ট্রফি ও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার হাতে ঋতুপর্ণা চাকমা
দুই বছর আগে কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম শিরোপা জয়ের নজির গড়েছিল বাংলাদেশ। সেবার এই ট্রফি জয়ের নায়ক হিসেবে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছিলেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। বুধবার সেই দশরথ স্টেডিয়ামে একই প্রতিপক্ষ স্বাগতিক নেপালকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে টানা দুইবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরে লাল-সবুজের দেশটি। তবে এবার সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জয়ের নজির গড়েন তরুণ প্রতিভাবান মিডফিল্ডার ঋতুপর্ণা চাকমা।
তবে এই দিনটার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই অপেক্ষায় ছিলেন ঋতুপর্ণা চাকমা। সেজন্য কঠোর পরিশ্রম ও ঘাম ঝরিয়েছেন ২০ বছর বয়সী এই তারকা। এ প্রসঙ্গে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে তিনি লিখেন, ‘মনে মনে স্বপ্ন দেখতাম কোনো একদিন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হবো এবং সেভাবেই পরিশ্রম করে গেছি। অবশেষে পরিশ্রমের ফল পেলাম।’ তবে এবারই যে এশিয়ার সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়ে যাবেন তা খোদ ঋতুপর্ণাও ভাবতে পারেননি।
ফাইনাল জয়ের পরপরই এই প্রসঙ্গে তরুণীদের আইকন বাহারী চুলের ফুটবলকন্যা বলেন, ‘আমি ভাবতেই পারিনি, টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার পেয়ে যাব। দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, তাতে আমি অবদান রাখতে পেরে এমনিতেই ভালো লাগছে। সেই ভালো লাগা বলতে পারেন অনেকটা বেড়ে গেছে টুর্নামেন্ট সেরা হয়ে।’
টানা দুইবার সাফের শিরোপা জিতে দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের ফুটবলে এখন পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বাংলাদেশ। তবে টুর্নামেন্টের সপ্তম আসরের ফাইনালটা সহজ ছিল না মোটেও। কেননা আগের বার বাংলাদেশের কাছে শিরোপা হাতছাড়া করা নেপাল এবার মরিয়া ছিল প্রথমবার স্বপ্নের এই ট্রফিতে চুমো আঁকতে। কেননা ২০১০ সাল থেকে শুরু হওয়া সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সাত আসরের এটা যে তাদের ষষ্ঠ ফাইনাল! কিন্তু এবারও সেই পুরনো চিত্রনাট্য।
স্বাগতিক সমর্থকদের নিস্তব্ধ করে বাংলাদেশকে প্রথম এগিয়ে দেন মনিকা চাকমা। তবে খুব দ্রুতই গোল করে ম্যাচে ফিরে স্বাগতিক নেপাল। কিন্তু ম্যাচের বয়স যখন ৮১ মিনিট তখনই লাল সবুজের প্রতিনিধিদের জন্য ত্রাণকর্তা হয়ে আসেন ঋতুপর্ণা চাকমা। দুর্দান্ত এক গোল করে দলকে জেতানোর পাশাপাশি এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বও ধরে রাখলেন তিনি।
এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের এই টুর্নামেন্টে ভারতের মেয়েদের ছিল একক দাপট। কেননা প্রথম পাঁচ আসরের সবটিতেই যে চ্যাম্পিয়ন তারা। অর্থাৎ এই টুর্নামেন্টটিকে যেন একেবারেই নিজেদের বাপ-দাদাদের সম্পত্তিতে পরিণত করে ফেলেছিল ভারত। তবে গত শেষ দুই আসরেই নেপালকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়ে সাবিনা-চাকমারা। এ কীর্তি গড়ে ঋতুর্ণার উচ্ছ্বাসটা যেন একটু বেশিই। তবে দেশবাসীর দোয়া এবং আশীর্বাদ ছিল বলেই তা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সেজন্য এই ট্রফিটাও পুরো বাংলাদেশের বলেই মন্তব্য করেন ঋতু। তিনি বলেন, ‘দেশবাসীর দোয়া এবং ভালোবাসায় টানা দ্বিতীয়বার আমরা সাফের শিরোপা জিতেছি। সেজন্য অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা দেশ থেকে আমাদের জন্য দোয়া এবং আশীর্বাদ করেছেন। কেননা আপনাদের দোয়া এবং আশীর্বাদেই আমরা আজকে চ্যাম্পিয়ন। এই চ্যাম্পিয়ন ট্রফিটা শুধু আমাদের না পুরো বাংলাদেশের।’
গতবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর পুরো বাংলাদেশ মেতেছিল ট্রফি-উৎসবে। কিন্তু সেবার বিমানবন্দর থেকে ছাদখোলা বাসে করে বাফুফে ভবনে যাওয়ার পথে ল্যামপোস্টে মাথায় আঘাত পেয়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল ঋতুপর্ণা চাকমার। এবারের ছাদখোলা বাস উৎসবে তাই একটু বাড়তি সতর্ক ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা খেলোয়াড়। বড় ম্যাচের ফুটবলার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা ঋতুপর্ণার জীবনে ২০২২ সালে নেমে এসেছিল আঁধার।
ওই বছরের জুনে আদরের ছোট ভাই পার্বণ চাকমার মৃত্যুটি তাঁর জন্য বড় আঘাত হয়ে এসেছিল। এরপর সিনিয়র সাফ জেতার সঙ্গে যত কিছুই অর্জন করেছেন, প্রতিবারই প্রিয় ভাই পার্বণকে মনে করেছিলেন। এবারও হয়তো ব্যতিক্রম হয়নি সেমিফাইনাল ও ফাইনালে সমান একটি করে গোলকরা এই মাঝমাঠের শিল্পীর।