শারজায় সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের কাছে পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশ। ছবি আফগানিস্তান ক্রিকেট
এর চেয়ে লজ্জার আর কি আছে। ২৩৬ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ২ উইকেটে ১২০ রান করে জয়ের সুবাস পাচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর আফগানিস্তানের বোলারদের তোপের মুখে অসহায় আত্মসমর্পণ করেন টাইগার ব্যাটাররা। বিশেষ করে বলতে হবে রহস্যময় স্পিনার আল্লাহ মোহাম্মদ গাজানফারের কথা। তরুণ এই তারকা একাই ৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে লজ্জায় ডুবিয়েছেন।
২ উইকেটে ১২০ রান থেকে মাত্র ১৪৩ রানে অলআউট হয়ে যাওয়াকে চরম লজ্জার বলছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। মাত্র ২৩ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে মুশফিকু-মাহমুদুল্লাহরা ব্যর্থতার ষোলকলা পূরণ করেছেন। দেশের খেলাপাগল মানুষ কিছুতেই এমন ব্যর্থতা মানতে পারছেন না। তাইতো দেশব্যাপী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সাংবাদিকরাও এমন জঘন্য হারে ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন যোগ হয়েছে ‘ফাঁদ’ নামে এক অধ্যায়। ব্যাটারদের দুর্বলতা বের করে প্রতিপক্ষ সেভাবে বোলিং কিংবা ফিল্ডিং সেট করছেন। আর সেখানেই টোপ গিলে বারবার আউট হয়ে যাচ্ছেন বাংলার ব্যাটাররা। শান্ত-মুশফিকদের এই ফাঁদ বুঝতে না পারার মাঝে আরেকটা বিষয়ও সামনে এসেছে। ক্রিকেটে ‘গেম অ্যাওয়ারনেস’ বলে একটা কথা আছে। সহজ ভাষায় যার ব্যাখ্যা হল, ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে খেলা। বিশেষ করে ব্যাটারদের ক্ষেত্রে এটা বেশি প্রযোজ্য। কারণ উইকেট, প্রতিপক্ষ, বোলার ও ম্যাচের পরিস্থিতি সবদিক বিবেচনা করে ব্যাটারকে সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। যে ব্যাটারের পরিস্থিতি পরিবর্তনের ক্ষমতা বা পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য যত বেশি, তাকে তত বেশি দক্ষ ভাবা হয়। আর এই সবগুলো গুণ মিলেই তৈরি হয় গেম অ্যাওয়ারনেস।
‘গেম অ্যাওয়ারনেস’ ব্যাপারটার সঙ্গে সামর্থ্যের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু মাঠের ক্রিকেটে সামর্থ্যের প্রতিফলন ঘটাতে হলে গেম অ্যাওয়ারনেস থাকাটা জরুরি। যেটার ঘাটতি বাংলাদেশের প্রায় ব্যাটারদের মধ্যে দেখা যায়। এমনকি প্রায় দেড় যুগ ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা মুশফিক-মাহমুদুল্লাহদের মধ্যেও সেটার অভাব বোধ হয়। শারজায় প্রথম ওয়ানডেতে রশিদ খানের গুগলিতে যেভাবে বোল্ড হয়েছেন মাহমুদুল্লাহ, সেটা দেখে বোঝার উপায় নেই যে তিনি ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে আছেন। অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা গুগলিতে ভুল করেন তিনি। লেগ স্পিন ভেবে সামনের পায়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে মাহমুদুল্লাহর ব্যাট আর প্যাডের ফাঁক দিয়ে বল চলে যায় স্টাম্পে। চোখে সর্ষেফুল দেখা মাহমুদুল্লাহকে অনুসরণ করেছেন মুশফিকও। সাম্প্রতিক সময়ে মুশফিকের আলোচিত এক শটের নাম রিভার্স সুইপ। এই শটের সঙ্গে তার এতটাই প্রেম, যেন তার জন্য নিজেকেও বারংবার বিলিয়ে দিতে রাজি তিনি। একাধিক টেস্ট ম্যাচে দলের বাজে পরিস্থিতির মধ্যেও অতি বিলাসী এই শট খেলতে গিয়ে আত্মহত্যা করেছেন মুশফিক। অথচ তার মতো একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের কাছ থেকে গেম অ্যাওয়ারনেসটা সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশিত।
অবশ্য প্রথম ওয়ানডেতে মুশফিক রিভার্স সুইপ করার মতো সুযোগ পাননি তেমন। গাজানফারের ক্যারম বল অন্ধের মতো পড়েছেন মুশফিক! অফ স্পিন ভেবে সামনে পা এগিয়ে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন, তাতে লাইন মিস করেন। তবে ক্রিজে পা রাখার আগেই উইকেট ভাঙতে ভুল করেননি উইকেটকিপার ইকরাম আলিখিল। যেভাবে আউট হয়েছিন মুশি সেটা ১৮ বছরের একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের সঙ্গে একেবারেই বেমানান। অবিশ্বাস্য বাজে হারের পর কষ্ট নিয়ে টাইগার ভক্ত কোরবান আলী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘একদল বেহায়া ক্রিকেট খেলে। আর একদল বেহায়া সমর্থক (আমরা) তাদের খেলা দেখি।’ আপসোস করে সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক আরিফুর রহমান বাবু লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে ক্রিকেট এখন আর খেলা নেই। পণ্য। অনেকেই ক্রিকেটকে পণ্য বানিয়ে ব্যবসার পসরা সাজিয়ে বসেছেন। তাই এ বেহাল অবস্থা।’ রাজীব হাসান নামের একজন লিখেছেন, ‘ক্রিকেট টিমে ক্রিকেটার খেলার কথা। বাংলাদেশ টিমে খেলে এক দল বেহায়া’।
চরম ব্যাটিং বিপর্যয় থেকে আফগানিস্তানের ২৩৫ রান করতে পারাকে ইঙ্গিত করে সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক তারেক মাহমুদ লিখেছেন, ‘৩৫/৪ থেকে ২৩৫ করতে পারাটা সক্ষমতা। ১২০/২ থেকে ১৪৩-এ অলআউট হয়ে যাওয়াটা সামর্থ্য।’ আরেক সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক সাইদুর রহমান শামীম বলেন, ‘প্যাথেটিক!! রিয়ালি প্যাথেটিক। জাতীয় দলের বেহাল দশা, দিন কে দিন পারফরম্যান্স তলানিতে। বাংলাদেশ কোন অ্যাসোসিয়েট মেম্বারদের চেয়ে ভালো দল, এটা আর বলার উপায় নেই।’ রফিক রাফি নামের একজন লিখেছেন, ‘ক্রিকেট দলে সংস্কার অতি জরুরী’।