.
একে তো নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবার ঘরের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ, তার ওপর নেই অধিনায়ক রোহিত শর্মা। অস্ট্রেলিয়ায় আলোচিত বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির পাঁচ টেস্টের দ্বৈরথের শুরুতেই ১৫০ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর কে ভেবেছিল, পার্থে সাড়ে তিন দিনেই রেকর্ড গড়া জয় পাবে সফরকারীরা। এটা সম্ভব হয়েছে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক জাসপ্রিত বুমরাহর দুর্দান্ত বোলিং আর ব্যাটিংয়ে জশ্বসী জয়সওয়াল (১৬১), লোকেশ রাহুল (৭৭) ও বিরাট কোহলির (অপরাজিত ১০০) অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের সৌজন্যে। ৬ উইকেটে ৪৮৭ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণনা করে ভারত। ৫৩৪ রানের অসম্ভব লক্ষ্য তাড়ায় সোমবার চতুর্থ দিনে ২৩৮ রানে অলআউট প্যাট কামিন্সের দল।
প্রথম ইনিংসে তারা গুটিয়ে গিয়েছিল মাত্র ১০৪ রানে। ২৯৫ রানের এই জয় (রানের হিসাবে) অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের সবচেয়ে বড় জয়। ৫/৩০ ও ৩/৪২- ৮ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা বুমরাহ।
অস্ট্রেলিয়ায় এর আগে ভারতের সবচেয়ে বড় জয় ছিল ১৯৭৮ সালে। ৪৬ বছর আগে মেলবোর্নে ২২২ রানে জিতেছিল তারা। এশিয়ার বাইরেও মোড়ল দেশটির এটি দ্বিতীয় সবচেয়ে বেশি রানের জয়; ২০১৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ৩১৮ রানের জয় তাদের রেকর্ড। আর সর্বোপরি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও রানের হিসেবে এটি ভারতের দ্বিতীয় বড় জয়; ২০০৮ সালে মোহালিতে ৩২০ রানের জয় এখনো সেরা। পার্থে টেস্ট জয়ী দ্বিতীয় এশিয়ান অধিনায়ক এখন বুমরাহ। ২০০৮ সালে ভারতের গ্রেট লেগ স্পিনার আনিল কুম্বলের নেতৃত্বে এখানে জিতেছিল ভারত। এবারের জয়ে মূল কৃতিত্বটা দিতে হবে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক জাসপ্রিত বুমরাহকেই। অনেক অদল-বদলে চেহারা বদলে যাওয়া দলকে চমৎকার নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। সঙ্গে প্রথম দিন থেকে তার দুর্দান্ত বোলিং গড়ে দিয়েছে সবচেয়ে বড় ব্যবধান। বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় অস্ট্রেলিয়ার হয়ে যা একটু লড়াই করতে পেরেছেন ট্রাভিস হেড। ৮ চারে ১০১ বলে ৮৯ রান করেছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। পুরো ম্যাচে এটিই স্বাগতিকদের একমাত্র ফিফটি। ২ ছক্কা ও ৩ চারে ৪৭ রান আসে মিচেল মার্শের ব্যাট থেকে। অপ্টাস স্টেডিয়ামে সোমবার ৩ উইকেটে ১২ রান নিয়ে খেলা শুরু করা অস্ট্রেলিয়া দিনের দ্বিতীয় ওভারেই হারায় উসমান খাজাকে। সিরাজের বলে ঋষভ পন্থের গ্লাভসে ধরা পড়েন অভিজ্ঞ এ ওপেনার। এরপর হেড ও স্মিথ মিলে কাটিয়ে দেন প্রথম ঘণ্টা। এই জুটিতে লড়াইয়ের আভাস দেয় অস্ট্রেলিয়া। জুটির রান ৫০ স্পর্শ করে ৯২ বলে। এর কিছুক্ষণ পরই স্মিথকে কট বিহাইন্ড করে ৬২ রানের যুগলবন্দি ভাঙেন সিরাজ। ৬০ বলে ১৭ রান করে ফেরেন অস্ট্রেলিয়ান তারকা। ৬৩ বলে ফিফটি করা হেড আর মার্শ মিলে প্রথম সেশন কাটিয়ে দেন। লাঞ্চের পর প্রথমবার আক্রমণে এসেই ৮২ রানের জুটি ভেঙে দেন বুমরাহ। হেডকে চমৎকার ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ড করেন অভিজ্ঞ পেসার।
অনেকটা সময় এক প্রান্ত আগলে রাখা অ্যালেক্স ক্যারিকে দারুণ এক স্লোয়ারে বোল্ড করে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের ইতি টেনে দেন হার্শিত। ২ চারে ৩৬ রান করেন অস্ট্রেলিয়ান কিপার-ব্যাটসম্যান। চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন নাথান ম্যাকসুইনি, উসমান খাজা, মার্নাস লাবুশেন ও স্টিভ স্মিথরা। দুই ইনিংস মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়া টপ অর্ডার থেকে এসেছে মাত্র ২৯ রান। এর আগে সর্বশেষ ১৮৮৮ সালে ম্যানচেস্টারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অজিদের প্রথম চার ব্যাটার মিলে দুই ইনিংসে ৩৮ রান করেন। একই বছর টেস্টে লর্ডস এবং সিডনিতে সমান ৪০ রান করে তোলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রথম চার ব্যাটার। অ্যাডিলেডে দুই দলের দিবা-রাত্রির টেস্ট শুরু আগামী ৬ ডিসেম্বর।
সংক্ষিপ্ত স্কোর : ভারত প্রথম ইনিংস ১৫০/১০ (৪৯.৪ ওভার; রাহুল ২৬, কোহলি ৫, পন্থ ৩৭, জুরেল ১১, নিতিশ ৪১; স্টার্ক ২/১৪, হ্যাজেলউড ৪/২৯, কামিন্স ২/৬৭,মার্শ ২/১২) ও দ্বিতীয় ইনিংস ৪৮৭/৬ ডিক্লে (১৩৪.৩ ওভার; জয়সওয়াল ১৬১, রাহুল ৭৭, কোহলি ১০০*, সুন্দর ২৯, নিতিশ ৩৮*; হ্যাজেলউড ১/২৮, লেয়ন ২/৯৬)।
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস ১০৪/১০ (৫১.২ ওভার; ম্যাকসুইনি ১০, লাবুশেন ২, স্মিথ ০, হেড ১১, ক্যারি ২১, স্টার্ক ২৬; বুমরাহ ৫/৩০, সিরাজ ২/২০, হার্শিত ৩/৪৮) ও দ্বিতীয় ইনিংস ২৩৮/১০ (৫৮.৪ ওভার; স্মিথ ১৭, হেড ৮৯, মার্শ ৪৭, ক্যারি ৩৬; বুমরাহ ৩/৪২, সিরাজ ৩/৫১, সুন্দর ২/৪৮)
ফল ॥ ভারত ২৯৫ রানে জয়ী।
ম্যাচসের ॥ বুমরাহ (ভারত)।
সিরিজ ॥ পাঁচ টেস্টের সিরিজ ভারত ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।