ম্যাচসেরা ও সিরিজসেরার ট্রফি নিয়ে বাংলাদেশের দুই তারকা শারমিন আক্তার সুপ্তা ও ফারজানা হক
ভারত সফরের পর ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ভরাডুবি, আমিরাতে আফগানিস্তানের কাছে নাস্তানাবুদ বাংলাদেশের ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকেও কোনো ভালো খবর নেইÑ ছেলেদের ক্রিকেটে যখন একের পর এক ব্যর্থতা, তখন স্মরণীয় সাফল্যের আনন্দে ভাসল মেয়েরা। মিরপুরে তিন ওয়ানডের সিরিজে আইরিশদের ৩-০ ব্যবধানে ‘হোয়াইটওয়াশ’ করল নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। সোমবার তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে তাদের জয় ৭ উইকেটে।
৩ উইকেট হারিয়ে ১৮৬ রানের জয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পৌঁছে যায় ৩৭.৩ ওভারেই। ৭২ রানের দারুণ ইনিংসে ম্যাচসেরা শারমিন আক্তার। ৫৭.৩৩ গড়ে ১৭২ রান করে সিরিজসেরা ফারজানা হক। এ নিয়ে তৃতীয়বার কোনো দলকে ‘হোয়াইটওয়াশ’ করল বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের সিরিজে সব ম্যাচ জয়ের নজির এটিই প্রথম।
ভারতের আগামী বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার আশা জিইয়ে রাখতে এই সিরিজে পূর্ণ ৬ পয়েন্ট জরুরি ছিল বাংলাদেশর জন্য। তিন ম্যাচেই দাপুটে জয়ে সেই লক্ষ্য পূরণ করেছে তারা। কার্যত দলীয় এবং ব্যক্তিগত অর্জনে রেকর্ডের মালা গেঁথে আইরিশদের ‘হোয়াইটওয়াশ’ করেছে জ্যোতির দল। এই সাফল্যের বড় কারিগর প্রায় দেড় বছর পর দলে ফেরা শারমিন। প্রায় দেড় বছর পর দলে ফিরে প্রথম ম্যাচে ৯৬ রানে দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। সোমবার ৮৮ বলে ১১ চারে ৭২ রানের ইনিংস খেলে আবার তিনি ম্যাচেরা।
নিজেকে নতুনভাবে মেলে ধরার এই সিরিজে তিন ম্যাচে শারমিনের সংগ্রহ ৭০.৩৩ গড়ে সর্বোচ্চ ২১১ রান। এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো ব্যাটার এক সিরিজে দুইশ’র বেশি রান করলেন। গত বছর ভারতের বিপক্ষে ১৮১ রান করে রেকর্ডটি এতদিন ছিল ফারজানা হকের। অভিজ্ঞ ব্যাটার এই সিরিজেও যথারীতি উজ্জ্বল। তিন ম্যাচেই ফিফটি করা ওপেনারের রান এই সিরিজে মোট ১৭২। এই প্রথম এক সিরিজে তিনটি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেললেন বাংলাদেশের কোনো ব্যাটার।
প্রথম ম্যাচে ১০৪ রানের জুটি গড়া ফারজানা ও শারমিন এদিন যোগ করেন ১৪৩ রান। যে কোনো উইকেটেই ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ এটি। সব মিলিয়ে এই সিরিজে মোট ৬টি পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি পেয়েছে বাংলাদেশ। এটিও রেকর্ড। গত বছর ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচে ৫টি পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি গড়েছিল তারা।
টাইগ্রেসদের সাঁড়াশি বোলিংয়ের মুখে টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া আইরিশ অধিনায়ক গ্যাবি লুইস ছাড়া আর কেউ ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৭৯ বলে ৯ চারে সর্বোচ্চ ৫২ রান আসে এ ওপেনারের ব্যাট থেকে। অ্যামি হান্টার ২৩ ও ওরলা প্রেজেন্টস ২৭ রানে চেষ্টা করেছিলেন। শেষ দিকে আরলেন কেলি ১৮ ও অ্যালান ডানজেল করেন ১৮ রান। বাংলাদেশের হয়ে লেগস্পিনার ফাহিমা খাতুন ৩, অফস্পিনার সুলতানা খাতুন ও বাঁহাতি স্পিনার নাহিদা আক্তার নেন ২টি করে উইকেট।
এরপর শুরুতেই মুর্শিদা খাতুনের উইকেট তুলে নিলেও আইরিশ বোলারদের সেই আনন্দ ম্লান করে দিয়েছেন শারমিন ও ফারজানা। তিন ম্যাচের সিরিজে নিজেদের দ্বিতীয় পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংসে ১১টি চার মারেন শারমিন। সব মিলিয়ে সিরিজে তার বাউন্ডারি ২৯টি। বাংলাদেশের পক্ষে এক সিরিজে সর্বোচ্চ বাউন্ডারির আগের রেকর্ড ছিল ফারজানার, গত বছর ভারতের বিপক্ষে ১৭টি। শারমিনের বিদায়ে ভাঙে ১৪৩ রানের জুটি। চলতি সিরিজের প্রথম ম্যাচেও শতরানের জুটি গড়েছিলেন শারমিন ও ফারজানা মিলে। এই প্রথম এক সিরিজে একাধিক শতরানের জুটি পেল বাংলাদেশ।
ফারজানাও অবশ্য ম্যাচ শেষ করে আসতে পারেননি। ৬ চারে ৬১ রানের ইনিংস খেলে ম্যাগুয়েইরের বলে আউট হয়ে যান তিনি। বাকি পথটুকু পাড়ি দেন জ্যোতি (১৬ বলে ১৮*) ও সোবহানা মোস্তারি (৮ বলে ৭*)।
দুই দল এখন খেলবে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ। সিলেটে ম্যাচ তিনটি হবে আগামী বৃহস্পতি, শনি ও সোমবার।