অফস্পিনার শেখ মেহেদী হাসান, শেষ ম্যাচে ৪১ বলে অপরাজিত ৭২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছেন জাকের আলী অনিক (ডানে)
টি২০তে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সবসময়ই ভয়ংকর। ছোট্ট ফরম্যাটের ক্রিকেটে প্রথম দল হিসেবে দুটি বিশ্বকাপ জয় করা ক্যারিবীয়দের ছাড়া আইপিএল, সিপিএল, পিএসএল, বিপিএলসহ বিশ্বের সব ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টই বলতে গেলে অচল। সেই উইন্ডিজকে তাদেরই মাটিতে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ, তাও আবার নিজেদের প্রিয় ওয়ানডেতে একই ব্যবধানে হারের পর।
নাজমুল হোসেন শান্ত, মুস্তাফিজুর রহমানের মতো অভিজ্ঞদের ছাড়া টাইগারদের অবিস্মরণীয় এ সাফল্যের নেপথ্যে অদম্য তারুণ্য। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে শেষ ম্যাচে জয়ের নায়ক জাকের আলি অনিক, দুরন্ত অলরাউন্ড নৈপুণ্যে সিরিজসেরা শেখ মেহেদী হাসান, লেগস্পিনারের হাহাকার ঘোচানো রিশাদ হোসেন বছরজুড়ে অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে গড়েছেন নতুন রেকর্ড।
উইন্ডিজ গ্রেট কার্টলে অ্যামব্রোস তরুণ এই টাইগারদের নিয়ে গড়া বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখছেন। সেন্ট ভিনসেন্টে প্রতিটি ম্যাচে কঠিন পরিস্থিতে ব্যাটে-বলে যেভাবে হাল ধরেছেন, দৃশ্যপট বদলে দিয়েছেন, সেটি ছিল দেখার মতো। ক্যারিবীয়দের ‘হোয়াইটওয়াশ’ করার ম্যাচে ভয়ংকর সুন্দর ব্যাটিং করেছেন জাকের। পাঁচ নম্বরে নেমে ৪১ বলে ৩ চার ও ৬ ছক্কায় খেলেছেন অপরাজিত ৭২ রানের ইনিংস।
৭ উইকেটে ১৮৯ রানের ‘চ্যালেঞ্জিং’ স্কোর গড়ার পর প্রতিপক্ষকে ১০৯ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে এসেছে ৮০ রানের বিশাল জয়। জাকেরের সঙ্গে শামিম হোসেনের ভুল বোঝাবুঝিতে দুই ব্যাটার একই প্রান্তে চলে এসেছিলেন। খালি চোখে মনে হচ্ছিল রান আউট জাকের। তিনি নিজেও আউট ভেবে ড্রেসিংরুমে চলে আসেন। পরে রিপ্লেতে দেখা যায় শামিম আউট, আবার ব্যাটিংয়ে ফেরেন জাকের, ড্রেসিংরুমে গিয়ে আমি আমার প্যাডে ব্যাট দিয়ে মারছিলাম। হঠাৎ তৃতীয় আম্পায়ার ডাকল। এরপর আরও একটা রান আউট। নিজের ওপর রাগ হচ্ছিল খুব। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাকে সৌভাগ্য দিয়েছেন যাতে দলে অবদান রাখতে পারি। তাদের রানগুলো আমি করতে পেরেছি। খুবই খুশি। বলছিলেন তিনি।
তিন ম্যাচে ৬০ গড়ে সিরিজের সর্বোচ্চ ১২০ রান এসেছে জাকেরের ব্যাট থেকে। এর আগে টেস্ট সিরিজেও সর্বোচ্চ ১৭৬ রান করেছিলেন তিনি। ম্যাচে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ ও শেখ মেহেদী। ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে রিশাদের শিকার ৩ উইকেট। গড়েছেন বাংলাদেশের হয়ে এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বাধিক উইকেটের নতুন রেকর্ড। সিরিজে ৬টিসহ চলতি ২০২৪ সালে তার উইকেট মোট ২৪ ম্যাচে ৩৫টি। ২০২১ সালে ২০ ম্যাচে ২৮ উইকেট নিয়ে আগের রেকর্ডটি ছিল মুস্তাফিজের।
এই বছর ১৯ ম্যাচে ৩০ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। ২৭ ম্যাচে ৪৬ উইকেট নিয়ে শীর্ষে সহযোগী দেশ হংকংয়ের ইলিয়াস খান। অবশ্য টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে আর্শদীপ সিং ও শাহীন শাহ আফ্রিদির উইকেট সমান ৩৬টি। অ্যাডাম জাম্পা ও রিশাদের ৩৫। অফস্পিনে ৮ উইকেট শিকারের পাশাপশি লোয়ার-অর্ডারে কার্যকর ৩৭ রান করে সিরিজসেরা হয়েছেন শেখ মেহেদী।