বোলাররা কিছু না কিছু করছেন। তবে ব্যাটাররা পারছেন না একেবারেই। ক্রিকেটাররা প্রতিনিয়ত উন্নতির প্রত্যয় জানালেও মাঠে নেমে ব্যাট হাতে টিকেতেই পারছেন না উইকেটে। সেই চিত্রটা এখন ধারাবাহিক। সেই ধারাবাহিকতার রেশ ধরে এবার অ্যান্টিগা টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে সিরিজের প্রথম টেস্টে ২০১ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসে ৯ উইকেটে মাত্র ২৬৯ রান করা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে আরও বিপর্যস্ত হয়েছে। অথচ বোলাররা দারুণ সুযোগ তৈরি করে দেন ব্যাটারদের জন্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস ৯ উইকেটে ৪৫০ রানে ঘোষণা করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৫২ রানে গুটিয়ে যায়। জেতার জন্য ৩৩৪ রানের টার্গেট পায় বাংলাদেশ।
সেই লক্ষ্য ছুঁতে লম্বা সময় পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি ব্যাটাররা। ম্যাচের পঞ্চম দিন ভোরে ৯ উইকেটে ১৩২ রান তোলার পর শরিফুল ইসলাম কাঁধে আঘাত পেয়ে আর ব্যাট করতে পারেননি। তাই জয় ছিনিয়ে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে।
বারবার একই আলোচনা। ব্যাটিং ব্যর্থতায় একের পর এক পরাজয়ের গ্লানি প্রলম্বিত হয়েই চলেছে। গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে রাওয়ালপিন্ডির ব্যাটিং স্বর্গটাই শুধু ব্যতিক্রম। সেখানে অবিস্মরণীয় ব্যাটিং প্রদর্শণী দেখিয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। এরপর বাংলাদেশ দল খেলেছে চেন্নাই, কানপুরে টেস্ট, টি২০ খেলেছে গোয়ালিয়র, দিল্লি ও হায়দরাবাদে, টেস্ট খেলেছে মিরপুর ও চট্টগ্রামে এবং ওয়ানডে খেলেছে শারজায়। সবখানেই ভরাডুবি হয়েছে চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায়। এবার সেই একই ব্যর্থতা অ্যান্টিগার স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে আরেকটি ভরাডুবি ডেকে এনেছে।
অ্যান্টিগায় বাংলাদেশ দলের অতীত স্মৃতি একেবারেই ভালো নয়। এবার সেখানে নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় রান করেছে বাংলাদেশ। ৯ উইকেটে ২৬৯ রান করার পর আর ব্যাটিংয়ে না নেমে ইনিংস ঘোষণা করে। বোলাররা ধারাবাহিকতা রাখতে না পারায় অবশ্য উইন্ডিজ ৯ উইকটে ৪৫০ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশী বোলাররা ছিলেন দুর্দান্ত।
তাসকিন আহমেদের ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে মাত্র ১৫২ রানেই গুটিয়ে যায় উইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংস। এই ভেন্যুতে এটি তাদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ। ২০১৯ সালে ভারতের বিপক্ষে ১০০ রানই ছিল অ্যান্টিগায় তাদের সবচেয়ে কম সংগ্রহ। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি তাদের ৫ম সর্বনিম্ন, তবে ঘরের মাটিতে ২য় সর্বনিম্ন। ২০১৮ সালে কিংস্টনে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১২৯ রানই ছিল তাদের সবচেয়ে কম। এবার তাসকিনই তাদের এমন সমস্যায় ফেলেছেন।
দেশের বাইরে বাংলাদেশী কোনো পেসার হিসেবে দ্বিতীয় সেরা বোলিং করে তাসকিন ৬৪ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন। ২০২২ সালে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে এবাদত হোসেন ৪৬ রানে ৬ উইকেট নিয়ে এক্ষেত্রে সেরা। সার্বিকভাবে বাংলাদেশের পক্ষে দেশের বাইরে টেস্টে এটি তৃতীয় সেরা বোলিং। সাকিব আল হাসান ২০১৮ সালে কিংস্টনে উইন্ডিজের বিপক্ষেই ৩৩ রানে ৬ উইকেট নিয়ে শীর্ষে।
তাসকিনের এমন সাফল্য ব্যাটারদের উজ্জীবিত করতে পারেনি। দুই ওপেনার জাকির হাসান (০) ও মাহমুদুল হাসান জয় (৬) যথারীতি ব্যর্থ। মুমিনুল হক ১১, শাহাদাত হোসেন দিপু ৪ রানে আউট হওয়ার পর লিটন কুমার দাস ও মেহেদি হাসান মিরাজ ভালোই খেলছিলেন। কিন্তু লিটন ২২ ও মিরাজ ৪৫ রান করে বিদায় নেন।
চতুর্থ দিনশেষে ৭ উইকেটে ১০৯ রান তুলে নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে আসলে লড়াইয়ের আর কিছুই ছিল না। পঞ্চম দিন জাকের আলী কিছুটা লড়াই করে ৫৮ বলে ৫ চারে ৩১ রান করেন। তিনিও আউট হলে ১৩২ রানেই থামে বাংলাদেশ। ৯ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। কিন্তু শরিফুল কাঁধে আঘাত পান জেইডেন সিলসের পেসে। তারপর আর ব্যাটিং করতে পারেননি। তাই হার মানতে হয় বাংলাদেশকে। কেমার রোচ ও জেইডেন সিলস ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন।
মামুন/তাবিব