.
গত জুনে সেন্ট ভিনসেন্টের আরনস ভেল গ্রাউন্ড থেকে দুঃসহ এক বেদনাকে সঙ্গী করে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ দল। কারণ গত জুনে এখানে অনুষ্ঠিত টি২০ বিশ^কাপের সুপার এইট থেকে বাংলাদেশ বিদায় নেয় আফগানিস্তানের কাছে লো-স্কোরিং ম্যাচের রোমাঞ্চে মাত্র ৮ রানে হেরে। সেই পরাজয়ের তিক্ততা প্রত্যাবর্তনের জন্য বড় অনুপ্রেরণা কিংবা চালিকাশক্তি হয়েছে টাইগারদের জন্য। এবার সেই ভেন্যুতে টানা দুই টি২০ জিতে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জিতে নিয়েছে এক ম্যাচ বাকি রেখেই। প্রথম ম্যাচে লড়াইয়ের পর ৭ রানে এবং দ্বিতীয় ম্যাচে বুধবার সকালে ২৭ রানে জিতেছে টাইগাররা। তাই কিংসটাউনে বাংলাদেশ দলের প্রত্যাবর্তনটা হয়েছে সুমিষ্ট স্বাদের। ৬ বছর পর উইন্ডিজের বিপক্ষে টি২০ সিরিজ জিতেছে তারা। বাংলাদেশ দলকে উজাড় করেই দিয়েছে আরনস ভেল, কারণ সবমিলিয়ে এখানে ৫ টি২০ খেলে মাত্র একটাই হেরেছে তারা। এই ফরম্যাটে শক্তিমত্তা আর র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাদের বিপক্ষেই এবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বছরের শেষ সিরিজটা জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছর আর কোনো ফরম্যাটেই বাংলাদেশের খেলা নেই। শুক্রবার সিরিজের শেষ ম্যাচটা জিততে পারলে তা হবে টাইগারদের জন্য সোনায় সোহাগা।
সেন্ট ভিনসেন্টের কিংসটাউনে আরনস ভেল গ্রাউন্ডে এ বছর জুনেই ৩ টি২০ খেলেছে বাংলাদেশ দল। টি২০ বিশ^কাপের গ্রুপ পর্বে নেদারল্যান্ডস ও নেপালের বিপক্ষে জয় পেয়ে সুপার এইট নিশ্চিত করে তারা। তবে সুপার এইটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে লো-স্কোরিং থ্রিলারে মাত্র ৮ রানে হেরে যায়। সেই দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে এবার স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি২০ সিরিজে নেমেছে বাংলাদেশ। এর সঙ্গে আরও যোগ হয়েছে কিছুদিন আগে সেন্ট কিটসে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে উইন্ডিজের কাছে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার টাটকা ক্ষত। সেই হার থেকে টি২০ সিরিজে দারুণ কিছু করা বেশ দুরূহই বাংলাদেশ দলের জন্য। কারণ অপরিহার্য অনেকেই টি২০ স্কোয়াডে নেই এবং আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে ক্যারিবীয়রা ৪ নম্বরে ও বাংলাদেশ ৯ নম্বরে। সার্বিকভাবে ব্যাকফুটে থেকেই সেজন্য টি২০ সিরিজ শুরু করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সেন্ট ভিনসেন্টের এই মাঠে লো-স্কোরিং ম্যাচ হয়ে থাকে, অভিজ্ঞতাটা বাংলাদেশের খুব বেশি পুরনো হয়নি। স্পিন সহায়ক, ধীরগতির নিচু হয়ে আসা বলে ব্যাটিং করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। তাই প্রথম টি২০তে এখানে ১৪৭ রান করেও শেষ ওভারের নাটকীয়তায় ৭ রানে জিতে যায় বাংলাদেশ। সেটিই দলকে উজ্জীবিত করে। কারণ বোলাররা ওয়ানডে সিরিজে হঠাৎ করেই তেমন ভালো করতে পারেননি। এই ম্যাচে বাংলাদেশী বোলাররা দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ান। তাদের নৈপুণ্যেই প্রথম টি২০ জিতে সিরিজ জয়ের আশা জেগে ওঠে বাংলাদেশের।
প্রথম টি২০ ম্যাচে অফস্পিনার শেখ মেহেদি হাসান দারুণ বোলিং করে ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়ে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করে ৪ উইকেট নিয়েছেন। তাই বুধবার দ্বিতীয় টি২০তে ব্যর্থ আফিফ হোসেন ধ্রুবকে বাদ দিয়ে মেহেদি হাসান মিরাজকে দলে ভিড়িয়েছে বাংলাদেশ। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে অবশ্য পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ২ উইকেটে মাত্র ২৯ রান করতে পেরেছে দল। মিরাজ ব্যাটিং ভালোই করছিলেন। কিন্তু সতর্ক সৌম্য সরকার ১৮ বলে ১ চারে ১১ রানে নবম ওভারে এবং দশম ওভারের শেষ বলে মিরাজ ২৫ বলে ৩ চার, ১ ছয়ে ২৬ রানে বিদায় নেওয়ার পর বিপাকেই পড়ে বাংলাদেশ। এরপর রিশাদ হোসেন ৫ ও শেখ মেহেদি হাসান ১১ এবং দারুণ খেলতে থাকা জাকের আলী ২০ বলে ১ চার, ১ ছয়ে ২১ রানে বিদায় নিলে চরম বিপাকে পড়ে যায় বাংলাদেশ। কারণ ১৬.১ ওভারে তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ৮৮। এরপর মূলত শামীম হোসেন পাটোয়ারীর ১৭ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় অপরাজিত ৩৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংস বাংলাদেশ দলের সংগ্রহকে ভদ্রস্থ করেছে। বাঁহাতি স্পিনার গুডাকেশ মোতি ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ২টি, আকিল হোসেন ৪ ওভারে ১৬ রানে ১টি ও রোস্টন চেজ ২ ওভারে ৮ রানে ১টি করে উইকেট নেন। ৩ স্পিনার ভালো করাতেই বোঝা যাচ্ছিল বাংলাদেশী বোলারদের জন্য এই সংগ্রহটাই লড়াই করার জন্য ভালো পুঁজি। ক্যারিবীয়রা ব্যাটিংয়ে নামার পর অবশ্য পেসার তাসকিন আহমেদ তৃতীয় ওভারেই জোড়া আঘাতে ব্র্যান্ডন কিং (৮) ও আন্দ্রে ফ্লেচারকে (০) শিকার করে প্রথম ধাক্কা দিয়েছেন। আর অফস্পিনার শেখ মেহেদিও জনসন চার্লসকে (১২ বলে ১৪) ফিরিয়ে দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চেপে ধরেন বাংলাদেশের বোলাররা। উইন্ডিজ পেসাররা তেমন সুবিধা করতে না পারলেও বাংলাদেশী পেসাররা দুর্দান্ত বোলিং করছিলেন। বিশেষ করে তাসকিনের তোপে উইন্ডিজ টপঅর্ডার ধাক্কা খেয়েছে। তা ছাড়া শেখ মেহেদিও ওই সময়ের মধ্যে দুটি উইকেট তুলে নিয়েছেন। সেটিই সামাল দিতে পারেনি তারা।
পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ৩২ রান করতেই ৪ উইকেট হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর রোস্টন চেজ ৩৪ বলে ১ চার, ২ ছক্কায় ৩২ এবং আটে নেমে আকিল ৩১ বলে ২ ছক্কায় ৩১ রান করলেও বাকিদের ব্যর্থতা লো-স্কোরিং ম্যাচ বিবেচনায় বড় হারই এনে দিয়েছে স্বাগতিকদের। ৯ বল আগেই ১০২ রানে গুটিয়ে গেছে উইন্ডিজের ইনিংস। ১১টি করে ডট বল করা তাসকিন ৩.৩ ওভারে ১৬ রানে ৩টি এবং তানজিম হাসান সাকিব ৪ ওভারে ১ মেডেনে ২২ রানে ও রিশাদ ৩ ওভারে ১২ রানে ১টি কের উইকেট নেন। শেখ মেহেদি ১৮টি ডট বল করেছেন, ২০ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। মাত্র ৫টি ছক্কা হাঁকাতে পেরেছে উইন্ডিজের বিগ হিটিং ব্যাটাররা, চার মাত্র ৬টি! সেখানে বাংলাদেশের ইনিংসে ৪ হয়েছে ১০টি এবং ছক্কা হয়েছে ৪টি। এখানেই ১০ রানের পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন বাংলাদেশী বোলাররা এবং দ্রুত সাফল্য তুলে নেওয়ায় ২৭ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর টানা দুই টি২০ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করে অবিস্মরণীয় সাফল্যই পেয়েছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৮ম দ্বিপাক্ষিক টি২০ সিরিজে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় সিরিজ জয়, ৪টি জিতেছে ক্যারিবীয়রা। ৬ বছর আগে সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি২০ সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের সেই সিরিজে টানা দুই টি২০ জিতে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। তবে সেবার সেন্ট কিটসে প্রথম টি২০ হেরে পরে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে হওয়া সিরিজের বাকি দুই ম্যাচ জিতেছে টাইগাররা। এবার প্রথম দুটিতেই জিতে সিরিজ নিশ্চিত করেছে। টানা ৩ সিরিজ হারল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুক্রবার একই ভেন্যুতে আরেকটি জয়ের লক্ষ্যে নামবে বাংলাদেশ। তাহলেই প্রথমবার বাংলাদেশ টি২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।