ভারতের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয় নিশ্চিত করার পর নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটারদের বুনো উদযাপন
এ কি ভারতের লজ্জা, না নিউজিল্যান্ডের ইতিহাস? উত্তর, দুটোই! ২৪ বছর পর ঘরের মাটিতে ‘হোয়াইটওয়াশ’ রোহিত শর্মার দল। সর্বশেষ ২০০০ সালে নিজ আঙিনায় শচীন টেন্ডুলকর-সৌরভ গাঙ্গুলীরা দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে যে সিরিজে ‘হোয়াইটওয়াশ’ হয়েছিলেন, সেটি ছিল দুই টেস্টের, ২-০ ব্যবধানে। এবার ৩-০, নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এমন লজ্জায় ভারত আগে কখনো পড়েনি! অন্যদিকে ব্যবধান প্রথমবার ভারতের মাটিতে সিরিজ জয়ের মাহাত্ম্য অনন্য উচ্চতায় তুলে নিল টম লাথামের নিউজিল্যান্ড। মুম্বাইয়ে লজ্জা এড়ানোর কঠিন লড়াইয়ে ১৪৭ রানের জয়ের লক্ষ্যে রবিবার তৃতীয় দিনে ১২১ রানে অলআউট রোহিতরা হেরে গেছে ২৫ রানে। প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকরা গুটিয়ে গিয়েছিল ২৬৩ রানে। জন্মস্থান মুম্বাইয়ে ১১ উইকেট (৫/১০৩ ও ৬/৫৭) নিয়ে ম্যাচসেরা কিউই বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেল। ব্যাটারদের জন্য কঠিন এ সিরিজে ২ হাফ সেঞ্চুরিতে প্রায় ৪৯ গড়ে ২৪৪ রান করে সিরিজসেরা উইল ইয়াং এই টেস্টেও খেলেছেন ৭১ ও ৫১ রানের দারুণ দুটি ইনিংস।
১৯৮৮ সালে জন্ম মুম্বাইয়ের এক গুজরাটি মুসলিম পরিবারে জন্ম এজাজ প্যাটেলের। জীবন এরপর তাকে নিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ডে। টেস্ট ইতিহাসের তৃতীয় বোলার হিসেবে ইনিংসে ১০ উইকেটে সবকটি নিয়েছিলেন মুম্বাইর এই মাঠেই। ২০২১ সালে সেই ম্যাচে ১৪ শিকারের পরও হেরেছিল তার দল।
এবার ১১ উইকেট নিয়ে ৩৬ বছর বয়সী স্পিনার কিউইদের উপহার দিলেন অবিস্মরণীয় এক জয়। ইয়ান বোথামকে (২২ উইকেট) পেছনে ফেলে সফরকারী বোলারদের মধ্যে ওয়াংখেড়ের সফলতম বোলার এখন তিনিই। শেষ ইনিংসে নিউজিল্যান্ড ও ইতিহাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেবল ঋষভ পন্থ। ৫৭ বলে ৬৪ রান করা ক্রেজি এ উইলোবাজকে বিদায় করে কিউইদের উল্লাসে মাতিয়েছেন এজাজ। হাতে প্রায় তিনদিন, ১৪৭ রান নিশ্চই বড় কোনো লক্ষ্য নয়। কিন্তু টার্নিং উইকেটে আরও একবার খাবি খেল মোড়ল দেশটির ব্যাটাররা। প্রথম ওভারেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ম্যাট হেনরিকে চার মারেন রোহিত (১১ বলে ২ চারে ১১), পরের ওভারে এজাজকে রিভার্স সুইপে। তবে অতি আগ্রাসন ডেকে আনে তার পতন। হেনরির অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বল তুলে মারতে গিয়ে উইকট বিলিয়ে স্বাগতিক ফেরেন অধিনায়ক। এরপর এজাজের ছোবলে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ভারতের ব্যাটিং অর্ডার। বল ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হন শুবমান গিল (৪ বলে ১)।
স্লিপে ড্যারিল মিচেলের দারুণ ক্যাচে বিরাট কোহলি (৭ বলে ১) ফেরেন এক রানে। আগ্রাসনের চেষ্টায়ই এজাজের ফুল টসে ক্যাচ দিয়ে বসেন সারফারাজ খান (২ বলে ১)। মাঝে জয়সওয়ালকে (১৬ বলে ৫) ফেরান গ্লেন ফিলিপস। ভারত ৫ উইকেট হারায় ২৯ রানে। এরপরই শুরু পন্থের স্বভাসুলভ পাল্টা আক্রমণ। ক্রিজে এসেই জোড়া ছক্কা। চাপের মধ্যেও খেলেন দারুণ সব শট। এ পর্যায়ে এজাজের বল লেগেছিল তার প্যাডে। আম্পায়ার আউট দেননি। তবে পরে দেখা যায়, রিভিউ নিলেই আউট হতেন পন্থ। ২১ রানে রক্ষা পাওয়া সেই পন্থ ম্যাচ প্রায় বের করে নিচ্ছিলেন। লাঞ্চের পর রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরান এজাজ। ভারতের জয়ের জন্য তখন চাই ৪১ রান। ওয়াশিংটন সুন্দর ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মতো অলরাউন্ডার তখনো ক্রিজে। কিন্তু গ্লেন ফিলিপসকে সুইপের চেষ্টায় বিদায় নেন অশ্বিন (২৯ বলে ৮)। পরের বলেই দারুণ টার্নে আকাশ দিপকে (১ বলে ০) বোল্ড করেন ফিলিপস। ভারতের শেষ ভরসা ওয়াশিংটনকে (২৫ বলে ১২) বোল্ড করে ম্যাচ শেষ করে দেন মুম্বাইর ছেলে এজাজ!
স্কোর: নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস ২৩৫/১০ (৬৫.৪ ওভার; লাথাম ২৮, ইয়াং ৭১, মিচেল ৮২, ফিলিপস ১৭; সুন্দর ৪/৮১, জাদেজা ৫/৬৫) ও দ্বিতীয় ইনিংস ১৭৪/১০ (৪৫.৫ ওভার; কনওয়ে ২২, ইয়াং ৫১, মিচেল ২১, ফিলিপস ২৬, হেনরি ১০; আশ্বিন ৩/৬৩, জাদেজা ৫/৫৫)।
ভারত প্রথম ইনিংস ২৬৩/১০ (৫৯.৪ ওভার; জয়সওয়াল ৩০, রোহিত ১৮, গিল ৯০, পন্থ ৬০, সুন্দর ৩৮; এজাজ ৫/১০৩) ও দ্বিতীয় ইনিংস ১২১/১০ (২৯.১ ওভার; রোহিত ১১, কোহলি ১, পন্থ ৬৪, সুন্দর ১২; এজাজ ৬/৫৭, ফিলিপস ৩/৪২)।
ফল ॥ নিউজিল্যান্ড ২৫ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা ॥ এজাজ প্যাটেল (নিউজিল্যান্ড)
সিরিজ ॥ ৩ টেস্টের সিরিজ নিউজিল্যন্ড ৩-০ ব্যবধানে জয়ী
সিরিজ সেরা ॥ উইল ইয়াং (নিউজিল্যান্ড)।