কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফি নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবলারদের উল্লাস
আগামী বছরেই বড় পরিসরে ক্লাব বিশ্বকাপ আয়োজন করবে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ফিফা। তাই এবার ক্লাব বিশ্বকাপের আদলে আন্তঃমহাদেশীয় বা ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ টুর্নামেন্টের আয়োজন করে তারা। ফিফার ছয় কনফেডারেশনের চ্যাম্পিয়ন নিয়ে আয়োজিত এই নকআউট ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে বুধবার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগজয়ী রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হয় কনক্যাকাপ চ্যাম্পিয়ন পাচুকা। আর এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেয় মেক্সিকোর ক্লাব পাচুকাকে।
আন্তঃমহাদেশীয় কাপ জিতে অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ২০২৪ সালে পাঁচ শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল। শিরোপার বিবেচনায় যা লস ব্ল্যাঙ্কোসদের ইতিহাসে দ্বিতীয় সেরা সাফল্যের বছর। এর আগে ২০১৭ সালেও নিজেদের এযাবৎকালের ইতিহাসে প্রথমবার পাঁচ শিরোপা জয়ের বিস্ময়কর কীর্তি গড়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। সেবার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, স্প্যানিশ লা লিগা, ক্লাব বিশ্বকাপ, ইউরোপিয়ান সুপার কাপ এবং স্প্যানিশ সুপার কাপের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছিল তারা।
২০২৪ সালে কাতারে আন্তঃমহাদেশীয় কাপ জয়ের আগে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, স্প্যানিশ লা লিগা, ইউরোপিয়ান সুপার কাপ এবং স্প্যানিশ সুপার কাপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। ১৩তম স্প্যানিশ সুপার কাপের শিরোপা জিতে চলতি বছর শুরু করেছিল ভিনিসিয়াস-বেলিংহ্যামরা। জানুয়ারিতে বার্সেলোনাকে সেই ম্যাচে ৪-১ গোলে হারিয়েছিল লস ব্ল্যাঙ্কোসরা। মে মাসে চার ম্যাচ হাতে রেখেই স্প্যানিশ লা লিগার ৩৬তম ট্রফি জিতে রিয়াল মাদ্রিদ।
১ জুন ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে ২-০ গোলে হারিয়ে রেকর্ড সর্বোচ্চ ১৫বার ইউরোপ সেরার মুকুট পড়ে কার্লো আনচেলত্তির দল। এরপর আটালান্টাকে ২-০ গোলে হারিয়ে ইউরোপিয়ান সুপার কাপ জিতে তারা। সর্বশেষ বুধবার পাচুকাকে বিধ্বস্ত করে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ জয়ের মাধ্যমে এক বছরে পাঁচ শিরোপা জয়ের কীর্তি গড়ে রিয়াল মাদ্রিদ।
২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামেই ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। বুধবার কাতারের সেই লুসাইল স্টেডিয়ামেই ফুরফুরে মেজাজে নেমেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। কেননা একদিন আগেই যে ফিফার দ্য বেস্ট অ্যাওয়ার্ড জিতেন রিয়ালের ব্রাজিলিয়ান তারকা ভিনিসিয়াস জুনিয়র। সেরা কোচ হন কার্লো আনচেলত্তি।
বর্ষসেরা দলেও জায়গা করে নেয় মাদ্রিদের ৬ খেলোয়াড়। তাই পাচুকার বিপক্ষে ফেভারিটের ট্যাগ গায়ে মেখেই মাঠে নামে আনচেলত্তির শিষ্যরা। শুরুটাও করে দুর্দান্ত। ম্যাচের ৩৭ মিনিটেই এগিয়ে যায় মাদ্রিদ। দলের সেরা তিন তারকার সৌজন্যে আসে এই গোল। জুড বেলিংহ্যাম প্রথমে পাস দেন ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে। আর বাকি কাজটা করেন কিলিয়ান এমবাপে।
দ্বিতীয়ার্ধের ৫২ মিনিটে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে দূর পাল্লার এক বাঁকানো শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রিয়ালের ব্রাজিলিয়ান তারকা রদ্রিগো। ম্যাচের বয়স যখন ৮৩ মিনিট তখন পেনাল্টি থেকে গোল করে রিয়ালের জয়ের ব্যবধানটাকে ৩-০ করে বর্তমান বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় ভিনিসিয়াস জুনিয়র। তাতেই প্রমাণ হয় রিয়াল মাদ্রিদ কেন সময়ের সেরা ক্লাব। লুসাইল স্টেডিয়াম ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বরের রাতটা বেশ হতাশার ছিল কিলিয়ান এমবাপের জন্য।
বিশ্বকাপ ফাইনালে ব্যক্তিগত পারফর্মেন্সে ঔজ্জ্বল্য ছড়ালেও শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে যে আর্জেন্টিনার কাছে হেরেছিল তার দল ফ্রান্স। সেবার কান্নায় মাঠ ছাড়লেও দুই বছর পর সেই একই মাঠে এবার এমবাপের মুখে চ্যাম্পিয়নের হাসি। তবে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বল জিতেছেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। রিয়ালের কোচ হিসেবে এটা আনচেলত্তির ১৫তম ট্রফি জয়ের নজির। রিয়ালের ১২২ বছরের ইতিহাসে যা নেই আর কোন কোচের।