ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

প্রথমবার হকির বিশ্বকাপে বাংলাদেশ

রুমেল খান

প্রকাশিত: ০০:১০, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রথমবার হকির বিশ্বকাপে বাংলাদেশ

বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত করার পর বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ জাতীয় হকি দলের খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস

হকিতে শুধু ব্যর্থতা আর হতাশার গল্পই শোনা গেছে বছরের পর বছর। যখন কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছিল না, তখনই মঙ্গলবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান থেকে এলো চমক জাগানিয়া ‘মঙ্গলময়’ সমাচার। সেটা হলো ইতিহাস গড়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই যুব বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ যুব হকি দল।    
ম্যাচ শেষের ভেপ্যু বেজে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে টার্ফে স্টিক উঁচিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেন বাংলাদেশের যুবারা। লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে ল্যাপ অব অনার ওমান স্টেডিয়ামের টার্ফ জুড়ে। বড়রা যা করতে পারেনি, তাই করে দেখালে যুবারা। প্রথমবারের মতো যুব হকির বিশ^কাপে নাম লেখালো বাংলাদেশ। পঞ্চম থেকে অষ্টম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে থাইল্যান্ডকে ৭-২ গোলে বিধ্বস্ত করে এই কৃতিত্ব গড়ে বাংলাদেশ। জুনিয়র এশিয়া কাপ থেকে ছয়টি দল যাবে যুব বিশ^কাপে। বাংলাদেশ থাইল্যান্ডকে হারিয়ে আপাতত ষষ্ঠ স্থান অর্জন করেছে। এখন পঞ্চম স্থানের জন্য তাদের লড়তে হবে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচে জয়ী দলের সঙ্গে। 
আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠিতব্য যুব বিশ্বকাপে এশিয়া থেকে সাত দল অংশ নেবে। স্বাগতিক ভারত সরাসরি খেলবে। বাকি ছয় দেশে চলমান জুনিয়র এশিয়া কাপ থেকে খেলার সুযোগ পাচ্ছে।
চীনের সঙ্গে ড্র করার পর বিশ্বকাপের সুবাস পাচ্ছিল বাংলাদেশ। অপেক্ষাকৃত দুর্বল থাইল্যান্ডকে হারাতে পারলেই মিলবে জুনিয়র হকির বিশ্বকাপের টিকিট। স্থান নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশ কোনো ভুল করেনি। ওমানের মাস্কটে ম্যাচে বাংলাদেশের দাপট ছিল দেখার মতো। বিল্ডআপ খেলে একের পর এক গোল করেছেন হাসান, জয়রা। ম্যাচ বড় ব্যবধানে জিততে তাদের সেভাবে কোনো বেগই পেতে হয়নি। সিনিয়র, যুব দল কোনো পর্যায়ে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে হারের রেকর্ড নেই বাংলাদেশের।

জিতলেই বিশ্বকাপ এমন পরিস্থিতিতে বাড়তি চাপ ও অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দূরে রেখে নেমেছিলেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। মাঠে বেশ স্বাভাবিক খেলা খেলেই কাক্সিক্ষত জয় এনেছেন মওদুদুর রহমানের শিষ্যরা। বাংলাদেশের হয়ে মো. জয় ও মো. আবদুল্লাহ দুটি করে, আমিরুল ইসলাম, মো. হাসান ও মো. খান একটি করে গোল করেন। থাইল্যান্ডের হয়ে দুই গোল শোধ দেন চুয়েমকে কৃস্টানা ও ফুমি কৃস্টানা।
বাংলাদেশের এই ঐতিহাসিক জয়ে উচ্ছ্বসিত জাতীয় দলের বর্তমান ও সাবেক খেলোয়াড় এবং কোচরা। সাবেক গ্রেট রফিকুল ইসলাম কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, ‘বাস্তব হলো স্বপ্ন। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। এই দিনটির জন্যই অনেকদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম। এর আগেও আমরা অনেক চেষ্টা করেছিলাম। যা হোক, এই স্মরণীয়-ঐতিহাসিক সাফল্যের জন্য আমরা সবাই দারুণ খুশি। সবার জন্য আনন্দঘন দিন আজ। ধন্যবাদ জানাচ্ছি দলের কোচিং স্টাফ, খেলোয়াড়, ফেডারেশনের সংশ্লিষ্ট সকলকে। এই সাফল্য ধরে রাখতে হবে। এক বছর হাতে সময় আছে। হেলাফেলা করা যাবে না। নিজেদের গোছাতে হবে পরিকল্পিতভাবে। বিশ্বকাপে ভালো ফলের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।’
জাতীয় হকি তারকা-ফরোয়ার্ড রাসেল মাহমুদ জিমির ভাষ্য, ‘আলহামদুলিল্লাহ, তারা যোগ্যতা অর্জন করেছে। দেশের ক্রান্তিলগ্নে-দুঃসময়ে তারা এত বড় একটা সাফল্য বয়ে এনেছে। তাদের অনেক অভিনন্দন। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের এমন একটা সাফল্য দরকার ছিল হকিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য। কিছুদিন আগেও দেশের হকি অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এই রেজাল্টের মধ্য দিয়ে যেন সবকিছু কাটিয়ে উঠতে পারে, এটাই আশাকরি।

আমাদের খেলোয়াড়রা যোগ্যতার সঙ্গেই কোয়ালিফাই করেছে। তারা যেভাবে পারফর্ম করেছে, তাতে খুব ভালো লেগেছে। বিশেষ করে চায়না-মালয়েশিয়ার মতো শক্তিশালী দলের সঙ্গে ড্র করেছে। কোচের সুস্থতা নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়েছিল। কোচকে বিশেষভাবে অভিনন্দন। এখন তো মজার ছলেই বলতে হয়, অসুস্থ কোচই সেরা রেজাল্ট নিয়ে এলেন!’
দেশের স্বনামধন্য কোচ মামুনুর রশীদ বলেন, ‘এটা আমাদের দেশের হকির জন্য একটা বিশাল অ্যাচিভমেন্ট। কেননা এর আগে আমরা জুনিয়র বা সিনিয়র কোন লেভেলেই বিশ্বকাপ খেলিনি। বড়জোর আমরা যুব অলিম্পিক খেলেছি। খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফদের অশেষ ধন্যবাদ ও অভিনন্দন। আসলে এটা আমাদের হকির জন্য একটা টার্নিং পয়েন্ট। আশাকরি ছেলেদের এই সাফল্যকে পুঁজি করে আমরা আরও এগিয়ে যাব এবং সরকারও হকির প্রতি গুরুত্ব দেবে। স্পন্সরের যে সমস্যা, আশাকরি সেটাও মিটবে। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে, এটাই কামনা করি।’

×