ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২ পৌষ ১৪৩১

বিজয়ের দিনে মেহেদী রাঙা জয়

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০০:১৮, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

বিজয়ের দিনে মেহেদী রাঙা জয়

.

বিজয় মানে আনন্দ, বিজয় মানে উৎসবÑ তবু কেন বিউগলে এই করুন সুর? কারণ আত্মত্যাগ। কত শত প্রাণ হলো বলিদান, সন্তান হারালেন মা, রঞ্জিত হলো নববধূর মেহেদী রাঙা হাত। রক্তে পাওয়া সেই লাল-সবুজ পতাকা হাতে সোমবার সকালে বাংলাদেশের মানুষ যখন বিজয়ের ৫৩ বছর উদ্যাপনে, হাজার মাইল দূরে সেই লাল-সবুজ জার্সিতে রঙিন জাকের-সৌম্যরা। কিংসটাউনে ১৪৭ রানের পুঁজি নিয়েই ছোট্ট ফরম্যাটের বড় দল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৭ রানে হারাল টাইগাররা। আর রুদ্ধশ্বাস প্রথম টি২০তে নাটকীয় এই জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান। ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে যিনি শেখ মেহেদী নামেই বেশি পরিচিত। ২ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত ২৬ রানের পর অফস্পিনে ১৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরা। টি২০তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে পাওয়া প্রথম জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে ১-০ ব্যবধানে। একই ভেন্যুতে দ্বিতীয় ম্যাচ বুধবার ভোরে।
অথচ সেন্ট ভিনসেন্টে লিটন দাসের দল খেলতে নেমেছিল একরাশ হতাশা নিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট সিরিজ ড্র করলেও সেন্ট কিটসে ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। নিজেদের সবচেয়ে প্রিয় সংস্করণে যখন এমন হার, তখন টি২০তে দুর্ধর্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জই ছিল অপেক্ষায়। এই সেন্ট ভিনসেন্টেই গত জুনে টি২০ বিশ্বকাপের তিনটি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। যার শেষটা ছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে, বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলার হাতছানি নিয়ে। কিন্তু ফিরতে হয়েছিল মন খারাপ করেই। সব মিলিয়ে সেন্ট ভিনসেন্টে আবার ফেরাটা স্বস্তির উপলক্ষ ছিল না। আর টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করে পুঁজিটা দেড়শ’ পার করতে না পারায় তো আরও নয়। আর্নস ভেল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ২০ ওভারে ৬ উইকেটে করে ১৪৭ রান। ক্যারিবিয়ানদের ইনিংস শেষ হয় ১ বল বাকি থাকতে ১৪০ রানে। এক পর্যায়ে ৬১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বড় পরাজয়ের দুয়ারে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু অধিনায়ক রোভমান পাওয়েল (মাত্র ৩৫ বলে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ৬০) ও রোমারিও শেফার্ডের (১৭ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ২২) আগ্রাসী জুটিতে বদলে যায় দৃশ্যপট। ম্যাচ প্রায় মুঠোয় পুরে ফেলেন দুজন। ওই অবস্থায় শেষ ৩ ওভারে, অর্থাৎ ১৮ বলে ক্যারিবীয়দের প্রয়োজন ছিল মাত্র ২০ রান।  
আবার ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। শেফার্ডকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। রানের গতি আসে কমে। শেষ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চাই ১০ রানে। স্নায়ুর চাপ সামলে অসাধারণ বোলিং উপহার দেন হাসান মাহমুদ। ওভারের তৃতীয় বলে এই পেসার ফিরিয়ে দেন বিধ্বংসী পাওয়েলকে। পঞ্চম বলে আলজারি জোসেফকে বোল্ড করে দলকে এনে দেন তিনি দারুণ এক জয়। শেষের নায়ক হাসান হলেও ম্যাচের নায়ক শেখ মেহেদী। ব্যাট হাতে তার স্লথ গতির ২৪ বলে তার ২৬ রানের অপরাজিত ইনিংসটা ছিল প্রশ্ন জাগানিয়া। পরে বল হাতে তা পুষিয়ে দেন পুরোপুরি। ৪ ওভারের দুর্দান্ত স্পেলে প্রতিপক্ষের টপ ও মিডল অর্ডার ধসিয়ে দিয়ে ১৩ রানে নেন ৪ উইকেট। ৫২ ম্যাচের টি২তে ক্যারিয়ারসেরা। ‘নতুন বলে আমি সবসময়ই বোলিং করি। সাধারণত যেভাবে বল করি, সেই প্রক্রিয়াটায় ছিলাম এবং ওদের ডানহাতি ব্যাটসম্যান ছিল, তবে আমার পরিকল্পনা ছিল যাতে ওদের এই উইকেটে আরামে ও সহজে শট খেলতে না দেই। ওরা তো আসলে অনেক শক্তিশালী। ওভাবেই পরিকল্পনা করে বল করেছি।’ বলছিলেন মেহেদী। নাজমুল হোসেন শান্ত না থাকায় টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজের নেতৃত্বে ছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। টি২০তে দায়িত্বটা লিটন দাসের কাঁধে। দারুণ শুরুর পর এবার সিরিজয়ে চোখ ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের।
ব্যাট হাতে শূন্য হাতে ফেরা লিটনের নেতৃত্ব ছিল বেশ ক্ষুরধার। মাঠে দারুণ তৎপর দেখা গেছে তাকে। ৫ ডিসমিসালে গড়েছেন দেশের পক্ষে নতুন রেকর্ড। দলকে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে অনুপ্রাণিত করেছেন তিনি, ‘আমি সবসময়ই চাই, তারা যখন খেলবে, আগ্রাসী ক্রিকেট খেলবে। অনেক লম্বা সফর এটি। আমরা একটি টেস্ট জিতেছি। এখন প্রথম টি২০ জিতলাম। এটা সবার জন্য প্রেরণাদায়ী। আর একটি ম্যাচ ভালো খেলতে পারলে সিরিজ আমাদের।’
সংক্ষিপ্ত স্কোর : বাংলাদেশ : ১৪৭/৬ (২০ ওভার; তানজিদ ৬, সৌম্য ৪৩, লিটন ০, আফিফ ৮, জাকের ২৭, মেহেদী ২৬*, শামীম ২৭, রিশাদ ২*; আকিল ২/১৩, ম্যাককয় ২/৩০)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৪০/১০ (১৯.৫ ওভারে; কিং ১, চার্লস ২০, পুরান ১, চেইস ৭, ফ্লেচার ০, পাওয়েল ৬০, মোটি ৬, আকিল ২, শেফার্ড ২২, জোসেফ ৯, ম্যাককয় ০*; হাসান ২/১৮, তাসকিন ২/২৮, শেখ মেহেদী ৪/১৩, তানজিম ১/৪৭, রিশাদ ১/৩২)।
ফল : বাংলাদেশ ৭ রানে জয়ী।    
সিরিজ : তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০ তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ : শেখ মেহেদী (বাংলাদেশ)।

জোবায়ের

×