ছবি: সংগৃহীত
গত বছরের ১৯ নভেম্বর আহমেদাবাদে বিশ্বকাপ ফাইনালের পর এই প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমেছেন প্যাট কামিন্স। আর পাকিস্তান দলটিই ওয়ানডে খেলতে নেমেছে ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বরের পর এই প্রথম।
প্রায় এক বছর পর ৫০ ওভারের ম্যাচ খেলতে নেমে জিতেছেন শেষ পর্যন্ত কামিন্সই। পাকিস্তানের ২০৩ রান তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া একপর্যায়ে হারের হারের শঙ্কায় পড়লেও সেখান থেকে উদ্ধার করেছেন ব্যাটসম্যান কামিন্স। খেলেছেন দলকে তিরে ভেড়ানো ৩১ বলে ৩২ রানের অপরাজিত ইনিংস।
মেলবোর্নে পাকিস্তানকে ২ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে।২০৪ রানের লক্ষ্য হলেও রিজওয়ানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান বেশ চাপে রাখে অস্ট্রেলিয়াকে। শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের ৩১ বলে ৩২ রানের কার্যকরী ইনিংসেই অস্ট্রেলিয়া ২ উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয় পেয়েছে। স্বাগতিকেরা জিতেছে ৯৯ বল হাতে রেখে। তাতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার মাঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭ বছর পর জয়ের কাছাকাছি গিয়েও জিততে পারল না পাকিস্তান। ২০১৭ সালে মেলবোর্নেই ওয়ানডেতে পাকিস্তান ৬ উইকেটে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে।
রান তাড়া করতে নেমে প্রথাগত ওয়ানডে মেজাজেই খেলতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। তাতেই শুরুতে বেকায়দায় পড়ে স্বাগতিকেরা। ৪ ওভারে ২ উইকেটে ২৮ রানে পরিণত হয় অস্ট্রেলিয়া। ওপেনার ম্যাথু শর্ট আউট হয়েছেন ১ রানে। জেক ফ্রেজার ম্যাকগার্ক অতি আক্রমণাত্মক হতে গিয়েই উইকেটটা খুইয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার এই তরুণ ওপেনার ১৪ বলে করেন ১৬ রান।
অস্ট্রেলিয়া তৃতীয় উইকেট হারাতে পারত ৫৪ রানেই। নবম ওভারের তৃতীয় বলে নাসিম শাহকে কাট করতে যান জশ ইংলিস। গালি এলাকায় দ্রুত গতিতে আসা বল হাত ফসকে বেরিয়ে যায় ওয়ানডেতে অভিষিক্ত ইরফান খান। প্রথম পাওয়ারপ্লেতে অস্ট্রেলিয়া করেছে ২ উইকেটে ৬১ রান।
তৃতীয় উইকেটে স্টিভ স্মিথের সঙ্গে ৭৫ বলে ৮৫ রানের জুটি গড়তে অবদান রাখেন ইংলিশ। এই জুটি ভেঙেছেন হারিস রউফ। ১৭তম ওভারের তৃতীয় বলে হারিসকে আপার কাট করতে যান স্মিথ। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে লাফ দিয়ে দারুণ ক্যাচ ধরেন ওয়ানডেতে আরেক অভিষিক্ত পাকিস্তানি ক্রিকেটার সাইম আইয়ুব। ৪৬ বলে ৬ চারে ৪৪ রান করেন স্মিথ।
তৃতীয় উইকেটের জুটি ভাঙার পর আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়া। চতুর্থ উইকেটে ১৯ বলে ২৬ রানের জুটি গড়েন ইংলিস ও মারনাস লাবুশানে। এই জুটি ভাঙতে যতটা না কৃতিত্ব শাহিন শাহ আফ্রিদির, তাঁর চেয়ে বেশি ইরফানের। ইংলিসের পুল করা বল অনেকটা দৌড়ে এসে ডিপ মিড উইকেটে তালুবন্দী করেন ইরফান। ৪২ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৯ রান করেন ইংলিস। এখান থেকেই অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে ভাঙন ধরা শুরু। ৪ উইকেটে ১৩৯ রান থেকে মুহূর্তেই ৬ উইকেটে ১৩৯ রানে পরিণত হয় অজিরা। যেখানে ২১তম ওভারের প্রথম দুই বলে লাবুশানে ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ফেরান রউফ।
হাতে প্রয়োজনীয় ওভার থাকলেও পাকিস্তানের আক্রমণাত্মক বোলিংয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। ২৬তম ওভারের প্রথম বলে অ্যারন হার্ডিকে দুর্দান্তভাবে বোল্ড করেন মোহাম্মদ হাসনাইন। ১৯ বলে ১০ রান করে হার্ডি আউট হলে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর হয়ে যায় ২৫.১ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫৫ রান। ৯ নম্বরে নেমে কামিন্স নিজের প্রথম বলেই চার মারেন। অষ্টম উইকেটে শন অ্যাবটের সঙ্গে ২৭ বলে জুটি গড়তে অবদান রাখেন কামিন্স। অ্যাবট (১৩) রানআউটের ফাঁদে কাঁটা পড়লে অস্ট্রেলিয়া পরিণত হয় ২৯.৪ ওভারে ৮ উইকেটে ১৮৫ রান। হাতে ১২২ বল থাকলেও ১৯ রান তখন অনেক কঠিন মনে হচ্ছিল। সেখান থেকে ঠাণ্ডা মাথায় ১৯ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটি গড়েন কামিন্স ও স্টার্ক। যেখানে ১০ নম্বরে নেমে ১২ বলে ২ রান করে স্টার্ক যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন কামিন্স। ৩৪তম ওভারের প্রথম বলে হাসনাইনকে স্ট্রেইট ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে চার মেরে স্কোর লেভেল করেন কামিন্স। এই ওভারের তৃতীয় বলেই কামিন্স জয়সূচক রান পয়েন্টে ঠেলে নিয়েছেন।
ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সেরা বোলার মিচেল স্টার্কই হয়েছেন ম্যাচসেরা। ১০ ওভার বোলিং করে ৩৩ রান খরচ করে ৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ৩ ওভার মেডেনও দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার এই বাঁহাতি পেসার।
এর আগে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক কামিন্স। টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং পেয়ে ৪৬.৩ ওভারে ২০৩ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেন রিজওয়ান। তিনি একই সঙ্গে দলটির উইকেটরক্ষকের দায়িত্বও পালন করছেন। ৭১ বলের ইনিংসে মেরেছেন ২ চার ও ১ ছক্কা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪০ রান করেন নাসিম। ৩৯ বলের ইনিংসে মেরেছেন ৪ ছক্কা ও ১ চার।
তাবিব