ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১

একই কাতারে বাংলাদেশ ও ভারত!

জাহিদুল আলম জয়

প্রকাশিত: ০০:০৯, ৬ নভেম্বর ২০২৪

একই কাতারে বাংলাদেশ ও ভারত!

ব্যর্থতায় বেহাল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল

এবার বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ২২ বছর আগে ঢাকার দুঃসহ স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ দল। ২০০২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ইনিংস ও ৩১০ রানে হেরেছিল টাইগাররা। স্বাগতিকরা প্রথম ইনিংসে ১৩৯ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর ক্যারিবিয়রা ৫৩৬ রান করে। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ থামে ১৩৯ রানে। সেই দীর্ঘ সময় পর এবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ইনিংস ও ২৭৩ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। ফলে দুই টেস্টের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে হেরে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে।

ম্যাচের তৃতীয় দিনেই টানা দ্বিতীয় জয় নিশ্চিত করে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের ৬ উইকেটে ৫৭৫ রানের জবাবে লাঞ্চ বিরতির কিছু পরেই কাগিসো রাবাদার পেস তোপে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ থামে ১৫৯ রানে। আর দ্বিতীয় ইনিংসে কেশব মহারাজ ও সেনুরান মুথুসামির স্পিন দাপটে গুটিয়ে যায় মাত্র ১৪৩ রানে। একদিনেই ১৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয় পায়। 
ম্যাচের দ্বিতীয় দিনই বাংলাদেশকে কোণঠাসা করে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৬ উইকেটে ৫৭৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করে সফরকারীরা এবং বাংলাদেশ দিনশেষে করে ৪ উইকেটে ৩৮। সেখান থেকে তৃতীয় দিন সকালে রাবাদার পেসে আউট হয়ে যান নাজমুল হোসেন শান্ত ৯, মেহেদি হাসান মিরাজ ১ ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ০। ক্যারিয়ারে ১৬তম ৫ উইকেট শিকারের গৌরব দেখান রাবাদা। মাঝে ডেন প্যাটারসন সাজঘরে পাঠান মুশফিকুর রহিমকে ০ রানে। তাই চরম বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ ৪৮ রানে ৮ উইকেট খুইয়ে। এরপরই মুমিনুল-তাইজুল নবম উইকেটে ১০৩ রানের রেকর্ড জুটি গড়েন। নবম উইকেটে এটি বাংলাদেশের টেস্টে চতুর্থ  সেরা জুটি।

তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেরা। এর আগে ২০০৮ সালে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ব্লুমফন্টেইনে ৬০ রানের নবম উইকেট জুটি গড়েন মুশফিক ও শাহাদাত হোসেন। মুমিনুল ক্যারিয়ারের ২০তম ফিফটি হাঁকান। তিনি শেষ পর্যন্ত ১১২ বলে ৮ চার, ২ ছক্কায় ৮২ রানে সাজঘরে ফেরেন। তাইজুলও ৯৫ বলে ১ চারে ৩০ রানে বিদায় নেন। রাবাদা ৫টি এবং কেশব মহারাজ ও ডেন প্যাটারসন ২টি করে উইকেট নেন। ১৫৯ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। ৪১৬ রানে পিছিয়ে থেকে ফলোঅনে পড়া বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে নেমেও বিপর্যস্ত হয়েছে। টপঅর্ডারদের ব্যর্থতায় ৪৭ রানেই বিদায় নেন শীর্ষ ৫ ব্যাটার। এবার দুই স্পিনার সেনুরান মুথুসামি ও কেশব মহারাজের ঘূর্ণিতে বেসামাল হয়েছে বাংলাদেশ। 
এটাই টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় জয়। এর আগেও তাদের সবচেয়ে বড় জয়টি ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষেই। ২০১৭ সালে ব্লুমফন্টেইনে তারা বাংলাদেশকে ইনিংস ও ২৫৪ রানে হারিয়েছিল। চট্টগ্রাম টেস্টের এই হারে ২ ম্যাচের সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। মিরপুরে সিরিজের প্রথম টেস্টে ৭ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। এমন লজ্জার পর এবার আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ানডে চ্যালেঞ্জ টাইগারদের। শারজাহতে আজ শুরু হচ্ছে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। বাকি দুটি ম্যাচ হবে ৯ ও ১১ নভেম্বর।

এই মুহূর্তে সিরিজ নিয়েই ভাবছেন তাওহিদ হৃদয়। কারণ কিছুদিন আগেই শারজায় আফগানরা ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। আর সম্প্রতি সময়টা একেবারেই ভালো যাচ্ছে না বাংলাদেশের। তাওহিদ বলেছেন, ‘আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে এখন কথা বলতে চাচ্ছি না। সামনে যেহেতু আমাদের একটা খেলা আছে, এই ব্যাপারটাতেই মনোযোগ দিতে চাচ্ছি। আশা করি, ভালোভাবে শুরু করতে পারব। বরাবরই এই সংস্করণে আমরা ভালো খেলে থাকি। এবারও অবশ্যই ভালোভাবে শুরু করতে চাই। আমাদেও যে সামর্থ্য আছে, সে অনুযায়ী যদি  খেলতে পারি, ভালো কিছু হবে ইনশাআল্লাহ।’ 
অন্যদিকে ২৪ বছর পর ঘরের মাটিতে ‘হোয়াইটওয়াশ’ হয়েছে রোহিত শর্মার ভারত। ওয়াংখেড়ে টেস্টে ২৫ রানের দারুণ জয়ে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে সফরকারী কিউইরা, জন্মস্থান মুম্বাইয়ে ১১ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা নিউজিল্যান্ড স্পিনার এজাজ প্যাটেল, বোলারদের দাপটের সিরিজে ২৪৪ রান করে সিরিজসেরা উইল ইয়াং। ভারতের এমন লজ্জায় অবাক হয়েছে ক্রিকেট দুনিয়া। সবশেষ ২০০০ সালে নিজ আঙিনায় শচীন টেন্ডুলকর-সৌরভ গাঙ্গুলীরা দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে যে সিরিজে ‘হোয়াইটওয়াশ’ হয়েছিলেন, সেটি ছিল দুই টেস্টের, ২-০ ব্যবধানে।

এবার ৩-০, নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এমন লজ্জায় ভারত আগে কখনো পরেনি! অন্যদিকে ব্যবধান প্রথমবার ভারতের মাটিতে সিরিজ জয়ের মাহাত্ম্য অনন্য উচ্চতায় তুলে নিল টম লাথামের নিউজিল্যান্ড। মুম্বাইয়ে লজ্জা এড়ানোর কঠিন লড়াইয়ে ১৪৭ রানের জয়ের লক্ষ্যে তৃতীয় দিনে ১২১ রানে অলআউট রোহিতরা হেরে গেছে ২৫ রানে। প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকরা গুটিয়ে গিয়েছিল ২৬৩ রানে। জন্মস্থান মুম্বাইয়ে ১১ উইকেট (৫/১০৩ ও ৬/৫৭) নিয়ে ম্যাচসেরা কিউই বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেল। ব্যাটারদের জন্য কঠিন এ সিরিজে ২ হাফ সেঞ্চুরিতে প্রায় ৪৯ গড়ে ২৪৪ রান করে সিরিজসেরা উইল ইয়াং এই টেস্টেও খেলেছেন ৭১ ও ৫১ রানের দারুণ দুটি ইনিংস।
১৯৮৮ সালে জন্ম মুম্বাইয়ের এক গুজরাটি মুসলিম পরিবারে জন্ম এজাজ প্যাটেলের। জীবন এরপর তাকে নিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ডে। টেস্ট ইতিহাসের তৃতীয় বোলার হিসেবে ইনিংসে ১০ উইকেটে সবকটি নিয়েছিলেন মুম্বাইর এই মাঠেই। ২০২১ সালে সেই ম্যাচে ১৪ শিকারের পরও হেরেছিল তার দল। এবার ১১ উইকেট নিয়ে ৩৬ বছর বয়সী স্পিনার কিউইদের উপহার দিলেন অবিস্মরণীয় এক জয়। ইয়ান বোথামকে (২২ উইকেট) পেছনে ফেলে সফরকারী বোলারদের মধ্যে ওয়াংখেড়ের সফলতম বোলার এখন তিনিই।

শেষ ইনিংসে নিউজিল্যান্ড ও ইতিহাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেবল ঋষভ পন্থ। ৫৭ বলে ৬৪ রান করা ক্রেজী এ উইলোবাজকে বিদায় করে কিউইদের উল্লাসে মাতিয়েছেন এজাজ। হাতে প্রায় তিনদিন, ১৪৭ রান নিশ্চয়ই বড় কোনো লক্ষ্য নয়। কিন্তু টার্নিং উইকেটে আরও একবার খাবি খেয়েছে মোড়ল দেশটির ব্যাটাররা। 
এই প্রথম ঘরের মাঠে ভারত দুইশর কম রানের লক্ষ্য তাড়া করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর আগে প্রথম টেস্টে মাত্র ৪৬ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। আর দ্বিতীয় ম্যাচে এক ইনিংসেও আড়াইশ ছুঁতে পারেনি। সিরিজজুড়ে এমন বিবর্ণ পারফরম্যান্সের পর তাই কোনো অজুহাত দেননি ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তিনি বলেন, সিরিজ হেরে যাওয়া,  টেস্ট ম্যাচ হেরে যাওয়া কখনো সহজ নয়। এটি এমন কিছু, যা সহজে হজম হয় না। তবে হ্যাঁ, আমরা নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলিনি। আমরা তা জানি এবং মানি।

সিরিজজুড়ে আমাদের চেয়ে ভালো খেলেছে নিউ জিল্যান্ড। আমরা পুরো সিরিজে অনেক ভুল করেছি। আমাদের এটা মানতে হবে।  প্রথম ও দ্বিতীয় টেস্টে আমরা প্রথম ইনিংসে যথেষ্ট রান করতে পারিনি। ম্যাচে অনেক পিছিয়ে ছিলাম। মুম্বাই টেস্টে মনে হচ্ছিল কিছুটা এগিয়ে আছি। লক্ষ্যটা তাড়া করার মতো ছিল। প্রয়োগটা ঠিকঠাক করতে হতো। যেখানে আমরা দল হিসেবে ব্যর্থ হয়েছি।
রোহিত আরও বলেন, যখন এরকম লক্ষ্য তাড়া করবেন  বোর্ডে রান দেখতে চাইবেন। আমার মাথায় এটিই কাজ করছিল। সফল হইনি। আর সফল না হলে এটি ভালো  দেখায় না। নির্দিষ্ট ভাবনা, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আমি ব্যাটিং করতে চাই। কখনো কখনো ফল আসে না। এই সিরিজেও আসেনি। যা নিয়ে আমি খুবই হতাশ। অধিনায়ক হিসেবেও দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে আমি সেরা অবস্থায় ছিলাম না এবং ব্যাট হাতেও। ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে এটিই আমার ভাবনা।

×