ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

সাবিনা-রূপনা-বাটলার যেখানে সবার চেয়ে এগিয়ে...

রুমেল খান

প্রকাশিত: ০০:০৫, ২ নভেম্বর ২০২৪

সাবিনা-রূপনা-বাটলার যেখানে সবার চেয়ে এগিয়ে...

.

সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপকে বলা হয় ‘দক্ষিণ এশিয়ার নারী বিশ^কাপ ফুটবল।’ ২০১০ সাল থেকে আসরটির সূচনা। এ পর্যন্ত আসরটি অনুষ্ঠিত হয়েছে সাতবার। প্রথম আসরের সময় বাংলাদেশের নারী ফুটবল তখন বলতে গেলে ‘শিশু’-ই। তারপরও ওই আসরে তারা সেমিফাইনাল পর্যন্ত খেলেছিল। এরপর আরও ছয়বার অংশ নিয়েছে লাল-সবুজ বাহিনীরা। ২০১২ আসরে বিদায় নেয় গ্রুপ পর্ব থেকেই। ২০১৪ আসরে আবারও তারা শেষ চারে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। ২০১৬ আসরে তো ফাইনালই খেলে ফেলে। যদিও শক্তিশালী ভারতের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের। ২০১৯ আসরেও বিদায় নেয় সেমিফাইনাল খেলে। তারপর আসে ২০২২ সালের স্মরণীয় সেই আসর। সেবার তারা চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিজেদের ইতিহাসের সেরা সাফল্য কুড়িয়ে নেয়। এরপর ক’দিন আগেই সদ্যসমাপ্ত ২০২৪ আসরেও শিরোপা জিতে সেটা অক্ষুণœ রেখেছে। 
এই আসরের নানা পরিসংখ্যানের আলোকে বাংলাদেশের জন্য দুটি গর্বের জায়গা আছে। একটা হচ্ছে সাবিনা খাতুনকে নিয়ে। বর্ষীয়ান-তারকা এই ফরোয়ার্ড হচ্ছেন একমাত্র খেলোয়াড়, যিনি সাফে সর্বোচ্চ দুবার টুর্নামেন্ট সেরা হিসেবে ‘গোল্ডেন বল’ জিতেছেন (২০১৪ ও ২০২২ সালে)। এ যেন অনেকটা সর্বকালের সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির মতো। আর্জেন্টাইন এই ফুটবল জাদুকর একমাত্র ফুটবলার হিসেবে ফিফা বিশ^কাপে দুবার গোল্ডেন বল জিতেছেন। এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে- সাবিনার মতো মেসিও সেটা জিতেছেন ২০১৪ ও ২০২২ সালে! সর্বশেষ ২০২৪ আসরে সাবিনার সতীর্থ ঋতুপর্ণা চাকমা-ও এই পুরস্কারটি জিতেছেন। 
আরেকজন হচ্ছেন রূপনা চাকমা। বাংলাদেশের এই কৃতী গোলরক্ষক একমাত্র গোলরক্ষক হিসেবে সাফের আসরে সবচেয়ে বেশি ও টানা দুবার (২০২২ ও ২০২৪) সেরা গোলরক্ষক হিসেবে ‘গোল্ডেন গ্লাভ’ পেয়েছেন। অবশ্য প্রথম পাঁচ আসরে এই পুরস্কারটি ছিল না। 
আবারও সাবিনার প্রসঙ্গে আসা যাক। সাফের ইতিহাসে তিনিই প্রথম ও একমাত্র ফুটবলার, যিনি এক আসরে গোল্ডেন বুট ও গোল্ডেন বল পুরস্কার জিতেছেন। ২০২২ আসরে সাবিনা সর্বোচ্চ ৮ গোল করে গোল্ডেন বুট জেতেন। 
বাংলাদেশ এই আসরে দু’বার (২০১৯ ও ২০২২) ‘ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছে, যা সবার চেয়ে বেশি। একবার করে জিতেছে মালদ্বীপ (২০১৪), নেপাল (২০১৬) এবং ভুটান (২০২৪)। 
জাতীয় দলের জার্সিতে সাকিনার যে ৩৬ গোল, তার ২৬টিই তিনি করেছেন সাফে। যা এই আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ভারতের বালা দেবী ২৭ গোল করে আছেন শীর্ষে। এক আসরে সর্বোচ্চ ১৬ গোলও তার (২০১৪)। তবে ভিন্ন ভিন্ন আসরে টপ গোলস্কোরার হচ্ছেন নেপালের সাবিত্রা ভান্ডারি। তিনি ২০১৬ আসরে ১২ গোল এবং ২০১৯ আসরে ৪ গোল (ওই আসরে সমসংখ্যক গোল করেছিলেন ভারতের ইন্দুমাথি কাথিরেসান-ও) করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন।  
ভারতের শহীদ জব্বার কোচ হিসেবে সর্বোচ্চ দুবার দলকে শিরোপা এনে দিয়েছেন। সেটা ২০১০ ও ২০১২ সালে। বাংলাদেশের গোলাম রব্বানী ছোটনও (২০২২) ভারতের তরুণ রায় (২০১৪), সাজিদ ধর (২০১৬) ও মায়মল রকির (২০১৯) মতো একবার করে শিরোপা জিতেছেন। বাংলাদেশকে একবার শিরোপা জিতিয়েছেন পিটার বাটলার-ও (২০২৪)। তবে তিনি অন্যদের চেয়ে আলাদা। কেননা তিনিই একমাত্র ভিনদেশী কোচ (ব্রিটিশ)।  
সবচেয়ে বেশি শিরোপা জিতেছে ভারত, ৫ বার (২০১০, ২০১২, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৯)। সবচেয়ে বেশি ফাইনাল খেলেছে নেপাল, ৬ বার (২০১০, ২০১২, ২০১৪, ২০১৯, ২০২২ ও ২০২৪)। সবচেয়ে বেশি ফাইনালেও হেরেছে নেপাল, ৬ বার। তারা আবার সবচেয়ে বেশি টানা ৩ বার করে রার্নাসআপও হয়েছে। বাংলাদেশ একমাত্র দল, যারা একই প্রতিপক্ষকে টানা দুই আসরে তাদেরই মাটিতে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে। 
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে নেপাল, ৩২টি। তবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে জিতেছে ভারত (২৫)। সবচেয়ে বেশি ম্যাচে হেরেছে ভুটান (১৭)। সবচেয়ে বেশি ম্যাচ (২টি করে) ড্র করেছে ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তান। সবচেয়ে বেশি গোল ভারতের (১৫৭)। সবচেয়ে বেশি গোল হজম করেছে মালদ্বীপ (১০০)। সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট ভারতের (৭৭)। সবচেয়ে কম পয়েন্ট আফগানিস্তানের (৫)। সবচেয়ে বেশি স্বাগতিক দেশ হয়েছে নেপাল, ৩বার (২০১৯, ২০২২ ও ২০২৪)। বিদেশের মাটিতে সবচেয়ে বেশিবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত, ৩ বার (২০১০, ২০১২, ২০১৪)।

×