.
ভুটানের রেফারি বীরেন্দ্র রাই খেলা শেষের বাঁশি বাজালেন। রাকিব-মোরসালিন-সাদরা সবাই মাঠের মাঝখানে জড়ো হয়ে গোল হয়ে তালে তালে লাফাচ্ছেন। কয়েক ফুটলার জার্সি খুলে সেগুলো গ্যালারিতে ছুড়ে মারছেন সমর্থক-দর্শকদের উদ্দেশ্যে। ভিআইপি গ্যালারিতে বসা বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়ালকে ক্যামেরায় ধরা হলো। উঠে দাঁড়িয়েছেন। চোখে-মুখে পরিতৃপ্তির ছাপ। আর গ্যালারির উন্মাতাল দর্শকরা তো রং ছিটিয়ে, স্মোক ফ্লেয়ার স্প্রে করে, ড্রাম পিটিয়ে রীতিমতো নাচছেন আর উল্লাস করছেন। কারণ একটাই, তাদের প্রিয় বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল যে একটু আগেই জয়ের মধুর স্বাদ পেয়েছে! শনিবার দিনটা তাদের জন্য ‘শনি’ময় হলো না! এদিন ঢাকার বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি সিরিজের (টায়ার-১) দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে স্বাগতিক বাংলাদেশ ২-১ গোলে হারায় সফরকারী মালদ্বীপকে। খেলার প্রথমার্ধের স্কোরলাইন ছিল ১-১। ১৩ নভেম্বর একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপ ১-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ফলে দুই ম্যাচ সিরিজ ১-১ ব্যবধানে শেষ হলো অমীমাংসিতভাবে। ২০ বারের মোকাবিলায় এ নিয়ে মালদ্বীপকে নবমবার হারালো বাংলাদেশ। মালদ্বীপ জিতেছে ৭ ম্যাচে। বাকি ৪ ম্যাচ ড্র হয়।
আগে ম্যাচের সংযুক্তি সময়ে বা স্টপেজ টাইমে গোল হজম করে আক্ষেপ জাগিয়ে ম্যাচ হারার বাজে অভ্যাস ছিল লাল-সবুজ বাহিনীর। কিন্তু শনিবার মঞ্চস্থ হয়েছে ভিন্ন চিত্রনাট্য। ম্যাচের স্টপেজ টাইমে গোল করে বরং বাংলাদেশই জিতে নিল ম্যাচটা। সেই সঙ্গে নিল মধুর প্রতিশোধও। এই বছরে এটাই ছিল বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ দল আটটি ম্যাচ খেলে। জিতেছে মাত্র ২টি মাত্র হেরেছে ৬টি ম্যাচে। বাকি জয়টি ভুটানের বিপক্ষে।
আগের ম্যাচে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ২২ ধাপ এগিয়ে থাকা হাজার দ্বীপের দেশটির কাছে হেরে তেতে ছিল জাভিয়ের ক্যাবরেরার শিষ্যরা। শনিবারের ম্যাচে তাই তারা জিততে মরিয়া ছিল। আর খেলেছেও সেভাবেই। যদিও সমানতালে খেলেছে মালদ্বীপও। উভয় দলই আক্রমণাত্মক ও গতিশীল ফুটবল খেলেছে। গোলের একাধিক সুযোগও পেয়েছে। কিন্তু ভাগ্য বেশি সহায় হয়েছে বাংলাদেশেরই। প্রথম ম্যাচে কানাডা প্রবাসী কাজেম শাহ প্রথম একাদশে থাকলেও শনিবার তাকে একাদশের বাইরে রেখে দল গড়েন কোচ ক্যাবরেরা। কাজেমের পরিবর্তে দলে ঢোকেন মিডফিল্ডার মজিবর রহমান জনি। কোচের আস্থার প্রতিদানও দিয়েছেন জনি দলের প্রথম গোলটি করে।
এই ম্যাচ দুটি দিয়ে এশিয়ান কাপের প্রস্তুতিও সেরে নিল বাংলাদেশ দল। আগামী ৯ ডিসেম্বর এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ড্র অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ২০২৫ সালের মার্চ, জুন ও সেপ্টেম্বর উইন্ডোতে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের সব ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও প্রথমার্ধেই পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। তখন ম্যাচের ২৩ মিনিট। বাংলাদেশ ডিফেন্ডার তপু বর্মণ এর জন্য দায়ী। ফরোয়ার্ড পাস দিতে ভুল করেন তিনি। সেই বল পান মালদ্বীপ মিডফিল্ডার ইব্রাহীম হোসেন। তিনি বক্সের মধ্যে থ্রু ঠেলেন আলী ফাসিরকে। ফাসির বাংলাদেশের দুই ডিফেন্ডারের মাঝ থেকে বল জালে পাঠান দক্ষতার সঙ্গে। কিছুই করতে পারেননি আগুয়ান গোলরক্ষক মিতুল মারমা (১-০)।
৪২ মিনিটে সমতায় ফেরে বাংলাদেশ। বক্সের বাইরে বল পেয়ে দর্শনীয়ভাবে এক পা থেকে আরেক পায়ে বল নিয়ে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের ডজ দেন। তারপর সুযোগ বুঝে যে কৌনিক শট নেন, তা মালদ্বীপ গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়েও আটকাতে পারেননি (১-১)।
বাংলাদেশের বদলি ফুটবলার-ফরোয়ার্ড পিয়াস আহমেদ নোভা সুবর্ণ সুযোগ মিস করেন।
৯০ মিনিট পর্যন্ত খেলা ১-১ সমতা ছিল। রেফারি ৬ মিনিট ইনজুরি সময় দেন। ইনজুরি সময়ের তৃতীয় মিনিটে বদলি ফুটবলার পাপন সিং জয়সূচক গোল করেন। বাম প্রান্ত থেকে বাড়ানো বলে বক্সের মধ্যে বল পান পাপন। ঠান্ডা মাথায় পাপন শট নিয়ে মালদ্বীপ গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন (২-১)। ম্যাচ শেষে জয়ের উল্লাসে মেতে ওঠে ‘দ্য বেঙ্গল টাইগার্স’ বাহিনী।