জ্যামাইকাতে সিরিজ বাঁচানোর লড়াই বাংলাদেশের
তিন ফরম্যাট মিলিয়ে গত চারটি সিরিজে একই পরিস্থিতিতে পড়েছে বাংলাদেশ দল। প্রতিপক্ষের কাছে সিরিজ হারানোর শঙ্কা নিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেছে। কিন্তু প্রতিবারই হয়েছে ব্যর্থ। এবার টানা পঞ্চম সিরিজে একই চ্যালেঞ্জ ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে। আজ রাত ৯টায় জ্যামাইকার কিংস্টনে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে বাংলাদেশ নামছে সিরিজ হার ঠেকানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে। যেই চ্যালেঞ্জে নামার আগে যথারীতি বড় দুশ্চিন্তা ব্যাটিং নিয়ে।
কোনোভাবেই দলের ব্যাটারদের ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না, দলও পরাজয়ের বৃত্তটা ভাঙতে পারছে না। কিংস্টনের স্যাবিনা পার্কে মাত্র ২ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশ দলের। ৬ বছর পর এখানে যে দলটি নামছে তার মধ্যে মাত্র ৪ জনের মাঠটিতে খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে। সে কারণে প্রায় অচেনা পরিবেশ ও উইকেটেই বড় পরীক্ষা দিতে হবে টানা হারে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ দলকে। উভয় দলের এটি বছরের শেষ টেস্ট। স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ম্যাচ জেতার পর সফরকারীদের আবার হারাতে আত্মবিশ^াসী। তবে বছরের শেষ সিরিজটা হারতে চায় না বাংলাদেশ দলও।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দলের পক্ষে ইতিবাচক তেমন কিছুই নেই। একটানা ৫ টেস্টে চরম বাজে হার দেখেছে তারা। নাজুক পরিস্থিতি নিয়ে দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে এসেছে আরও খর্ব শক্তি নিয়ে। একে তো দল টানা হারছে তার মধ্যে আবার বাঁহাতি অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান নেই। তার সঙ্গে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ও নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও নেই। এজন্য হুট করেই মিরাজের কাঁধে চেপেছে নেতৃত্বের ভার। মুমিনুল হক ছাড়া আর কোনো সিনিয়র ক্রিকেটার না থাকায় ম্যাচের বিভিন্ন মুহূর্তে শলা-পরামর্শ করার জন্য তাই যথেষ্ট মানুষ নেই। এরপরও অবশ্য অ্যান্টিগা টেস্টে আগের তুলনায় ভালো করেছে বাংলাদেশ।
সেটিকে অবশ্য ‘মন্দের ভালো’ হিসেবেই আখ্যা দেওয়া যায়। কারণ অ্যান্টিগার মাঠে নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ৯ উইকেটে ২৬৯ রান করেছে গত টেস্টে। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে আবার অতীতের সেই দুঃসহ স্মৃতির ভূতটাই চেপে বসেছে- ৯ উইকেটে ১৩২ রানে থেমেছে। বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম ব্যাটিংয়ের সময় কাঁধে আঘাত পাওয়ায় আর ইনিংসটি শেষ হয়নি। বল হাতেও আহামরি কিছু করতে পারেননি তিনি। তাই এবার তার জায়গায় ফাস্ট বোলার নাহিদ রানা ফিরছেন নিঃসন্দেহে। এ ছাড়া বিপর্যস্ত টপঅর্ডারে দেখা যেতে পারে সাদমান ইসলাম অনিককে।
তিনি হয়তো জাকির হাসানের জায়গাটাই নেবেন। এই সফরে সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তার বিশ^স্ত ছাত্র মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনেরও সুযোগটা মিলে যেতে পারে এখানে। একটি ব্যাপার সহায়ক হতে পারে সফরকারীদের জন্য। তা হচ্ছে এখন বাংলাদেশের প্রধান কোচ ফিল সিমন্স। সর্বশেষ ২০২১ সালে এই মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট খেলেছে। তখন তাদের কোচ ছিলেন সিমন্স।
অ্যান্টিগার মতো জ্যামাইকাতে খুব বেশি সংগ্রাম হয়তো করতে হবে না বাংলাদেশী ব্যাটারদের। কারণ এই মাঠে সাম্প্রতিক সময়ে হওয়া টি২০ ম্যাচগুলোয় প্রচুর রান হয়েছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে ব্যাটিং উপযোগী থাকবে উইকেট। যদিও টেস্ট ক্রিকেটের মেজাজটাই আলাদা। আর সেখানেই বাংলাদেশ দলের ব্যাটারদের মধ্যে অনেক গলদ রয়ে গেছে যা এখন অন্য দুই ফরম্যাটেও ছড়িয়েছে। ভারত সফর থেকে বাংলাদেশী ব্যাটারদের অধপতনের শুরুÑ সেখানে ২ টেস্ট ও ৩ টি২০তে চরম ব্যর্থতা দেখিয়েছেন তারা। এরপর ঘরের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২ টেস্টের সিরিজেও দলগতভাবে সামগ্রিক ব্যাটিং একেবারেই বাজেরকমের ছিল।
মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি ব্যাটাররা আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ ও অ্যান্টিগায় উইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে। অথচ এই ম্যাচগুলোয় বাংলাদেশের বোলাররা ঠিকই ভালো করেছেন। ধীরে ধীরে তারাও হতাশার দিকে যাচ্ছেন ফিল্ডিংয়ে মিস এবং ব্যাটারদের দলীয় স্কোরবোর্ডকে যথেষ্ট স্বাস্থ্যবান করতে না পারার কারণে। এত অসঙ্গতি কাটিয়ে ওঠা খুবই চ্যালেঞ্জিং হলেও জ্যামাইকাতে একটি পরিসংখ্যান বাংলাদেশ দলকে কিছুটা অনুপ্রাণিত করতে পারে। সেটি হচ্ছে গত ১০ বছরে এখানে ৮ টেস্ট খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ মাত্র দুটি জিততে পেরেছে, হেরেছে ৫টি এবং একটি ড্র করেছে। তাই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করতেই পারে এবং সিরিজ হার এড়াতে জয়ের বিকল্পও নেই মিরাজদের। সেই জয় পেতে এবার মরিয়া হয়েই নামবে বাংলাদেশ। তবে কতটা মাঠে সেটি মিরাজরা করতে পারবেন সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
গত ৩ বছর অবশ্য স্যাবিনা পার্কে কোনো টেস্ট হয়নি। এই ফরম্যাটে মাঠটিতে সর্বশেষ পরিস্থিতি কেমন হবে তা বুঝে উঠতে মাত্র ২ দিন সময় পেয়েছে বাংলাদেশ দল। অনুশীলন করেছে। সাধারণত এখানে পেসার এবং স্পিনার উভয়ে ভালো কিছু আদায় করে নিতে পারেন। তবে সেজন্য বোলিংয়ে ভালো মনোযোগ এবং একটানা ধৈর্য রাখার বিষয়টি যেমন আছে, তেমনি সঠিক লাইন-লেংন্থ বোঝার প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশের বোলাররা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেভাবে একটানা ভালো করছেন তাতে করে সেই আস্থাটা তাদের ওপর দল করছে। নাহিদ ফিরছেন, সঙ্গে তাসকিন আহমেদ থাকবেন যিনি গত ম্যাচেই ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ উইকেট শিকার করেছেন। আর হাসান মাহমুদ দু’দিকেই সুইং করাতে পারেন বিধায় তার ওপরও অগাধ বিশ^াস থাকবে দলের। সমস্যা হচ্ছে অভিজ্ঞতার।
বর্তমান দলের মিরাজ, লিটন কুমার দাস, মুমিনুল হক ও তাইজুল ইসলাম ব্যতীত আর কেউ এই মাঠে খেলেননি। ৬ বছর পর জ্যামাইকাতে আবার পা রেখেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ২০১৮ সালের সফরে এখানে টেস্ট খেলে বাংলাদেশ, তখনই খেলেছেন এই ৪ জন। আগে এই ভেন্যুতে দুই টেস্ট খেলেই ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০০৪ সালে হেরেছে ইনিংস ও ৯৯ রানের বড় ব্যবধানে।
এর ১৪ বছর পর আরেক টেস্ট খেলতে নেমে হেরেছে ১৬৬ রানে। দুইবারই চরম ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এবার মিরাজরা কি করতে পারবেন এখানে? ৫ দিনই বৃষ্টি বাগড়া দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই বৈরিতা যদি বাঁধা দেয় সেটি উইকেট ও পরিবেশের স্বাভাবিক আচরণও পাল্টে দেবে। সেই চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে বাংলাদেশকে তাদের বছরের এই শেষ টেস্টে।