.
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে একই দিনে দুইরকম অভিজ্ঞতা পেল লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের দুই জায়ান্ট ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। শুক্রবার ভেনিজুয়েলার সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে ডোরিভাল জুনিয়রের দল। তবে সেলেসাওরা পয়েন্ট ভাগাভাগি করে মাঠ ছাড়লেও হার নিয়েই মাঠ ছেড়েছে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। প্যারাগুয়ের মাঠে এদিন ২-১ গোলে হেরে গেছে মেসি-মার্টিনেজরা।
ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফেরাটা মোটেই সুখকর হলো না ভিনিসিয়াস জুনিয়রের। ব্যালন ডি অরের মতোই যেন এবার ব্রাজিলের জয়টাও হাতছাড়া হলো অনাকাক্সিক্ষতভাবে। কেননা তার পেনাল্টি মিসেই যে দুর্বল ভেনিজুয়েলার মাঠ থেকে মাত্র এক পয়েন্ট নিয়ে ফিরতে হলো সেলেসাওদের। শুধু পেনাল্টি মিসই নয়, গোলের একাধিক সহজ সুযোগও হাতছাড়া করেন স্বভাবজাতভাবে। সব মিলিয়ে পুরো ম্যাচে দাপট নিয়ে খেলেও ড্রয়ের হতাশায় পুড়তে হলো পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। যদিওবা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে নিজেদের ১১তম ম্যাচে দুর্বল ভেনিজুয়েলার বিপক্ষে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে ডোরিভাল জুনিয়রের দল। কিন্তু আক্রমণে গিয়ে বারবারই হতাশ করেন ভিনি-রাফিনহারা।
তবে অনেক চেষ্টার পর ৪৩ মিনিটে সফলতার মুখ দেখে ব্রাজিল। ডি-বক্সের ঠিক বাইরে থেকে রাফিনহার নেওয়া বাঁকানো শট পোস্টের দুরূহ কোণে লেগে জালে জড়ায়। ঝাঁপিয়ে পড়েও নাগাল পাননি প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক রোমো। ফলে এক গোলের লিড নিয়েই বিরতিতে যায় ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধেও নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেলতে থাকে ডোরিভালের শিষ্যরা। ৫৯ মিনিটে বল নিয়ে বাঁ প্রান্ত ধরে ভিনিসিয়াস জুনিয়র বক্সে ঢোকার পথে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাধা দেন ভেনিজুয়েলার গোলরক্ষক। ভিআর চেক করে ফাউল ধরে পেনাল্টি দেন রেফারি। কিন্তু স্পটকিকটা ঠিকঠাক নিতে ব্যর্থ হন রিয়াল মাদ্রিদ উইঙ্গার। যদিও আরেকবার সুযোগ পেয়েছিলেন; কিন্তু ফিরতি বলও জালে জড়াতে ব্যর্থ হন রিয়াল মাদ্রিদের এই ব্রাজিলিয়ান তারকা। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের আগ মুহূর্তে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ভেনিজুয়েলা। ম্যাচের একেবারে শেষদিকে মাঠে ঘটে এক অপ্রীতিকর ঘটনা। যোগ করা সময়ের শেষ দুই মিনিট বাকি থাকতে মাঠের পানির নলগুলো হঠাৎ ছেড়ে দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষোভ ঝোড়ে জোরালো প্রতিবাদ করে লাল কার্ড দেখেন ব্রাজিলের সহকারী কোচ। কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকার পর পানির নলগুলো বন্ধ হলে রেফারি আবার খেলা চালিয়ে যান। এরপর আরও তিন মিনিট খেলা হলেও সুবিধা করতে পারেনি সেলেসাওরা।
এদিকে বাংলাদেশ সময় ভোরে অনুষ্ঠিত ম্যাচে প্যারাগুয়ের কাছে হেরে গেছে কাতার বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা। আগে থেকেই জানানো হয়েছিল, গ্যালারিতে প্যারাগুয়ের কোনো সমর্থক আর্জেন্টিনা কিংবা মেসির জার্সি পরে মাঠে আসতে পারবে না। ফলে গ্যালারিজুড়েই ছিল প্যারাগুয়ের লাল-সাদা জার্সি। শুধু যে সমর্থকদের কারণেই প্যারাগুয়ে আর্জেন্টিনাকে হারিয়েছে তেমন নয় বরং মাঠের ফুটবলেও দুর্দান্ত ছিল স্বাগতিক দলের খেলোয়াড়রা। ম্যাচের শুরু থেকেই সুযোগ তৈরি করতে থাকে প্যারাগুয়ে। কিন্তু প্রথম গোল করে আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ১১ মিনিটে লাউতারো মার্টিনেজ গোল করে এগিয়ে দেন আলবিসেলেস্তেদের। এঞ্জো ফার্নান্দেজের থ্রু বল ধরে প্যারাগুয়ের ডিফেন্ডারকে পেছনে ফেলে আড়াআড়ি শটে গোল করেন লাউতারো। কিন্তু এই লিড বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি স্কালোনির শিষ্যরা। ১৯তম মিনিটেই গুস্তাফো ভেলাসকেসের ক্রসে সানাব্রিয়ার দারুণ এক বাইসাইকেল কিক পোস্ট ঘেঁষে বল আর্জেন্টিনার জালে জড়ায়। ফলে প্রথমার্ধ ১-১ গোলের সমতায় শেষ হয়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই এগিয়ে যায় স্বাগতিক দল। ৪৭ মিনিটে দিয়েগো গোমেজের ফ্রি কিক হেড করে গোল করেন ওমর আলদারেতে। ম্যাচের ৭৯ মিনিটে সমতায় ফেরার সুযোগ পেলেও মেসির দূরপাল্লার শট পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। ৮৬ মিনিটেও মেসির কর্নার থেকে হেডে গোল করার সুযোগ পেলেও ত কাজে লাগাতে পারেনি ভ্যালেন্টিন কাস্তেলানোস। ফলে ৮ বছর পর আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে প্যারাগুয়ে।
এর ফলে ১১ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে শীর্ষেই অবস্থান করছে আর্জেন্টিনা। ১০ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে কলম্বিয়া। ১১ ম্যাচে ৫ জয় ও ২ ড্রয়ে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে ব্রাজিল।