অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতকে হারানোর পর গর্বের জাতীয় পতাকা নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের উল্লাস, রবিবার দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়া
বারবার ভারতের কাছে হেরে ক্রিকেটে বড় কিছু অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ। যুব এশিয়া কাপেও ২০১৯ সালে প্রথমবার ফাইনালে ওঠার পর ৫ রানে জিতে ভারত স্বপ্নভঙের বেদনায় পুড়িয়েছে বাংলাদেশকে। কলম্বোর সেই কান্না ৫ বছর পর ভারতকে ফিরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের যুবারা। ফাইনালে ভারতীয় যুবাদের ৫৯ রানের বড় ব্যবধানে বিধ্বস্ত করে প্রতিশোধ নেওয়ার পাশাপাশি টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। রবিবার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে আগে ব্যাট করে ৪৯.১ ওভারে মাত্র ১৯৮ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। জবাবে বাংলাদেশী বোলারদের দাপটে ৩৫.২ ওভারে ১৩৯ রানেই থামে ভারতের ইনিংস। ডানহাতি পেসার ইকবাল হোসেন ইমন ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন। গত বছর প্রথম যুব এশিয়া কাপে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পায় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। অন্যদিকে প্রথম যুব এশিয়া কাপের ফাইনালে হারল ভারত। আসরে ৫ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন ইকবাল।
টস হেরে আগে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশের যুবারা। পেস সহায়ক উইকেটে শুরুতে ব্যাটিং করা বেশ দুরূহ হয়ে পড়ে। তাই ফর্মে থাকা টপঅর্ডার এদিন ব্যর্থ হয়েছে। প্রথম থেকেই রান তোলার গতি কম ছিল এবং পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে মাত্র ১ উইকেট হারালেও স্কোরবোর্ডে রান ওঠে মাত্র ৪১। তবে ১৯তম ওভারে দলীয় ৬৬ রানে আরও ২ জন সাজঘরে ফেরেন। জাওয়াদ আবরার ৩৫ বলে ২ চার, ১ ছয়ে ২০, কালাম সিদ্দিকী এলিন ১ ও আজিজুল হাকিম তামিম ২৮ বলে ১ চার, ১ ছয়ে ১৬ রান করে বিদায় নিয়েছেন। তবে তৃতীয় উইকেটে শিহাব জেমস ও রিজন হোসেন ৬২ রানের জুটি গড়ে বিপদ কিছুটা সামাল দেন। এই সময় রানের গতিও কিছুটা বাড়ে। ২৬.৫ ওভারে ১০০ রান পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু শিহাব ৬৭ বলে ৩ চার, ১ ছয়ে ৪০ রানে বিদায় নেওয়ার পর জুটি ভেঙে যায়। এর পর দেবাশীষ দেবাও ১ রানে ফিরে যান। তাই বেশিদূর যেতে পারেনি বাংলাদেশ। উইকেটরক্ষক ব্যাটার ফরিদ হাসানের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে আরও ২৩ রান যোগ করেন রিজন। কিন্তু তিনিও ৬৫ বলে ৩ চারে ৪৭ রানে বিদায় নেন। আর কোনো ব্যাটার সুবিধা করতে পারেননি। ফরিদ ৪৯ বলে ৩ চারে ৩৯ রান করেন। শেষ পর্যন্ত ৫ বল বাকি থাকতেই বাংলাদেশের যুবারা ১৯৮ রানে গুটিয়ে যায়। ভারতের পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন ইউধাজিত গুহ, চেতন শর্মা ও হার্দিক রাজ।
জবাব দিতে নেমে ভারতও চাপে পড়ে যায় ৪৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে। বাংলাদেশের ৩ পেসার মারুফ মৃধা, আল ফাহাদ ও রিজন হোসেন ভয়ঙ্কর বোলিং করেন। আন্দ্রে সিদ্ধার্থ ৩৫ বলে ৩ চারে ২০, আলোচিত বৈভব সুরিয়াবংশী ৯ ও আয়ুশ মহাত্রে ১ রানে বিদায় নেন। এর পরও বড় জুটি হয়নি। কেপি কার্থিকিয়া ৪৩ বলে ২ চারে ২১ রানে সাজঘরে ফেরেন। এরপর একপ্রান্ত ধরে রাখেন ভারতের অধিনায়ক মোহাম্মদ আমান। কিন্তু অন্যপ্রান্তে ধস নামে ইকবালের পেস তোপে। পুরো আসরেই ভীতিকর বোলিং করেছেন এই ১৮ বছর বয়সী তরুণ। ফাইনালে কিছুটা পরে বোলিংয়ে আসেন তিনি। পুরনো বলেই ঝড় তোলেন। তার প্রথম শিকার কার্থিকিয়া, এর পর হরবংশ পাঙ্গালিয়া ৬, নিখিল কুমার ০ রানে তার বলে সাজঘরে ফেরেন। কিরণ চরমালিও ১ রানে বিদায় নেন। মাত্র ৯২ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে পড়ে ভারত। কিন্তু অষ্টম উইকেটে ২৩ রানের জুটি গড়ে আমান ও হার্দিক আবারও আশা জাগিয়ে তোলেন। ওই সময় অধিনায়ক আজিজুল হাকিম তামিম বোলিংয়ে এসে বোল্ড করে দেন ৬৫ বলে ১ চারে ২৬ রান করা আমানকে। এমনকি ২১ বলে ৩ চারে ২৪ রান করা হার্দিকও এলবিডব্লিউ হন আজিজুলের বাঁহাতি স্পিনে। শেষ পর্যন্ত ৩৫.২ ওভারে ১৩৯ রানে গুটিয়ে যায় ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ইনিংস। আজিজুল তামিম ২.২ ওভারে ১ মেডেনে ৮ রান ও ইকবাল ৭ ওভারে ১ মেডেনে ২৪ রানে ৩টি করে উইকেট নেন।
ম্যাচের ভাগ্য ঘুরিয়ে দেওয়া ৩টি উইকেট নেওয়ায় ইকবাল হয়েছেন ফাইনালের ম্যাচসেরা। এছাড়া এই আসরে তিনি ৫ ম্যাচে সর্বাধিক ১৩ উইকেট নিয়েছেন। সব ম্যাচেই উইকেট নিয়েছেন তিনি। দুই ম্যাচে ৩টি, এক ম্যাচে ৪টি ও আরেক ম্যাচে ২টি উইকেট শিকার করে দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলেছেন। তাই টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন মৌলভিবাজারের তরুণ এই পেসার। এই প্রথম যুব এশিয়া কাপে বাংলাদেশের কোনো বোলার আসরের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন। আরব আমিরাতেই গত আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ এবং ওপেনিং ব্যাটার আশিকুর রহমান শিবলি হন সেরা খেলোয়াড়। তিনিই যুব এশিয়া কাপে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে সেই কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। এবার ১১তম আসর হয়েছে। এর আগে ৮ বার ফাইনালে উঠে প্রতিবারই চ্যাম্পিয়ন হওয়া ভারত এই প্রথম রানার্সআপ হলো।