ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

এক নক্ষত্রের বিদায়

আয়ান আব্রাজ

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

এক নক্ষত্রের বিদায়

আর টেনিসের রঙিন কোর্টে দেখা যাবে না স্প্যানিশ কিংবদন্তি রাফায়েল নাদালকে

বিশ্ব টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি। র‌্যাকেট হাতে অসাধারণ সব কীর্তি গড়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। তবে জীবনে সবকিছুরই শুরু এবং শেষ আছে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন রাফায়েল নাদাল। গত সপ্তাহে ডেভিস কাপে শেষবারের মতো কোর্টে নেমেছিলেন ২২ গ্র্যান্ডস্লামের মালিক। স্পেনের হয়ে সেই টুর্নামেন্টের মাধ্যমেই গৌরবময় এক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টানলেন ৩৮ বছর বয়সী এই স্প্যানিয়ার্ড। 
তবে বিদায় মঞ্চটাকে রাঙাতে পারেননি রাফায়েল নাদাল। ডেভিস কাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই যে ছিটকে যায় তার দল। এর মাধ্যমে অবশ্য একটা বৃত্তও পূরণ হয়ে গেছে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক এক নম্বর তারকার। নিজের ডেভিস কাপের প্রথম ম্যাচটি হেরেছিলেন রাফায়েল নাদাল। ডেভিস কাপে জীবনের শেষ ম্যাচেও একই পরিণতি। বৃত্তপূরণ ছাড়া তাহলে আর কী বলা যায় তাতে? এবারের ডেভিস কাপে স্পেনের হয়ে প্রথম এককের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বর্টিচ ভ্যান ডি জান্ডশুল্পের কাছে হারে নাদাল। এককের অন্য ম্যাচে অবশ্য জয় পান তার সতীর্থ কার্লোস আলকারাজ।

ফলে ভক্ত-সমর্থকদের নজর ছিল ডাবলসে। কিন্তু সেই ডাবলসে আলকারাজ ও মারসেন গ্রানোয়ার্স নেদারল্যান্ডসের জুটির কাছে হেরে যান। তাতেই কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায় স্পেনের। মালাগায় আয়োজিত একক ম্যাচে ৬-৪, ৬-৪ গেমে হার মানেন নাদাল। ৩৯ ছুঁই ছুঁই বয়সী নাদালের খেলায় বয়সের ছাপটা অবশ্য একেবারেই সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। যে কারণে ম্যাচে আর ফিরতেই পারেননি। দ্বৈতে ৭-৬ এবং ৭-৬ গেমে হার মানেন আলকারাজ ও মারসেল। 
২০০১ সালে ১৫ বছর বয়সে প্রতিযোগিতামূলক টেনিসে পা রেখেছিলেন রাফায়েল নাদাল। এরপর আর পেছনের দিকে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। টেনিস কোর্টে দীর্ঘ ২৩ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি। এ সময়ে খেলেছেন ১ হাজর ৩০৭টি ম্যাচ। যার মধ্যে জিতেছেন ১ হাজার ৮০টি ম্যাচে। টেনিস কোর্টে কাটিয়েছেন ২ হাজার ৫৪৩ ঘণ্টা। অর্জনেও কোনো কমতি নেই তার। টেনিস কোর্টের দুই যুগে কী জেতেননি নাদাল? ইতিহাসের দ্বিতীয় সফলতম পুরুষ খেলোয়াড় হিসেবে অবসর নেন এই স্প্যানিয়ার্ড।

গ্র্যান্ডস্লামই জিতেছেন ২২টি। টেনিস ইতিহাসে ছেলেদের এককে সর্বোচ্চ ২৪ গ্র্যান্ডস্লাম জিতেছেন নোভাক জোকোভিচ। এরপরই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গ্র্যান্ডস্লাম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন নাদাল। এক ফ্রেঞ্চ ওপেনই রেকর্ড সর্বোচ্চ ১৪ বার ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছেন এই স্প্যানিয়ার্ড। যে কীর্তি নেই আর কোনে খেলোয়াড়ের। রাফায়েল নাদাল ছাড়া আর কোনো খেলোয়াড়ই নির্দিষ্ট কোনো এক আসরে এত বেশিবার জেতেননি। যে কারণেই তার নামের পাশে যোগ হয়ে যায় ‘ক্লে কোর্টের রাজা’র ট্যাগ। লাল দুর্গের এই টুর্নামেন্টে ১১৬ ম্যাচ খেলে ১১২টিতেই জয়ের স্বাদ পেয়েছেন নাদাল।

এছাড়া চারবার জিতেছেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। সমান দুইবার করে উঁচিয়ে ধরেন ইউএস ওপেন ও উইম্বডনের ট্রফি। এর বাইরেও সাফল্য আছে রাফার। ক্রীড়ার মহাযজ্ঞ অলিম্পিকে একক ও দ্বৈতে স্বর্ণ জয়ের গৌরবও অর্জন করেন তিনি। সেইসঙ্গে স্পেনকে চারবার ডেভিস কাপ শিরোপা জেতাতেও সাহায্য করেন রাফায়েল নাদাল। যার সর্বশেষটি ২০১৯ সালে। অবসরের আগে ক্যারিয়ারে মোট জেতা নাদালের শিরোপার সংখ্যা ৯২টি। উন্মুক্তযুগে যা সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ের তালিকায় পঞ্চম।
বিদায়বেলায় আবেগাপ্লুত নাদাল। শেষ মুহূর্তে ভক্তদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘গত ২০ বছরের পেশাদার ক্যারিয়ারে আপনারা আমাকে ভালো সময়ে যেমন উৎসাহ দিয়েছেন, তেমনি খারাপ সময় কাটিয়ে উঠতেও পাশে ছিলেন। সত্য বলতে কি, আপনারা এ সময়টি দেখতে চাননি। আমি কিন্তু টেনিস খেলতে ক্লান্ত নই, তবে আমার শরীর আর খেলতে সায় দিচ্ছে না এবং এটি আপনাদের  মেনে নিতে হবে। আমি খুবই ভাগ্যবান যে শৈশবের শখটাই পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ সময় আমি আমার ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পেরেছি।’

স্প্যানিশ টেনিস তারকা আরও বলেন, ‘আমি কেবল একজন ভালো মানুষ। ও স্বপ্নের পথে ছুটে চলা এক শিশু হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকতে চাই। আমি চাই মানুষ আমাকে এভাবে মনে রাখুক, যে কি না তার স্বপ্নকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। যে জীবনটা আমি যাপন করেছি, তাতে বলতেই হয়। আমি খুব ভাগ্যবান। আর টেনিসের কারণেই অবিস্মরণীয় সব স্মৃতি জমা হয়েছে ভা-ারে।’ 
নাদালের বিদায়ী ম্যাচে গ্যালারিতে দর্শক ছিল ১৫ হাজারেরও বেশি। যাদের মধ্যে ছিলেন তার স্ত্রী মেরি, সন্তান রাফায়েল জুনিয়র, বাবা-মা আনা মারিয়া ও সেবাস্তিয়ান এবং বোন মারিবেল। স্পেনকে অনেক কিছুই দিয়েছেন নাদাল।

×