বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক ছক্কার মালিক এখন মাহমুদুল্লাহ
পুরনো চাল ভাতে বাড়ে সেই কথাটির যেন মোক্ষম নিদর্শণ দেখিয়ে যাচ্ছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আগামী ফেব্রয়ারিতেই বয়স ৩৯ হবে। ইতোমধ্যেই টেস্ট ও টি২০ থেকে অবসরে গেছেন তিনি। ভবিষ্যত পরিকল্পনায় হয়তো আগামী ফেব্রুয়ারিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরই ওয়ানডেকেও বিদায় জানাবেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
কিন্তু বয়স যত বাড়ছে ততোই উইলোবাজিতে ভেল্কিও বাড়ছে যেন তার। এবার কোনো একটি সিরিজে ক্যারিয়ারসেরা পারফর্ম্যান্স দেখিয়েছেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হয়েছেন বাংলাদেশের পক্ষে ছক্কার ‘রাজা’ এবং চতুর্থ বাংলাদেশী হিসেবে ১১ হাজার রানও পূর্ণ করেছেন।
বয়স বাড়ছে আর ব্যাট হাতে দুরন্ত মাহমুদুল্লাহ যেন উড়ছেন
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে করেন ৪৪ বলে ৩ চার ও ৩ ছয়ে অপরাজিত ৫০, দ্বিতীয় ম্যাচে ৯২ বলে ২ চার ও ৪ ছয়ে ৬২ এবং সর্বশেষ ৬৩ বলে ৭ চার ও ৪ ছক্কায় অপরাজিত ৮৪। সবমিলিয়ে ১৯৬ রান করেছেন এই সিরিজে। কোনো একটি সিরিজে এটাই সর্বাধিক রান মাহমুদুল্লাহর।
২০২১ সালে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১৪৮ রানই ছিল মাহমুদুল্লাহর সেরা। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ সফরে আসা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অবশ্য ৫ ম্যাচের সিরিজে করেছিলেন ১৭৯ রান। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক ৩৪৯ রানের রেকর্ড ইমরুল কায়েসের। তিনি ২০১৮ সালে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের সিরিজে সেই কীর্তি গড়েন।
সবমিলিয়ে ৩ ম্যাচে ১১ ছক্কা হাঁকিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ। এই সিরিজেই ওয়ানডেতে তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ছক্কার শতক হাঁকিয়েছেন তিনি। ২৩৮ ওয়ানডেতে এখন সর্বাধিক ১০৭টি ছক্কা তাঁর। অর্থাৎ বাংলাদেশের ছক্কার রাজা হয়েছেন মাহমুদুল্লাহ। তামিম ইকবাল ২৪৩ ওয়ানডেতে ১০৩টি ও মুশফিকুর রহিম ২৭২ ওয়ানডেতে ১০০ ছক্কার মালিক।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের সিরিজে ১১ ছক্কা হাঁকানো মাহমুদুল্লাহ পেরিয়েছেন ১১ হাজার রান
সবমিলিয়ে ওয়ানডে ইতিহাসে বিশ্বের ৪৯ জন ছক্কার সেঞ্চুরি করেছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের ৩ জন। সর্বাধিক ৩৫১ ছক্কা পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদির, ৩৩১টি করে ছক্কা নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে গেইল ও ভারতের রোহিত শর্মা। ৩ শতাধিক ছক্কা এই ৩ জনেরই আছে, ৫ জনের আছে ২০০+ (তিনশোর কম) এবং ৯ জনের ১৫০+ (দুশোর কম) ছক্কা আছে।
এশিয়ার ক্রিকেটারদের মধ্যে মাত্র ২০ জন ওয়ানডেতে ১০০টির বেশি ছক্কা হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেছেন। সেখানে ৩ জন বাংলাদেশী হলেও সবার ওপরে থাকা মাহমুদুল্লাহ আরেকটি ক্ষেত্রে এগিয়ে। ছক্কার সেঞ্চুরি করতে কম ইনিংস ব্যাট করেছেন তিনি তামিম ও মুশফিকের চেয়ে।
বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে প্রথম ছক্কার সেঞ্চুরি তামিম ইকবালের। তিনি ছক্কার সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ২ বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই। প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে ২০২২ সালের ১০ জুলাই ক্যারিয়ারের ২২৭তম ওয়ানডেতে ছক্কার সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। সেদিন ২২৪তম ইনিংসে ব্যাটিং করেছেন তিনি। মাহমুদুল্লাহর লেগেছে ২০৭ ইনিংস। সবমিলিয়ে ২৪৩ ওয়ানডেতে ১০৩টি ছক্কা তামিমের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মঙ্গলবার ৪ ছক্কা হাঁকিয়ে এখন সমান ১০৩ ছক্কায় তামিমকে ছুঁয়ে ফেলেন মাহমুদুল্লাহ ৬ ম্যাচ কম খেলে।
এছাড়া ওয়ানডেতে ১০০ ছক্কা হাঁকানো আরেক বাংলাদেশী মুশফিকুর রহিম। তিনি চলতি বছর ১৮ মার্চ চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ছক্কার সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ক্যারিয়ারের ২৭১তম ম্যাচে ২৫৩তম ইনিংসে ব্যাট করার পথে। এরপর অবশ্য আরেকটি ম্যাচ খেলেছেন তিনি।
সবমিলিয়ে ওয়ানডে ইতিহাসে বিশ্বের ৪৯ জন ছক্কার সেঞ্চুরি করেছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের ৩ জন। সর্বাধিক ৩৫১ ছক্কা পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদির, ৩৩১টি করে ছক্কা নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে গেইল ও ভারতের রোহিত শর্মা। ৩ শতাধিক ছক্কা এই ৩ জনেরই আছে, ৫ জনের আছে ২০০+ (তিনশোর কম) এবং ৯ জনের ১৫০+ (দুশোর কম) ছক্কা আছে।
তিন ফরম্যাটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবশ্য সবার আগে ২০০ ছক্কার মাইলফলক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ পেরিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেই। ওয়ানডে, টেস্ট ও টি২০ মিলিয়ে একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে সেই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তিনি। এখন ৩ ফরম্যাটে ৪২৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৪৩২ ইনিংস ব্যাট করে মাহমুদুল্লাহর ছক্কা ২০৮টি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা তামিমের ছক্কা ১৮৮টি। তিনি ৩৮৭ ম্যাচে ৪৪৮ ইনিংস ব্যাট করেছেন।
বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ দুই দলের মধ্যে হওয়া ওয়ানডে প্রতিযোগিতায় সর্বাধিক ২৭ ছক্কাও এখন মাহমুদুল্লাহর। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৪ ইনিংস ব্যাট করেছেন তিনি। দ্বিতীয় স্থানে এখন ক্রিস গেইল। তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে ২২ ইনিংস ব্যাট করে ২০ ছক্কা হাঁকিয়েছেন।
এর আগে একটানা এতো ভালো ক্যারিয়ার জুড়েই খেলতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ২০১৫ বিশ্বকাপে টানা ৩ ম্যাচে অর্ধশতাধিক রান করেছিলেন। সেবার একটি ফিফটির সঙ্গে ছিল দুটি সেঞ্চুরি। এবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডেতে ৯৮ বলে ৯৮ করার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা ৩ ফিফটি করেছেন।
টানা ৪ ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি পাওয়ায় মাহমুদুল্লাহ চতুর্থ বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ৩ ফরম্যাট মিলিয়ে ১১ হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়েছেন। মুশফিক ১৫ হাজার ৩০০, তামিম ১৫ হাজার ১৯২ ও সাকিব আল হাসান ১৪ হাজার ৭৩০ রান করেছেন আন্তর্জঅতিক ক্রিকেটের ওয়ানডে, টেস্ট ও টি২০ মিলিয়ে। এখন মাহমুদুল্লাহর রান ১১,০৪৩।
ইসরাত