ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

সানিয়া এখনো ভারতীয় টেনিসের আইডল

প্রকাশিত: ০১:০৭, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

সানিয়া এখনো ভারতীয় টেনিসের আইডল

.

ক্রীড়াজগতের অন্যতম জনপ্রিয় দম্পতি তারা। একজন ক্রিকেটার, অন্য জন টেনিস তারকা। তাও আবার একজন ভারতের, অন্য জন পাকিস্তানের। সানিয়া মির্জা-শোয়েব মালিকের সম্পর্কের রসায়ন বরাবরই থেকেছে চর্চার কেন্দ্রে। ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল সানিয়া-শোয়েবের বিয়ে হয়। দীর্ঘ ১২ বছরের সেই সম্পর্কে ভাঙন ধরার পর ছাড়াছাড়িও হয়ে গেছে তাদের

দুবাই ওপেনে ডাবলসের মধ্য দিয়ে গত বছর ফেব্রুয়রিতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক টেনিসকে বিদায় জানিয়েছেন সানিয়া মির্জা। সিঙ্গেলস ছেড়েছেন আরও আগে। কিন্তু ভারতীয়রা কি সানিয়াকে ভুলতে পেরেছে, না পারবে? অবসরের পর গত প্রায় দেড় বছরে জিতেছেন একাধিক পুরস্কার জিতেছেন। তার মধ্যে ‘ইন্ডিয়ান অব দ্য ইয়ার’। জাতির অগ্রগতিতে নিবেদিত ব্যক্তি ও সংস্থাকে সম্মান জানানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে এটি। এ বছর সানিয়া মির্জার পাশাপাশি এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, স্কোয়াড্রন লিডার নিকিতা মালহোত্রা, নয়না লাল কিদোয়াইর মতো ব্যক্তিত্ব। ক্রিকেট ভারতের জনপ্রিয় খেলা হলেও হিন্দু অধ্যুষিত দেশটির মুসলিম পরিবার থেকে উঠে এসে টেনিসের আইকন হয়ে উঠতে সানিয়েকে যে সংগ্রাম এবং সাধনা করতে হয়েছে, তা গোটা ভারতীয় ক্রীড়াঙ্গনের জন্যই বড় উদাহরণ। এক্ষেত্রে গ্রেট শচীন টেন্ডুলকরের সেই মন্তব্য স্মরণীয়, ‘ধন্যবাদ সানিয়া একটা গোটা জাতিকে স্বপ্ন দেখানোর জন্য। ভারতে অগণিত মেয়ে তোমাকে দেখে টেনিস খেলার অনুপ্রেরণা পেয়েছে এবং আগামী দিনেও পাবে। তুমি আসলে গোটা ক্রীড়াঙ্গনেরই প্রেরণা।’ সানিয়া মির্জার জন্ম ১৯৮৬ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে। সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে বেড়ে ওঠেন তিনি। রক্ষণশীল ভারতীয় সমাজে কোনো নারীকে যখন নিজের অধিকার আর শিক্ষা পেতে লড়াই করতে হয় সেখানে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে সানিয়ার উত্থান একটি যুদ্ধজয়ের গল্পের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তার ওপর পদে পদে লড়াই করতে হয়েছে পুরুষশাসিত সমাজের বিরুদ্ধে।  সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সে কথা স্মরণ করিয়ে সানিয়া বলেছিলেন, মেয়ে হয়ে জন্মালে অনেক লড়াই লড়তে হবে। কারণ আমাদের বসবাস পুরুষদের দুনিয়ায়। একজন পুরুষ যখন কিছু অর্জন করে তখন বলা হয় সে উচ্চাকাক্সক্ষী। কিন্তু সেই কাজটা মেয়ে করলেই বলা হবে সে বিদ্রোহী। সানিয়া বলেন, ‘টেনিসের শুরুতে প্রেরণা দেওয়ার মতো ছিল না কেউই। বরং সবাই বলতো আমি আমার সময় আর অর্থ নষ্ট করছি। আমার চিকিৎসক অথবা শিক্ষিকা হওয়া উচিত। তবে কাউকে কিছু বলিনি, বিনয়ের সঙ্গে জবাব দিয়ে নিজ লক্ষ্যে স্থির ছিলাম।’ ভারতে টেনিস যখন অতটা জনপ্রিয় না, তখন এই খেলাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন সানিয়া। এরপর গড়েন অনেক রেকর্ড। ২০ বছরের লম্বা ক্যারিয়ারে ৪৩টি ডাব্লিউটিএ (উইমেন্স টেনিস অ্যাসোসিয়েশন) ডাবলসের (দ্বৈত) শিরোপা জিতেছেন সানিয়া। সিঙ্গেলসে (একক) শিরোপা আছে একটি। 
২০০৩ সালে পেশাদার টেনিসে পা রাখার পর ছয়টি গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা জেতেন তিনি। এর মধ্যে তিনটি আছে নারী দ্বৈতে। সুইস কিংবদন্তি মার্টিনা হিঙ্গিসের সঙ্গে জুটি বেঁধে এই শিরোপা জেতেন সানিয়া। বাকি তিন গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা আসে মিক্সড ডাবলসে (মিশ্র দ্বৈত)। একমাত্র ভারতীয় টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে উইমেন্স সিঙ্গেলস র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরা ১০০তে জায়গা করে নেওয়ার রেকর্ড আছে সানিয়ার। ২৭তম স্থান ছিল তার ক্যারিয়ার সেরা। এছাড়া ডাবলসে একটা সময় ছিলেন র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে। সাবেক পাকিস্তান তারকা ক্রিকেটার শোয়েব মালিকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কারণে টেনিসের বাইরেও আলোচনায় ছিলেন সানিয়া। ২০০৩ সালে ভারতে খেলতে গিয়ে প্রথম সানিয়া-শোয়েবের দেখা হয়। সেখানে আলাপের পর  থেকেই দুজনের যোগাযোগের সূত্রপাত। এর ৬ বছর পর ২০০৯ তাদের মন দেওয়া নেওয়া হয়। ভিন্ন দুটি দেশের ভিন্ন জগতের তারকাদের প্রেম-বিয়ে নতুন নয়। এরপরও ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল ঝড় উঠেছিল। তুমুল রাজনৈতিক বৈরিতার মধ্যে চিরশত্রু ভারত ও পাকিস্তানের সংস্কৃতিকে ক্ষণিকের জন্য হলেও এক সুতোয় মিলিয়ে দিয়েছিলেন সানিয়া মির্জা ও শোয়েব মালিক। প্রশংসায় ভাসছিল তাদের পরিণয়। ২০১৮ সালে পুত্রসন্তানের জন্ম। দুবাইয়ে যৌথ বাড়ি, একাডেমি। কী দারুণ সময়...। 
সুখের সংসারে হঠাৎই ঝড় হয়ে আসে পাকিস্তানি মডেল ও অভিনেত্রী আয়েশা ওমরের সঙ্গে মালিকের অন্তরঙ্গ কিছু ছবি। এ বছরের শুরুতে প্রায় এক যুগের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানেন। দু’দেশের সংবাদমাধ্যমই বলছে, ২০২২ সালের শেষদিকেই তাদের বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল। মূলত ওই সময়ের পর থেকেই দুজনকে একসঙ্গে আর দেখা যায়নি। একইসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নিজেদের পুরনো ছবিগুলো সরিয়ে দেওয়া হয় ধীরে ধীরে। পাকিস্তানের জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানি ক্রিকেটার মালিকের অন্য নারীর সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি মানতে পারেননি ৩৭ বছর বয়সী সানিয়া। ফলে অসন্তুষ্টি থেকে তিনি দীর্ঘদিন শোয়েবের প্রতি অনাগ্রহ দেখান। পরবর্তীতে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে নিজেদের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নেন ভারতীয় টেনিস তারকা।
-শাকিল আহমেদ মিরাজ

×