কোচ রাজিন সালেহ আলমকে মধ্যমণি করে জাতীয় ক্রিকেট লিগের শিরোপা নিয়ে চ্যাম্পিয়ন সিলেট বিভাগের খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস, মঙ্গলবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুর
দীর্ঘ প্রায় ২৬ বছরের ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) ইতিহাসে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হল সিলেট বিভাগ। ব্যাটিংয়ে তেমন বড় কোনো তারকা ছাড়াই দলটির সাফল্যের রূপকার অধিনায়ক অমিত হাসান। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ২৩ বছর বয়সী এ উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। চতুর্থ রাউন্ডের আগে পর্যন্ত ২ সেঞ্চুরি ও ৫ হাফ সেঞ্চুরিতে করেছেন আসরের সর্বোচ্চ ৭৮৫ রান। গড় ৭৮.৫০। বোলিংয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৪ উইকেট পেসার খালেদ আহমেদের। আর অমিত-খালেদের এক সুতোয় গেঁথে অবিস্মরণীয় এ সাফল্যের নেপথ্যের কারিগর রাজিন সালেহ আলম। ৪১ বছর বয়সী জাতীয় দলের সাবেক এই ক্রিকেটার নিজেও প্রথম শ্রেণিতে মাঠ মাতিয়েছেন জন্মস্থান সিলেটের হয়ে। দুই যুগেরও বেশি সময়ে কত নামি-দামি ক্রিকেটার এখানে খেলেছেন, কিন্তু শিরোপাটাই ছিল অধরা। অবশেষে কোচ রাজিনের হাত ধরে সেই অপেক্ষার অবসান হলো। যারপরনাই খুশি ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত ধৈর্যশীল, ধার্মিক আর বিনয়ী চরিত্রের অধিকারী সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার খুশি, ‘প্রথমবার সিলেট জাতীয় লিগে চ্যাম্পিয়ন, এটা আমার জন্য বড় পাওয়া।’ জনকণ্ঠকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলছিলেন রাজিন।
২০২৩ বিপিএলে একটুর জন্য হয়নি। জমজমাট এ ফ্যাঞ্জাইজি টি২০ টুর্নামেন্টের ফাইনালে হারতে হয়েছিল রাজিনের সিলেটকে,‘শিরোপার স্বাদ সবসময়েই অন্যরকম, সেটা যেখানেই হোক। এটা একটা বড় সফল্য। ক্রিকেটার হিসেবে পারিনি তবে কোচ হিসেবে পারলাম এটা আরও ভালো তৃপ্তি দিচ্ছে আমাকে। তবে সব ক্রেডিট আমি ক্রিকেটারদের দিতে চাই, তারাই মাঠে খেলেছে।’ বলছিলেন তিনি। ঘরের মাঠ সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচে বরিশালকে ৫ উইকেটে হারিয়ে এক রাউন্ড আগেই শিরোপা নিশ্চিত হয়ে যায় সিলেটের। বোলিংয়ে খালেদ ভালো করেছেন। ২০টি করে উইকেট নিয়ে রেজানুর রহমান আর তোফায়েল আহমেদও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তবে আনকোড়া ব্যাটিংকে একাই টেনেছেন অধিনায়ক অমিত। এছাড়া দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৫৬ রান পিনাক ঘোষের। অনেকটা সাদামাটা দল নিয়ে এই সাফল্য রাজিনকে আরও বেশি তৃপ্তি দিচ্ছে, ‘একটা সেরা ক্রিকেটারদের নিয়ে যখন আপনি কোচিং করাবেন তখন সেখানে তৃপ্তিটা থাকবে একরকম। আর যখন আপনি কাগজে-কলমে ছোট দল নিয়ে কোচিং করাবেন তখন সেখানে ভালো করলে থাকে অন্যরকম তৃপ্তি। আমাদের ব্যাটিংটা খুব বেশি যে ভালো ছিল, সেটা বলব না। কাগজ কলমে হিসাব করলে কিন্তু আমরা ৮ দলের মধ্যে ৫-৬ নম্বর দল ছিলাম। এই দল নিয়ে কাজ করে যখন আপনি সফল হবেন একটা দলকে রেজাল্ট করাতে পারবেন তখন তৃপ্তিটা কিন্তু আরও বেশি হবে। এটা মনে হয় আমার সেরা পাওয়া।’
বিসিবি যদি জাতীয় দলে কাজ করার সুযোগ দেয় প্রস্তুত কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে রাজিন বলেন, ‘অবশ্যই রাজি আছি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের হয়ে কাজ করা এটা গর্বের বিষয়। বোর্ডে ফারুক ভাই আছেন। ভালো ভালো সব পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে সালাউদ্দিন ভাই যুক্ত হয়েছেন (মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ)। আমাকে যদি কাজ করার সুযোগ দেয় আমি অবশ্যই আসব। আগেও এসেছিলাম কোচ হয়ে। এ ছাড়া আমি যদি সঠিক পারিশ্রমিক পাই তাহলে কেন আসব না।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজে জাতীয় দলের ব্যাটাররা যখন একের পর এক ইনিংসে ব্যর্থ হচ্ছিলেন, স্থানীয় ধারাভাষ্যকার অমিতের কথা বলছিলেন, বলছিলেন ছেলেটা এনসিএলে প্রায় ৮০০ রান করে ফেলেছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে উঠে আসা শিষ্যর ভবিষ্যৎ নিয়ে রাজিনের অভিমত, ‘অমিত অবশ্যই ভালো খেলোয়াড়। আমি ছোট থেকে তাকে দেখেছি এইচপিতে কাজ করেছি, আমি তখন ব্যাটিং কোচ ছিলাম। লাস্ট দুই তিন বছর পারফর্ম করে আসছে দলের হয়ে। এখন ওকে জাতীয় দলের টেস্টে ঢোকানোর জন্য কথা হচ্ছে কিন্তু আমার ব্যক্তিগত মত আরেকটু সময় নেওয়া হোক। এটা সিলেক্টরদের চিন্তাভাবনা তবে আমার চিন্তা হচ্ছে তাকে আর একটা বছর দেখা হোক, যাতে আরও একটু পাকাপোক্ত রেডি করে নেওয়া যায়। তাহলে ওর চ্যালেঞ্জটা একটু সহজ হবে, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটে সময় নিলে ভালো হয় আমার মতে।’
৬১, ২৮, ৪৩, ২৭, ৩৭*, ২৭, ৫৭, ২১৩, ১০১, ৫৬, ৩৮*Ñ এনসিএলে অমিতের স্কোর! এবারের আসরের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিতে বেশ সাড়া ফেলেছিলেন সিলেট বিভাগের এই অধিনায়ক। ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়ানো এই ব্যাটার চলমান আসরের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। তার নেতৃত্বে এরই মধ্যে প্রথমবারের মতো শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলেছে সিলেট। চারদিক থেকে বলা হচ্ছে ব্যাট হাতে ছন্দে থাকা অমিত ‘জাতীয় দলের খুব কাছাকাছি আছেন’। যদিও দলে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চায় না বিসিবি। ‘আমি এটা নিয়ে আসলে তেমন ভাবছি না। টিম ম্যানেজমেন্ট আছে নির্বাচকরা আছে, তারা যখন মনে করবে যে আমি ঠিক আছি। তখন নিতে পারে, এটা সম্পূর্ণ তাদের ব্যাপার। এটা নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।’ সংবাদ মাধ্যমকে বলছিলেন অমিত। চ্যাম্পিয়নের গর্ব ছুঁয়ে গেছে প্রতিভান এ ক্রিকেটারকে, ‘প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি এটা অন্যরকম একটা অনুভূতি বা ভালোলাগা বলতে পারেন। এনসিএলের ইতিহাসে প্রথমবার সিলেট জিতল, অধিনায়ক আমি, যে কারণে ভালো লাগাটা একটু বেশি। চেষ্টা থাকবে পরের বছরও যাতে এ ধারা অব্যাহত রাখতে পারি। নারায়ণগঞ্জ থেকে যেভাবে সিলেটের ঘরের ছেলে হয়ে গেলেন, এ প্রসঙ্গে অমিত বলেন, ‘২০১৯ সালে যখন আমি এখানে (সিলেট) এসেছিলাম। তখনো যেমন ছিল এখনো তেমনটাই আছে কোনো পরিবর্তন হয়নি। যখন শুরু করেছিলাম তখন দলের সবাই আমাকে ভালোভাবেই গ্রহণ করেছিল। আমার মনেই হয়নি যে আমি আমার বিভাগের বাইরে গিয়ে খেলছি, বা অন্য দলে খেলছি। আমার ঘরের দলই মনে হয়েছে।’ ১৯৯৯-২০০০ সালে শুরু হওয়া জাতীয় ক্রিকেট লিগে এটি ছিল ২৬তম আসর। এর মধ্যে রেকর্ড সাতবার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাকা (পাঁচবার প্রথম শ্রেণি ও দুইবার ওয়ানডে ফরম্যাটে) ও খুলনা বিভাগ (ছয়বার প্রথম শ্রেণি ও একবার ওয়ানডে ফরম্যাটে)!