অ্যান্টিগায় উইকেট শিকারের উচ্ছ্বাস বাংলাদেশের পেসার তাসকিন আহমেদের
শুরুটা বেশ ভালোই হয়েছে। নতুন বলে বাংলাদেশী পেসাররা অ্যান্টিগার স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে চাপে রাখেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটারদের। কিন্তু সেই চাপ কাটিয়ে উঠতে সময় লাগেনি এই ভেন্যুতে অভ্যস্ত স্বাগতিকদের। মিকাইল লুই ও আলিক অ্যাথানেজের ব্যাটিংয়ে কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে প্রথম দিন তারা শেষ করেছে ৫ উইকেটে ২৫০ রান নিয়ে। তাসকিন আহমেদ শুরুতে ভালো বোলিং করলেও সেটি ধরে রাখতে পারেননি। বাকিদেরও অবস্থা একই।
তাই দিনের শুরুতে কোণঠাসা ক্যারিবীয় ব্যাটাররা সতর্ক থেকে নিজেদের অবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছে। তাই বড় পরীক্ষার মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশ। বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে গেছে স্বাগতিক দল। এখনো ৫ উইকেট হাতে থাকায় ৪০০ পেরিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য তাদের। সেই ঘোষণা দিয়েছেন ক্যারিয়ারসেরা ৯৭ রান করা মিকাইল। অ্যাথানেজও ৯০ রান করেছেন। এতেই আরও বেশি চাপে পড়েছে বাংলাদেশের বোলাররা।
টস জেতার পর অ্যান্টিগায় আগে বোলিং করার সিদ্ধান্তটা যথার্থই ছিল মেহেদি হাসান মিরাজের। ক্যারিয়ারের ৫০তম টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে যাত্রার শুরুটা ভালোই হয়েছে। প্রথম থেকে শরিফুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদ বেশ ভালো লাইন-লেংন্থেই বোলিং করেছেন। তবে তাসকিন বোলিংয়ে আসার আগে কোনো সাফল্য আসেনি। ১৪তম ওভারে অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট সাজঘরে ফিরে যান তার পেসে এলবিডব্লিউ হয়ে। উইকেটে থিতু হওয়ার চেষ্টায় এই দীর্ঘ সময় তিনি ক্রিজে থেকে ৩৮ বলে মাত্র ৪ রান করেছেন তিনি। তাসকিন তার পরবর্তী ওভারে এসে আবার কিসি কার্টিকে (০) শিকার করেন। সতর্ক থেকেও মাত্র ২৫ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বেশ বিপাকেই পড়ে উইন্ডিজ দল।
কিন্তু মিকাইল ও কাভেম হজ তৃতীয় উইকেটে ৫৯ রানের জুটি গড়ে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেন। এতেই যেন ধৈর্যহারা হয়েছে বাংলাদেশের বোলিং লাইন। নিজেদের দারুণ লাইন-লেংন্থ আর ধরে রাখতে পারেননি তারা। এ ছাড়া কিছু সুযোগও মিস হয়েছে, ফিল্ডিংয়েও সমস্যা দেখা দিয়েছে। লাঞ্চ বিরতি পর্যন্ত ২৩ ওভারে ২ উইকেটে মাত্র ৫০ রান করে চাপে থাকা ক্যারিবীয়রা সেটি কাটিয়ে উঠেছে পড়ে এই তৃতীয় উইকেট জুটির দৃঢ়তার কারণেই।
অ্যান্টিগায় সাধারণত পেস সহায়ক উইকেট থাকে। প্রথম দিন সকালে সেই সুবিধাটা কাজে লাগিয়ে চাপে রাখতে পারলেও প্রত্যাশিত সাফল্য আনতে পারেননি বাংলাদেশের পেসাররা। আর সেই সুযোগে নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে ক্যারিবীয় ব্যাটাররা। দিন গড়াতে থাকলে উইকেটও সহজ হয়ে এসেছে, বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যেও ধারালো ভাব কমে গেছে। বিশেষ করে মিকাইল সতর্ক ব্যাটিং করলেও অ্যাথানেজ বেশ সাবলীল ছিলেন। বেশ দ্রুতবেগেই রান তুলেছেন তিনি। ফলে চাপ বেড়েছে সফরকারী বোলারদের ওপরে। কাভেম ৬৩ বলে ২ চারে ২৫ রানে বিদায় নিলেও অ্যাথানেজ পরবর্তীতে উইন্ডিজকে ভালো অবস্থানে নিয়ে গেছেন। তাই চা বিরতির পর ১৩৪ রান হয়েছে ৩০ ওভার থেকে! এখান থেকেই স্পষ্ট হয়েছে কত স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাট চালিয়েছেন উইন্ডিজ ব্যাটাররা।
শরিফুল ও মিরাজ ব্যতীত বাকিরা তাদের বোলিংয়ে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেননি। তবে দিনশেষে সফলতম তাসকিনই ১৫ ওভারে ২ মেডেনে ৪৬ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করে। একটি করে উইকেট নিয়েছেন তাইজুল ও মিরাজ। দ্বিতীয় দিনে তাই বড় পরীক্ষাই দিতে হবে বাংলাদেশী বোলারদের। ৮৪ রানে ৩ উইকেট হারানো ক্যারিবীয়রা ৫ উইকেটে দিন শেষ করেছে ২৫০ রানে। দিনশেষে ক্যারিয়ারসেরা ৯৭ রান করা মিকাইল বলেছেন, ‘শুরুতে পিচে আর্দ্রতা ছিল, কিছুটা ধীর গতিরও ছিল।
পরে আমার ও আলিকের জুটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সে তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে আমাকে পরামর্শ দিয়েছে। আমার মনে হয়, আমরাই ভালো অবস্থানে আছি। জাস্টিন গ্রিভস আর জশুয়া ডা সিলভা আছে। আশা করি ওরা ভালো একটা জুটি গড়বে। এই পিচে রান ৪০০-এর বেশি হবে বলে আমি আশাবাদী।’ সেই লক্ষ্য ক্যারিবীয়রা পূর্ণ করলে বাংলাদেশের জন্য আরও কঠিন হবে।