ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

চল্লিশেও চনমনে রোনাল্ডো

আয়ান আব্রাজ

প্রকাশিত: ০০:২৩, ২০ নভেম্বর ২০২৪

চল্লিশেও চনমনে রোনাল্ডো

সতীর্থদের উদ্যাপনের মধ্যমণি ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো

চল্লিশ ছুঁই ছুঁই বয়স। ইউরোপ ছেড়ে এখন সৌদি প্রো লিগের দল আল নাসরের প্রতিনিধিত্ব করছেন পর্তুগীজ সুপারস্টার ক্রিষ্টিয়ানো রোনাল্ডো। এ বয়সেও মাঠ কাঁপাচ্ছেন ক্রিষ্টিয়ানো রোনাল্ডো। বিশেষ করে জাতীয় দলের জার্সিতে ক্যারিয়ারের গোধূলীটা দারুণ কাটছে সিআর সেভেনের। ফলশ্রুতিতে উড়ছে তার দল পর্তুগালও। সর্বশেষ উয়েফা নেশন্স লিগে শক্তিশালী পোল্যান্ডের বিপক্ষেও জোড়া গোল করলেন পর্তুগীজ সুপারস্টার। শুধু তাই নয়? সতীর্থদের দিয়ে একটি গোল করাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন আল নাসর তারকা। তাতেই শুক্রবার তার দল পর্তুগাল ৫-১ গোলের বড় ব্যবধানে পরাজয়ের স্বাদ উপহার দিয়েছে পোল্যান্ডকে। সেইসঙ্গে উয়েফা নেশন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিটও নিশ্চিত করে পর্তুগাল। 
২০০২ সালের অক্টোবরে লিসবন থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল ক্রিষ্টিয়ানো রোনাল্ডোর। এরপর মাঝে চলে গেল প্রায় ২২ বছর। সেদিনের সেই কিশোর এখন ফুটবল ক্যারিয়ারের গোধূলিবেলায় পৌঁছে গেছেন। তবে এ পথ পাড়ি দেওয়ার পথেই কুড়িয়ে নিয়েছেন সাফল্যের অবিশ্বাস্য সব মণি-মুক্তা। মাস দেড়েক আগেই ক্যারিয়ারের ৯০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন সিআর সেভেন। সেইসঙ্গে ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার হিসেবে এই কীর্তি গড়েন তিনি। নেশন্স লিগে পোলিশদের হারিয়ে আরও একটি রেকর্ড নিজের করে নেন রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক এই তারকা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি জয়ের রেকর্ড এখন এককভাবেই নিজের করে নিয়েছেন রোনাল্ডো।

পর্তুগালের জার্সিতে সিআর সেভেনের জয় এখন ১৩২টি। এর ফলে পর্তুগীজ সুপারস্টার ছাড়িয়ে যান তারই দীর্ঘদিনের ক্লাব সতীর্থ সার্জিও রামোসকে। এর আগে স্পেনের হয়ে ১৩১ জয় নিয়ে এই রেকর্ড নিজের করে রেখেছিলেন রামোস। ১১৯ ম্যাচ জিতে এই তালিকার চার নম্বরে রয়েছেন রোনাল্ডোরই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসি। 
শুধু তাই নয়? জাতীয় দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সে জোড়া গোল করার কীর্তিও এখন রোনাল্ডোর। শুধু কী তাই? বয়স ৩৫ পূর্ণ হওয়ার পর জাতীয় দলের হয়ে রোনাল্ডোর গোলসংখ্যা এখন ৩৬। যা ডিয়েগো ম্যারাডোনার চেয়েও দুটি বেশি। পঁয়ত্রিশ পূর্ণ হওয়ার পর এতদিন জাতীয় দলের জার্সিতে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটি ছিল ম্যারাডোনার। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী এই কিংবদন্তির ৩৪ গোলকে ছাড়িয়ে এই রেকর্ড এবার এককভাবেই নিজের করে নিলেন সিআর সেভেন।

ইনজুরির কারণে শুক্রবার এস্তাদিও দো স্টেডিয়ামে সফরকারী পোল্যান্ডের হয়ে খেলতে পারেননি ইনফর্ম রবার্ট লেভানডোস্কি। বার্সা তারকার অনুপস্থিতিতে এদিন ভক্ত-সমর্থকরা দেখে রোনাল্ডোর একক শো। ম্যাচের ৭২ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ব্যক্তিগত প্রথম আর দলের দ্বিতীয় গোল করেন রোনাল্ডো। ৮৩ মিনিটে নেতো পেদ্রোর গোলে অ্যাসিস্ট করেন তিনি। আর ৮৭ মিনিটে ৩৯ বছর বয়সী রোনাল্ডোর চোখ ধাঁধানো বাইসাইকেল কিকে ৫-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় পর্তুগাল।
এর ফলে উয়েফা নেশন্স লিগে ৫ ম্যাচ থেকে রোনাল্ডোর গোলসংখ্যাও সমান পাঁচটি। ৬ ম্যাচ থেকে সর্বোচ্চ ৭ গোল করে এই তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছেন নরওয়ের আর্লিং হালান্ড। যিনি সর্বশেষ রবিবার কাজাখস্তানের বিপক্ষেও দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন। এই মুহুর্তে রোনাল্ডোর মোট গোলসংখ্যা ৯১০টি। তাহলে কোথায় থামবেন ক্রিষ্টিয়ানো রোনাল্ডো? এমন প্রশ্ন অবশ্য মাঝেমধ্যেই ওঠে। গত আগস্টে এক সাক্ষাৎকারে সিআর সেভেন বলেছিলেন, জাতীয় দল ছাড়ার সময় হলে কাউকে কিছু না বলেই জায়গাটা ছেড়ে দেবেন।

যদিওবা ক্লাব ফুটবল থেকে কবে সরে দাঁড়াবেন, সে বিষয়ে এখনো মুখ খোলেননি। তবে পর্তুগীজ ফরোয়ার্ডের ক্যারিয়ারে তাকিয়ে একটি ব্যাপার যেন আন্দাজ করাই যায়! জাতীয় দল ও ক্লাব ফুটবলে প্রায় সবকিছু জিতে নেওয়া রোনাল্ডোর সামনে এখন একটাই লক্ষ্য, ১০০০ গোলের মাইলফলক। ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ডিফেন্ডার ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নিজের সাবেক সতীর্থ ও বন্ধু রিও ফার্ডিনান্ডকে এ কথাই বলেন আল নাসর তারকা, ‘আমি ১০০০ গোল করতে চাই।’ রোনাল্ডোর ধারণা, ৪১ বছর বয়সের মধ্যে ১০০০ গোলের মাইলফলকের দেখা পেতে পারেন। সেজন্যই তিনি বলেন, ‘আমি ১০০০ গোল করতে চাই। চোটে না পড়লে এটাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি এটা চাই। ফুটবলে তাড়া করার জন্য এটাই আমার কাছে সেরা মাইলফলক।’

×