ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

সোহাগকে ‘বিতর্কিত’ স্বীকৃতি দিয়ে এনএসসির কাণ্ড! 

রুমেল খান

প্রকাশিত: ২০:৪২, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

সোহাগকে ‘বিতর্কিত’ স্বীকৃতি দিয়ে এনএসসির কাণ্ড! 

গত আগস্টে দেশের পট-পরিবর্তনের পর সব সেক্টরে স্থবিরতা নেমে আসে। বাদ যায়নি ক্রীড়াঙ্গনও। অন্তবর্তীকালীন উপদেষ্টা সরকার দেশের খেলাধুলাকে রাজনীতি ও দুর্নীতিমুক্ত করতে উদ্যোগ নেয়। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে। তিনি পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি ‘সার্চ কমিটি’ গঠন করেন। 

এই কমিটির কাজ হচ্ছে সব ক্রীড়া ফেডারেশন/এ্যাসোসিয়েশনের সমস্যা চিহ্নিত করা ও সে অনুযায়ী সংস্কার করা। এছাড়া ঢেলে সাজানো হয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বা ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিল (এনএসসি)-কেও। এই সংস্থা একে একে বেশিরভাগ ফেডারেশনের সভাপতিকে অপসারণ করে, যাদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই নানা অভিযোগ ছিল। 

এরপর তিন সপ্তাহ আগে এনএসসি ৯টি ফেডারেশনে এ্যাডহক কমিটি প্রকাশ করে। এই ফেডারেশনগুলোর কমিটি নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এসএম নেওয়াজ সোহাগকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা-আপত্তি। সাবেক কাবাডি খেলোয়াড় ও কাবাডি সংগঠকদের বেশিরভাগই সোহাগকে সাধারণ সম্পাদক পদে মেনে নিতে পারছেন না। এ নিয়ে তারা সরব-সোচ্চার হচ্ছেন প্রায় প্রতিদিনই। কোনদিন এনএসসিতে চিঠি পাঠানো, কোনদিন বিশাল ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন করা, কোনদিন স্লোগান-প্রতিবাদ ... এসব লেগেই আছে। কোন সন্দেহ নেই, ক্রীড়াঙ্গনে এই মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র হচ্ছেন সোহাগ!

এখানে উল্লেখ্য, এই সোহাগকে কিন্তু এ্যাডহক কমিটিতে বহাল করেছে খোদ এনএসসি। কিন্তু আজ বুধবার সেই এনএসসি-ই এমন এক কাণ্ড ঘটিয়েছে, যা নিয়ে যেমন হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি বিস্ময়েরও জন্ম হয়েছে। ফলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কমিটি সমালোচনা ও বিতর্কের মুখে পড়েছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে মজা করে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন, ‘এসব হচ্ছেটা কি? এনএসসি এসব করছেটা কি? তাদের কি মাথা খারাপ হয়ে গেল!’
ভনিতা না করে আসল ঘটনাটা খুলে বলা যাক। 

বুধবার সোহাগের ওপর আনীত অভিযোগসমূহ তদন্তের জন্য এনএসসি একটি চিঠি ইস্যু করে। সেই চিঠির শুরুতে উল্লেখ রয়েছে, ‘বিতর্কিত এ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক নেওয়াজ সোহাগের দুর্নীতির পরিপূর্ণ আইনী তদন্ত করার জন্য জনাব পরিচালক (সাইদুর রশিদ, অর্থ)-কে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হলো।’

এনএসসির পরিচালক (ক্রীড়া) শামসুল আলম স্বাক্ষরিত এমন চিঠি নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে মহা শোরগোল পড়ে গেছে। কেননা এনএসসি-ই তো কাবাডির এ্যাডহক কমিটি গঠন করে তা প্রজ্ঞপন আকারে প্রকাশ করেছে। অথচ নিজেদের ঘোষণা করা কমিটির সাধারণ সম্পাদককেই খোদ এনএসসি ‘বিতর্কিত’ বলে আখ্যা বা স্বীকৃতি দিচ্ছে, যা নিঃসন্দেহে কপালে চোখ উঠে যাবার মতোই ব্যাপার! ফলে এনএসসির এই স্ববিরোধী আচরণ নিয়ে ক্রীড়ামহলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে বলছেন, সোহাগই বা এ বিষয়টাকে কিভাবে নেবেন?

সোহাগকে নিয়ে অব্যাহত প্রতিবাদ-অভিযোগের প্রেক্ষিতেই টনক নড়েছে এনএসসির। যে ফলশ্রুতিতে সোহাগের দুর্নীতির অভিযোগে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক এই সংস্থাটি। ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেছে এনএসসি। এদিকে কাবাডি ফেডারেশনে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক সভাপতি মনোনীত হন। 

বিগত সময়ের রীতি বহাল রেখে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অ্যাডহক কমিটিতে ময়নুল ইসলামকে সভাপতি মনোনীত করেছিল। কাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সচিব এক প্রজ্ঞাপনে নতুন পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলমকে কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। 

৯টি কমিটির মধ্যে একমাত্র কাবাডি ফেডারেশনের কমিটিতেই একটি নাম হাতে লেখা ছিল। সেই যুগ্ম সম্পাদক নিয়ে সমালোচনা হওয়ায় একদিন পরই সেটা পাল্টে দেয় এনএসসি। এখন সাধারণ সম্পাদক নিয়ে তদন্ত করবে সংস্থাটি। এখন দেখার বিষয়, সোহাগকে কমিটিতে রেখে আবার তাকেই ‘বিতর্কিত’ স্বীকৃতি দেয়ার কি ব্যাখ্যা দেয় এনএসসি এবং শেষ পর্যন্ত অভিযুক্ত সোহাগের ভাগ্যে কি ঘটে। 

 

এসআর

×