আল্লাহ মোহাম্মদ গজনফর
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৮ বছর বয়স কবিতায় ‘১৮’ এর গুণগান করেছিলেন। আল্লাহ মোহাম্মদ গজনফরও পার করছেন জীবনের ১৮তম বসন্ত। উঠতি এই অফব্রেক বোলার নিজেকে যেভাবে জানান দিয়েছেন তাতে লম্বা সময়ের জন্য আফগানিস্তান ক্রিকেটের হাল ধরতে পারবেন এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
এ যেন সিলেবাসের বাইরে থেকে আসা এক প্রশ্নে বিভ্রান্ত হওয়া। আল্লাহ মোহাম্মদ গজনফর নামের সেই প্রশ্নে বুধবার রাতে বাংলাদেশ বিভ্রান্ত হয়েছে। ২৩৬ রানের মাঝারি টার্গেটে ব্যাট করে নেমে শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভগ্নদশা উন্মোচিত হয়েছে। ৬.৩ ওভার বোলিং করে মাত্র ২৬ রান খরচায় ৬ উইকেট পেয়েছেন গজনফর। রশিদ খান, মুজিব-উর-রহমান দুই রহস্যময় স্পিনারের ওপর আফগানিস্তানের ভরসার কেন্দ্র ছিল বেশ আগে থেকেই। এবার তাতে গজনফরের নামটাও যোগ করে নেওয়া যায় অনায়াসে।
তিনি একসময় ছিলেন পেসার। সেখান থেকে স্পিনে এসেছেন। চিরায়ত স্পিনের চেয়ে কিছুটা লম্বা রানআপ হয়তো সেখান থেকেই আসা। বলে জোর দেওয়ার ক্ষমতাটাও সহজাত। সঙ্গে একজন পারফেক্ট অফস্পিনার হয়ে উঠেছেন ভিন্ন ভিন্ন সব ডেলিভারির কল্যাণে। নামে অফস্পিনার হলেও গজনফরকে দিয়ে চাইলে লেগস্পিনও আপনি করিয়ে নিতে পারেন অনায়াসে। ক্যারম বল, ব্যাক স্পিন, গুগলি ছাড়াও বল দুই দিকেই ইচ্ছেমতো বাঁক খাওয়াতে পারেন।
মুশফিকুর রহিমের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারও খাবি খেয়েছেন গজনফরের আকস্মিক স্পিনে। উচ্চতায় ৬ ফুট ২ ইঞ্চির এই স্পিনারের কব্জির জোরটাও অসাধারণ। ২০০৬ সালের ২০ মার্চ জন্ম নেওয়া গজনফরের শুরুটা উপমহাদেশের বাকিদের মতোই টেনিস বল থেকে। পাড়ার ক্রিকেটে টেপ টেনিস কিংবা টেনিস বলে সাফল্যের বল মন্ত্র বল ঘোরাতে পারা। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এই কাজেই সফল ছিলেন গজনফর। টেনিস বলে খেলা শুরু করার পর পাকতিয়া প্রদেশের একটি একাডেমিতে খেলা শুরু করেন।
সেখান থেকে আফগান শাপাগিজা ক্রিকেট লিগের দল এমআইএস আইনাক নাইটসে ডাক পান। এই দলে তাকে টেনে নেন সাবেক আফগান অধিনায়ক দাওলাত আহমাদজাই। গজনফরের এই সামর্থ্যে মুগ্ধ হয়েই কি না দাওলাত তাকে হতে বললেন নিখুঁত স্পিনার। পেস থেকে স্পিনে এলেও বল পিচ করানোর ধরনে খুব একটা বড় পরিবর্তন করেননি। স্পিন বলেই কুইকার ডেলিভারি তার সঙ্গে কিছুটা ফুল লেন্থের বল। মুজিব-উর রেহমানের সঙ্গে তফাৎ সেখানেই। আর এতেই তাসের ঘরের মতো ভেঙেছে বাংলাদেশের ইনিংস।
মাত্র ১৮ বছর বয়সেই জায়গা করে নিয়েছেন আইপিএলের আলোকমঞ্চে। কলকাতা নাইট রাইডার্সে চলতি বছর আইপিএলে কোন ম্যাচ না খেললেও সামনের বার তার খেলা কেউ থামাতে পারবে না। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুব বিশ্বকাপ, ইমার্জিং এশিয়া কাপে নিজের বোলিং রহস্যের ঝলক দেখিয়েছেন। এবার বাংলাদেশের বিপক্ষে বল করতে এসে তিন রেকর্ডে নাম তুলেছেন তিনি। ছেলেদের ওয়ানডেতে তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে ৬ উইকেট নিয়েছেন গজনফার।
১৯৯০ সালে এই শারজাতেই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১৮ বছর ১৬৪ দিন বয়সে ২৬ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার ওয়াকার ইউনিস। এবার ১৮ বছর ২৩১ দিনে ২৬ রানেই ৬ উইকেট পেয়েছেন গজনফর। সেইসঙ্গে আফগানিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসেও ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগার নিজের করে নিয়েছেন। মুত্তিয়া মুরালিধরনের পেছনে শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওয়ানডেতে স্পিনারদের মধ্যে সেরা বোলিং ফিগারটাও এখন তার দখলে।