.
কিংসটাউনে সিরিজের প্রথম টি২০তে শামীম হোসেন পাটোয়ারী যখন ক্রিজে আসেন ১৫ ওভার শেষে ৯৫ রানে ৫ উইকেট নেই বাংলাদেশের। ১৩ বলে ২৭ রানের ইনিংসে সেখান থেকেই দলকে নিয়ে গেলেন দেড়শ’র কাছাকাছি। দ্বিতীয় ম্যাচের পরিস্থিতি তো আরও খারাপ, ১৬ ওভারে ৮৮ রানে নেই ৭ উইকেট। একশ’র নিচে আটকে পড়ার শঙ্কা, শামীম এবার নিয়ে গেলেন ১২৯ রানে। মাত্র ১৭ বলে খেললেন অপরাজিত ৩৫ রানের ক্যামিও। প্রতিপক্ষের সাঁড়াশি বোলিংয়ে সতীর্থরা যখন কাঁপছিলেন, শামীম হাঁকালেন ২ চার ও বিশাল ২ ছক্কা, স্ট্রাইকরেট ২০৫.৮৮! ধুন্ধুমার টি২০তে একেবারে ‘রিয়েল ফিনিশিং’ বলতে যা বোঝায়। উইন্ডিজের মতো দলকে এরপর ১০২ রানে গুটিয়ে ২৭ রানে জয়ের কৃতিত্ব বোলারদের, তবে কঠিন পরিস্থিতিতে ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে শামীম-ই ম্যাচের নায়ক।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে যেখানে টি২০তে জয় ছিল না, সেখানে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করল বাংলাদেশ। দুটি ম্যাচেই জ্বলে উঠলেন শামীম। ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের তরুণ এ ব্যাটারের ২০২১-২০২২ বিপিএলের পারফর্ম্যান্স দেখে ভবিষ্যতের ফিনিশাররের আখ্যা দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মুর্তজার মতো গ্রেট। ওই বছরই টি২০ দিয়ে জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা-রাখনে। তবে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলেন। এবার ইতিহাসগড়া সিরিজজয়ে নিজেকে মেলে ধরলেন। বললেন, ‘আমি ফিনিশার, বলে হিট করাই আমার কাজ।’ দুই ম্যাচে খেলা একই উইকেটে।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের চিত্রও প্রায় একই। শামীম হোসেন যখন ক্রিজে গেছেন, দলের অবস্থা সঙ্গীন। চাপের মধ্যেও দুই ম্যাচে সহজাত ব্যাটিং উপহার দিয়ে দলের জয়ে তিনি রেখেছেন বড় অবদান, ‘আমি খুবই খুশি। অনেক দিন পর জাতীয় দলে ফিরেছি। দলে আমার দায়িত্ব ফিনিশারের, আমার কাজই হলো বলে হিট করা। গত কয়েক মাসে অনেক পরিশ্রম করেছি।’ ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে বলছিলেন চাদপুর থেকে উঠে আসা ২৪ বছর বয়সী বাঁহাতি হার্ডহিটার ব্যাটার।
শামীম বলেন বলেন, ‘আমার সবসময়ই চিন্তা থাকে যে, দল যেরকমই থাকুক, আমি যদি খেলতে পারি, আমার দল অনেক ওপরে চলে যাবে। সব সময় ইতিবাচক ভাবনা থাকে আমার। ভালো খেলতে পেরেছি, এতেই আমি খুশি, আমার পরিবার খুশি, পুরো দেশ খুশি। এটাই ভালো লাগছে।’ গত বছরের ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরের পর দলে জায়গা হারিয়েছিলেন শামীম। এরপর বিপিএলে কিছুটা ঝলক দেখালেও পারফরম্যান্স খুব ভালো ছিল না। টি২০ বিশ্বকাপের দলেও জায়গা পাননি। তবে ইতিবাচক থেকে ব্যাটিং নিয়ে কাজ করে গেছেন। জাতীয় দলের আশপাশ যেখানে সুযোগ পেয়েছেন, ভালো করার চেষ্টা করেছেন। নিজেকে আরও শাণিত করতে পেরেছেন বলেই বিশ্বাসটা ছিল যে, জাতীয় দলে ফিরলে এবার ভালো করবেন, ‘বাদ পড়েছিলাম, ওসব নিয়ে চিন্তা করি না। অনেক ইতিবাচক চিন্তা নিয়ে চলাফেরা করি এবং খুশি থাকতে পছন্দ করি। জানতাম, যে কোনো সময় ফিরে আসতে পারব। আমি সর্বশেষ যতগুলো ম্যাচ খেলেছি, এইচপি দল, এইচপির হয়ে অস্ট্রেলিয়া সফর, ইমার্জিং দল, ওসবে ভালো খেলেই এসেছি। এজন্য অনেক আত্মবিশ্বাস পাচ্ছিলাম যে, সুযোগ পেলে ভালো খেলব।’