বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি তাবিথ আউয়াল
একজন মানুষের মাঝে যদি সঠিক নেতৃত্বের গুণাবলী থাকে, তবে একদল অযোগ্য লোককেও তিনি অনেক বড় অর্জনের দিকে নিয়ে যেতে পারেন। নেতৃত্বের উক্তি দুর্বলের বুকে সাহস যোগায়, অবিশ্বাসীর মনে বিশ্বাসের জন্ম দেয়। মানুষ একা কিছু করতে পারে না। একজন মানুষের স্বপ্ন যত বড়, তার দলও তত বড় হতে হয়। একজন সত্যিকার নেতা তার নিজের স্বপ্ন ছড়িয়ে দিতে পারেন বহু মানুষের মাঝে। নেতাকে অনুসরণ করে তারা নিজের শ্রম, ঘাম এমনকি রক্ত দিতেও দ্বিধা করে না।
নেতৃত্ব হলো এমন এক সামাজিক প্রভাবের প্রক্রিয়া যার সাহায্যে মানুষ কোনো একটি সার্বজনীন কাজ সম্পন্ন করার জন্য অন্যান্য মানুষের সহায়তা ও সমর্থন লাভ করতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক বা সামাজিক লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য অন্তর্বর্তী ও বাহ্যিক পরিবেশে প্রাপ্ত সম্পদকে সফলভাবে সমন্বয় সাধন করাও তা থেকে সর্বাধিক লাভ তোলার ক্ষমতাই হলো কার্যকরী নেতৃত্ব। যে কোনো পরিস্থিতিতে যে ব্যক্তি ধারাবাহিকভাবে সফল হওয়ার ক্ষমতা রাখেন এবং কোনো সংস্থা বা সমাজের প্রত্যাশা পূরণকারী হিসেবে স্বীকৃতি পান, তিনিই কার্যকর নেতা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছেÑ তাবিথ আউয়ালের মধ্যে এমন কার্যকর নেতা হওয়ার মতো কোনো গুণাবলী আছে? তিনি কি দেশের ফুটবলকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জে উতরাতে পারবেন? গত ২৬ অক্টোবর দীর্ঘ ১৬ বছর পর নতুন সভাপতি পেয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। রেকর্ড ও সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন তাবিথ আউয়াল। বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নে আগামী চার বছরের দায়িত্ব পাওয়া এ সংগঠকের সংক্ষিপ্ত পরিচয় জেনে নেওয়া যাক।
দেশের ফুটবলে তাবিথ আউয়াল নতুন কোনো নাম নয়। দেশের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ঘরে ১৯৭৯ সালে জন্ম নেওয়া তাবিথের পরিচয়ের তালিকাটাও বেশ লম্বা। তিনি একই সঙ্গে ব্যবসায়ী ও সংগঠক, আছেন বিএনপির জাতীয় কমিটিতেও। ঢাকা উত্তর সিটির নির্বাচনে মেয়র পদে লড়াই করেছেন দু’বার। প্রিমিয়ার থেকে বিদায় নেওয়া ফেনী সকারকে এক সময় পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন, এখন করছেন পেশাদার লিগের দ্বিতীয় স্তরের ক্লাব নোফেল স্পোর্টিংকে। এর আগে দায়িত্ব পালন করেছেন বাফুফেতেও। ২০১২ ও ২০১৬ সালে বাফুফের সহসভাপতি ছিলেন।
২০২০ সালেও সহসভাপতি নির্বাচনে লড়েছিলেন তিনি। তবে মহিউদ্দিন আহমেদ মহির সঙ্গে সমান ভোট পাওয়ার পর পুনর্নির্বাচনে স্বল্প ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন তিনি। আর সালাহউদ্দিন পরবর্তী যুগে নির্বাচন করে তিনি সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে সভাপতি নির্বাচিত হন। এবারের নির্বাচনে তিনি ১২৩ ভোট পান। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী মিজানুর রহমান চৌধুরী পান মাত্র ৫ ভোট।
নির্বাচনের আগে আনুষ্ঠানিক ইশতেহার ঘোষণা না করলেও চারটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে নিজের কর্ম পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন তাবিথ। সেগুলো হচ্ছেÑ জাতীয় দলের র্যাঙ্কিং, শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সঙ্গে ম্যাচ বাড়ানো, ফুটবলারদের আয়ের উৎস নিশ্চিত করা এবং মাঠে দর্শক ফেরানো।
এছাড়াও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভালো করতে রিসোর্স বাড়ানোর ওপর বাড়তি গুরুত্ব দিতে চান তিনি। কোয়ালিটি ফুটবলার তৈরি করে পাইপলাইন সমৃদ্ধ করার জন্যও থাকবে তার বিশেষ পরিকল্পনা। বৈষম্য রাখতে চান না নারী-পুরুষ দলে।
নির্বাচনের আগে তাবিথ বলেছিলেন, গত তিনটি নির্বাচন করেছি। এবারও লড়ব। আর সেটা সভাপতি পদে। আমি আশাবাদী জিতব। নির্বাচনে প্রার্থিতা পেশ করে আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে জানাব। নির্বাচনী ইশতেহারের ব্যাপারে এখনই কিছু বলতে চাইছি না। তবে এটুকু বলতে পারি, সভাপতি হলে খেলার মাঠে চমক দেখাব। ফুটবলকে পরের ধাপে নিতে পারব আশা করি। আগের দুই মেয়াদে বাফুফেতে সহসভাপতি হিসেবে কাজ করতে নির্বাহী কমিটি ও রাষ্ট্রের বাধা পাননি বলে জানিয়েছিলেন তাবিথ। দ্বিতীয় মেয়াদে বাফুফের টেকনিক্যাল কমিটি চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছেন। তার সময়ে দেশে ৪০০ কোচ তৈরি হয়েছে, এমন দাবিও করেছিলেন।
সভাপতি হবার দশদিন পর বাফুফে ভবনে প্রথমবারের মতো পা রাখেন তাবিথ। দেখা করেন সবার সঙ্গে। সেই সঙ্গে সদ্য সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাজয়ী নারী ফুটবলারদের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। চ্যাম্পিয়ন নারী দলের সম্মাননা নিয়ে তিনি বলেন, তারা দারুণ একটি সাফল্য এনেছে। বাফুফে থেকে অবশ্যই তাদের জন্য ঘোষণা থাকবে। সেটা শনিবার আমাদের প্রথম সভার পরই ঘোষণা হবে। পরে প্রথম সভার পর জানান, বাফুফের পক্ষ থেকে সাফজয়ী নারী ফুটবল দলকে দেড় কোটি টাকা বোনাস দেওয়া হবে।