ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের আনন্দ কিউইদের
মুম্বাইয়ে ২৫ রানের হারের মধ্য দিয়ে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে ভারত। সর্বোপরি এই প্রথম নিজ আঙিনায় কোন দলের কাছে ৩-০ ব্যবধানে হারল মোড়ল দেশটি। অন্যদিকে শুধু ভারতে নয়, ঘরে-বাইরে মিলিয়ে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসেই এই প্রথম তিন ম্যাচের কোন সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করল কিউইরা। তাও আবার বড় তারকা কেন উইলিয়ামসনকে ছাড়া। তিন টেস্টের ৬ ইনিংসে কার্যত ব্যাটিং ব্যর্থতাই ডুবিয়েছে রোহিত শর্মাদের। বিপরীতে ব্যাটে-বলে কিউইদের উড়িয়েছেন এজাজ প্যাটেল, উইল ইয়াংরা।
‘গত তিন দিনে তো বটেই, গত তিন সপ্তাহ ধরে যা ঘটেছে সেটার জন্য আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আপনি যদি আমাকে সফরের শুরুতে জিজ্ঞাসা করতেন, এই অবস্থানে থাকতে পছন্দ করতাম কিনা... এখন এই পর্যন্ত আসা এবং আমরা যে ক্রিকেট খেলেছি তা সত্যিই বিশেষ কিছু। আমি এই দলের জন্য সত্যিই গর্বিত।’ মুম্বাইয়ে আজ (রবিবার) অবিস্মরনীয় জয়ের পর বলছিলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম লাথাম।
‘আমার দৃষ্টিকোণ থেকে এই দলকে নেতৃত্ব দেওয়া… নিউজিল্যান্ডকে নেতৃত্ব দেওয়া সবসময়ই গর্বের মুহূর্ত। আমি মনে করি, এখানে আসা এবং প্রথমবার স্থায়ী অধিনায়ক হওয়া ও এই অবস্থানে থাকা সত্যিই বিশেষ কিছু।’ যোগ করেন সাদা পোশাকের কিউই অধিনায়ক।
তিনি বলেন,‘তবে আমার কাছে, এটা কেবল আমার ব্যাপার নয়, এটা দলের ব্যাপার এবং হ্যাঁ, দল কাজটা করেছে। দিন শেষে, যখন প্রয়োজন তখন প্রত্যেকে একত্র হয় এবং এটিই একটি দলগত খেলার সৌন্দর্য। নির্দিষ্ট দিনে সবাই ভালো করবে না, কিন্তু ছেলেরা প্রয়োজনের সময় এগিয়ে আসে। পুরো সিরিজে ছেলেরা নির্দিষ্ট সময়ে এগিয়ে এসেছিল, যা নিয়ে আমি সত্যিই গর্বিত।’
ঘরের মাঠে ১২ বছরে কোনো টেস্ট সিরিজ না হারার আত্মবিশ্বাস নিয়ে নিউজিল্যান্ড সিরিজ শুরু করেছিল ভারত। নিজ আঙিনা যাদের দুর্গ, দেশের মাঠে যারা অপ্রতিরোধ্য ও অপরাজেয়, সেই দলকে বেঙ্গালুরুতে অবাক করে দিয়ে ৮ উইকেটে হারিয়ে দেয় নিউ জিল্যান্ড। গড়ে ভারতের মাটিতে ৩৬ বছর পর টেস্ট জয়ের কীর্তি।
ওই জয়ে আত্মবিশ্বাস যেন তুঙ্গে উঠে যায় সফরকারীদের। পুনেতে স্বাগতিকদের স্তব্ধ করে দিয়ে তারা জয় পায় ১১৩ রানে। প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের কীর্তি গড়ে তারা। সিরিজ শুরুর আগে যা ছিল অনেক দূরের কল্পনা, সেটাই বাস্তব করে দেখায় কিউইরা। মুম্বাইয়ে শেষ ম্যাচে উপহার দেয় আরও বড় বিস্ময়। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের টেস্টটি তারা জিতে নেয় ২৫ রানে। ভারতকে দেয় ঘরের মাঠে প্রথমবার তিন বা এর বেশির টেস্টের সিরিজে হোয়াইটওয়াশডের তেতো স্বাদ। বিষয়টা যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না লাথামের।
এই প্রথম ঘরের মাঠে দুইশর কম রানের লক্ষ্য তাড়া করতে ব্যর্থ ভারত। এর আগে প্রথম টেস্টে মাত্র ৪৬ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। আর দ্বিতীয় ম্যাচে এক ইনিংসেও আড়াইশ ছুঁতে পারেনি তারা। সিরিজজুড়ে এমন বিবর্ণ পারফরম্যান্সের পর তাই কোনো অজুহাত দেননি রোহিত,‘সিরিজ হেরে যাওয়া, টেস্ট ম্যাচ হেরে যাওয়া কখনও সহজ নয়। এটি এমন কিছু, যা সহজে হজম হয় না। তবে হ্যাঁ, আমরা নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলিনি। আমরা তা জানি এবং মানি। সিরিজজুড়ে আমাদের চেয়ে ভালো খেলেছে নিউজিল্যান্ড। আমরা পুরো সিরিজে অনেক ভুল করেছি। আমাদের এটা মানতে হবে।’হতাশ ভারত অধিনায়ক বলেন,‘প্রথম ও দ্বিতীয় টেস্টে আমরা প্রথম ইনিংসে যথেষ্ট রান করতে পারিনি এবং ম্যাচে অনেক পিছিয়ে ছিলাম। এই ম্যাচে ৩০ (আসলে ২৮) রানের লিড পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, কিছুটা এগিয়ে আছি। লক্ষ্যটা তাড়া করার মতো ছিল। প্রয়োগটা ঠিকঠাক করতে হতো, যেখানে আমরা দল হিসেবে ব্যর্থ হয়েছি।’ সিরিজে দলীয় ব্যর্থতার পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও পুরোপুরি নিষ্প্রভ ছিলেন রোহিত। প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫২ রান ছাড়া আর একবারও বিশ ছুঁতে পারেননি ভারত অধিনায়ক। সব মিলিয়ে মাত্র ১৩ গড়ে তিনি করেন ৯১ রান।
সবশেষ মুম্বাই টেস্টে ছোট লক্ষ্য তাড়ায় দুই চারে ১১ বলে ১১ রান করে ফেরেন রোহিত। ম্যাট হেনরির বলে নিজের প্রিয় শট পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন তিনি। রান তাড়ায় নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল জানিয়ে নিজের ব্যর্থতা মেনে নেন রোহিত,‘যখন এরকম লক্ষ্য তাড়া করবেন, বোর্ডে রান দেখতে চাইবেন। আমার মাথায় এটিই কাজ করছিল। সফল হইনি। আর সফল না হলে এটি ভালো দেখায় না। নির্দিষ্ট ভাবনা, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আমি ব্যাটিং করতে চাই। কখনও কখনও ফল আসে না। এই সিরিজেও আসেনি। যা নিয়ে আমি খুবই হতাশ। অধিনায়ক হিসেবেও দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে আমি সেরা অবস্থায় ছিলাম না এবং ব্যাট হাতেও। ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে এটিই আমার ভাবনা।’
মিরাজ