বুধবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আইরিশদের বিরুদ্ধে এভাবেই বারবার উল্লাসে মেতে ওঠেন বাংলাদেশের মেয়েরা
ঘরের মাঠ আর প্রতিপক্ষ দুর্বলতর বলেই হয়তো জ¦লে উঠল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। দেশে ও দেশের বাইরে সর্বশেষ ৫ ওয়ানডেতে বড় হার দেখেছে তারা। এবার সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ১৫৪ রানের রেকর্ড গড়া জয়ে। বুধবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দলের বিপক্ষে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। ব্যাটাররাই এই জয়ের ভিত গড়ে দেন। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে দলীয় সর্বোচ্চ ২৫২ রান করে বাংলাদেশ।
১৬ মাস পর খেলতে নেমে ওয়ানডাউন ব্যাটার শারমিন আক্তার সুপ্তা ৮৯ বলে ৯৬ রানের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলেই এই রেকর্ড সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশী স্পিনারদের দাপটে ২৮.৫ ওভারেই মাত্র ৯৮ রানে গুটিয়ে যায় আইরিশ মেয়েদের ইনিংস। অফস্পিনার সুলতানা খাতুন ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করে ৩টি ও নাহিদা আক্তার ৩টি উইকেট নেন। নিজেদের সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয়ে ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ।
টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশের মেয়েরা। শুরুর দিকে আর্দ্র উইকেটে ব্যাটিং করা সহজ হয়নি। তাই ধীরগতিতে ব্যাট চালিয়েছেন ফারজানা হক পিঙ্কি ও মুরশিদা খাতুন। প্রথম ১৫ ওভারে মাত্র ৪৭ রান আসে। ৫৯ রানের এই উদ্বোধনী জুটি ভেঙেছে ৬১ বলে ৫ চারে ৩৮ রানে মুরশিদা বিদায় নেওয়ার মাধ্যমে। এরপর শারমিন ক্রিজে এসে দ্রুতগতিতে রান তুলতে শুরু করেন। ফারজানাও স্ট্রাইক রোটেট করতে শুরু করেন। ৯৮ বলে তিনি ক্যারিয়ারের ১১তম ফিফটি হাঁকান। আর শারমিন দ্রুতগতিতে ৪১ বলেই ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি পেয়েছেন। এরপর ১১০ বলে ৪ চারে ৬১ রানে বিদায় নেন ফারজানা।
ফলে ১০৪ রানের জুটি ভাঙে। এ নিয়ে ওয়ানডেতে ৫ বার শতরানের কোনো জুটি গড়তে পেরেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। তবে দ্বিতীয় উইকেটে এটি দ্বিতীয় সেরা জুটি। ২০২১ সালে বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে ১১৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন ফারজানা ও মুরশিদা। ফারজানা সাজঘরে ফিরলেও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতে থাকেন শারমিন। কিন্তু সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৪ রান দূরে থাকতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। মাত্র ৮৯ বলে ১৪ চারে ৯৬ রান করেন শারমিন। তখনো ১ ওভার বাকি ছিল। তাই সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপ তার সঙ্গী হয়েছে। তবে ওয়ানডেতে এটি বাংলাদেশ নারী দলের পক্ষে তৃতীয় সেরা ব্যক্তিগত ইনিংস। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান ফারজানা দুটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। এবার শারমিন কাছাকাছি গিয়েও পারলেন না। কম স্ট্রাইকরেটের জন্যই ওয়ানডে থেকে বাদ পড়েছিলেন। ফিরতি ম্যাচে ১০৭.৮৬ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করলেন।
দেশের পক্ষে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংসে এটি দ্বিতীয় সেরা স্ট্রাইকরেট। ইনিংসে সর্বাধিক ১৪ বাউন্ডারি হাঁকানোর রেকর্ড গড়েছেন। গত বছর ইস্ট লন্ডনে মুরশিদা অপরাজিত ৯১ রানের ইনিংস খেলেন ১২ চারে। তিনি তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির সঙ্গে ৬১ রানের জুটি গড়েন। জ্যোতি ২৮ বলে ৩ চারে ২৮ রান করেন। রেকর্ড দলীয় সংগ্রহ পেয়ে যায় বাংলাদেশ নারী দল। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ২৫২ রানে করে বাংলাদেশ। অফস্পিনার ফ্রেয়া সারজেন্ট ২ উইকেট নেন। এটি ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
গত বছর ইস্ট লন্ডনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩ উইকেটে ২৫০ রান করে বাংলাদেশের মেয়েরা। সেটিই এতদিন ছিল সর্বোচ্চ। জবাব দিতে নেমে আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল ২৮.৫ ওভারে গুটিয়ে যায় ৯৮ রানে। ওপেনার সারা ফোর্বস ৫১ বলে ৩ চারে সর্বোচ্চ ২৫ রান করেন। এছাড়া লরা ডেলানি ৩৮ বলে ২ চারে ২২ রান করেন। অফস্পিনার সুলতানা খাতুন ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করে ৮.৫ ওভারে ২৩ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। বাঁহাতি স্পিনার নাহিদা ৩টি ও পেসার মারুফা আক্তার ২টি উইকেট নেন। এটি বাংলাদেশের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দলের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন সংগ্রহ। এর আগে বেলফাস্টে ৯৬ রানে অলআউট হয় তারা। গত বছর ইস্ট লন্ডনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১১৯ রানের জয়ই এতদিন বড় জয় ছিল বাংলাদেশের মেয়েদের। এবার গড়েছে সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ড।