.
সুইংয়ের জবাবে সুইং, বাউন্সের জবাবে বাউন্স, হ্যাজেলউডের জবাবে বুমরাহ- পার্থে পেসারদের তান্ডবে ভাঙল ৭২ বছরের রেকর্ড। আলোচিত বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির হাইভোল্টেজ পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টেই পেসারদের হাত ধরে রীতিমতো আগুনের হলকা ছুটল ঐতিহাসিক পার্থ স্টেডিয়ামে। টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া ভারতের প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে গেল ১৫০ রানে, ৪৯.৪ ওভারে। হ্যাজেলউডের শিকার ৪ উইকেট।
জবাবে ৪৭ রানেই ৬ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়া ২৭ ওভারে ৭ উইকেটে ৬৭ রান তুলে শুক্রবার প্রথম দিন শেষ করেছে। রোহিত শর্মার অনুপস্থিতিতে ভারতকে নেতৃত্ব দেওয়া জাসপ্রিতম বুমরাহর ১০ ওভার বল করে নিয়েছেন ৪ উইকেট। সব মিলিয়ে পার্থে এদিন পড়েছে ১৭ উইকেট, যার সবকটিই গেছে পেসারদের ঝুলিতে। ১৯৫২ সালের পর এই প্রথম অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কোনো টেস্টের প্রথম দিনে সবচেয়ে বেশি উইকেট পতনের নজির এটিই।
১৯৫২ সালের ২২ ডিসেম্বর অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের তৃতীয় টেস্টের প্রথম দিনে পড়েছিল ১৬ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম তিনটিসহ ৪ উইকেট নিয়েছেন বুমরাহ, ১০ ওভারে দিয়েছেন ১৭ মাত্র রান। মোহাম্মদ সিরাজের শিকার ২টি, অভিষিক্ত হার্শিত রানার ১টি। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন হ্যাজেলউড। স্টার্ক, প্যাট কামিন্স ও মিচেল মার্শের প্রাপ্তি ২টি করে। ভারতকে অল্পে থামানোর আনন্দ উবে যেতে বেশি সময় লাগেনি অস্ট্রেলিয়ার। তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়ে দলে আসা নতুন টেস্ট ওপেনার নাথান ম্যাকসুয়েনি ব্যর্থ প্রথম সুযোগে। বাউন্ডারি দিয়ে যাত্রা শুরুর পর ১০ রান করে তিনি বিদায় নেন বুমরাহর বলে এলবিডব্লিউ হয়ে। ভারত এই সাফল্য পায় রিভিউ নিয়ে। এক বল পর বুমরাহ উইকেট পেতে পারতেন আরেকটি। কিন্তু স্লিপে মার্নাস লাবুশেনের সহজ ক্যাচ ফেলেন বিরাট কোহলি। খানিক পর আর ভুল করেননি তিনি। তার হাতে ক্যাচ দিয়ে বুমরাহর দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন উসমান খাজা। পরের বলেই শূন্য রানে এলবিডব্লিউ হন স্টিভেন স্মিথ। টেস্ট ক্রিকেটে বুমরাহর আগে স্মিথকে ‘গোল্ডেন ডাক’ এর তেঁতো স্বাদ দিতে পেরেছিলেন কেবল একজনই-২০১৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার ডেল স্টেইন। দুটি চার মেরে বিদায় নেন ট্রাভিস হেড। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করে প্রথম উইকেটের দেখা পান হার্শিত। টিকতে পারেননি মিচেল মার্শও। সিরাজের বলে তৃতীয় স্লিপে ডাইভ দিয়ে দারুণ ক্যাচ নেন লোকেশ রাহুল। অস্ট্রেলিয়ার রান তখন ৫ উইকেটে ৩৮।
১৯৮০ সালের পর ঘরের মাঠে কোনো টেস্টে ৪০ রানের আগে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ৫ উইকেট হারানোর মাত্র দ্বিতীয় ঘটনা এটি। ২০১৬ সালে হোবার্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল তারা। শুরুতেই জীবন পাওয়া লাবুশেনের প্রথম রানের দেখা পেতে লাগে ২৪ বল। অনেকটা সময় এক প্রান্ত আগলে রেখে ৫২ বলে ২ রান করে তিনি ফেরেন সিরাজের দ্বিতীয় শিকার হয়ে। সিম মুভমেন্টে এলবিডব্লিউ হওয়া ব্যাটসম্যান রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। কামিন্সকে উইকেটকিপারের ক্যাচ বানিয়ে চতুর্থ শিকার ধরেন বুমরাহ। ৫৯ রানে ৭ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়া কোনোমতে কাটিয়ে দেয় দিনের শেষ দুই ওভার। দিনের শেষটা ভালো হলেও, শুরুটা বিভীষিকাময় ছিল ভারতের।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকে নিয়মিত উইকেট হারিয়ে দুই সেশনেই গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। সপ্তম উইকেটে ঋষভ পন্থ ও নিতিশ কুমার রেড্ডির ৪৮ রানের জুটি ছাড়া আর কোনো জুটি ২০ পর্যন্তও যেতে পারেনি। অভিষিক্ত নিতিশের ৬ চার ও এক ছক্কায় ৫৯ বলে ৪১ রান তাদের সর্বোচ্চ ইনিংস। পন্থ ৩ চার ও এক ছক্কায় ৭৮ বলে করেন ৩৭ রান। জশস্বী জয়সওয়াল ও দেবদুত পাডিক্কাল ফেরেন শূন্য রানে। পড়তি ফর্মে সমালোচনার মুখে থাকা কোহলি যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। শুরুটা ভালো করে, লম্বা সময় উইকেটে কাটিয়ে ৭৪ বলে ২৬ রানে থামেন লোকেশ রাহুল। যদিও তাকে দেওয়া তৃতীয় আম্পায়ারের আউটের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে বেশ। ধ্রুব জুরেল ও ওয়াশিংটন সুন্দরের দ্রুত বিদায়ে ভারতের স্কোর হয়ে যায় ৬ উইকেটে ৭৩। সেখান থেকে পন্থ ও নিতিশের জুটিতে একশ’ ছাড়াতে পারে সফরকারীরা।