছে দল। তিনি জানিয়েছেন, বোর্ড চাইলে স্থায়ীভাবে অধিনায়কত্বে রাজি আছেন।
টানা দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ আগেভাগে নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ। ৬ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় টাইগাররা। শুক্রবার তৃতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচে মোক্ষম সুযোগ হয় ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশ করার। সেটিই বাস্তব করেছে বাংলাদেশ দল। আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৮৯ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে। জবাবে ১৬.৪ ওভারে ১০৯ রানেই গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস।
৮০ রানের এ জয়টি বাংলাদেশের টি২০-তে দ্বিতীয় সর্বাধিক ব্যবধানের জয়। ২০২১ সালের বিশ্বকাপে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে ৮৪ রানের জয়ই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সেরা। এই ম্যাচে ম্যাচে ছন্দে থাকা সৌম্য সরকারকে ছাড়াই নামতে হয়েছে বাংলাদেশকে। তার ইনজুরিতে ঠাঁই করে নেন পারভেজ হোসেন ইমন এবং ওপেনিংয়ে নেমে ঝড় তোলেন। তার সঙ্গে লিটন কুমার দাস ভালো খেলতে থাকলেও ১৩ বলে ৩ চারে ১৪ রান করেই বিদায় নিয়েছেন।
কিন্তু পারভেজ ২১ বলে ৪ আর, ২ ছয়ে ৩৯ রান করেন। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ২ উইকেটে ৫৪ রান করে বাংলাদেশ। মেহেদি হাসান মিরাজ ২৩ বলে ৩ চারে ২৯ রানে বিদায় নেন। ১৪.৫ ওভারে ১১৪ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর জাকের আলী অনিক তা-ব চালিয়েছেন। তিনি ক্যারিয়ারসেরা ব্যাটিং করেন। মাত্র ৪১ বলে ৩ চার, ৬ ছক্কায় অপরাজিত ৭২ রান করেন। ফলে শেষ ৫ ওভারে ৭৫ রান পায় বাংলাদেশ। এমনকি ওবেদ ম্যাককয়ের ১৮তম ওভারে ২০ এবং আলজারি জোসেফের ২০তম ওভারে ২৫ রান তুলে নেন জাকের। রোমারিও শেফার্ড ২ উইকেট নেন।
১৯০ রানে বড় টার্গেটে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস ২০ বল আগেই থামে ১০৯ রানে। রোমারিও ২৭ বলে ১ চার, ৩ ছক্কায় সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেন। রিশাদ হোসেন ৩টি এবং তাসকিন আহমেদ ও শেখ মেহেদি ২টি করে উইকেট নেন। এ নিয়ে তৃতীয়বার কোনো প্রতিপক্ষকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইট ওয়াশ করেছে বাংলাদেশ।
২০১২ সালে আয়ারল্যান্ড ও ২০২৩ সালে ইংল্যান্ডকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইট ওয়াশ করে টাইগাররা। ২০২১ সালে নিউজিল্যান্ডে এক টি২০-তে নেতৃত্ব দেওয়া লিটন এবার ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও অধিনায়কত্ব করে বড় সাফল্য পেয়েছেন। তিনি বলেছেন,‘বিসিবি যদি আমাকে দায়িত্ব দেয় আমি করতে রাজি আছি। এখানে দ্বিমত থাকার কোনো কথা না। আমি এটা উপভোগ করছি।’