ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১

কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ পেয়েও ব্যর্থ ক্রিকেটাররা

বেতন না পেয়েও সফল সাবিনারা

রুমেল খান

প্রকাশিত: ২৩:২৯, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

বেতন না পেয়েও সফল সাবিনারা

বেতন না পেয়েও সফল সাবিনারা

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ফুটবল। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম ছিল না। অন্তত ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত। সে বছর আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জনের পর রাতারাতি এ দেশে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। বিপরীতে ধস নামে ফুটবলে। এজন্য অবশ্য বেশকিছু কারণ আছে। কিন্তু যদি দেশের ফুটবল ও ক্রিকেটের সাফল্যের তুলনা করা হয়, তাহলে পরিসংখ্যানের বিচারে দেখা যাবে ক্রিকেটের চেয়ে এগিয়ে আছে এখনো সেই ফুটবলই! কিন্তু তারপরও এই খেলাটিই এখনো অনেকক্ষেত্রে অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত।

জাতীয় দলের নারী ফুটবলাররা নিয়মিত বেতন পান না। দলের হেড কোচেরও বেতন বকেয়া থাকে মাস তিনেকের! অথচ বহু বছরের একটি পুরনো চিত্র হচ্ছেÑ কাড়ি কাড়ি অর্থ পেয়েও ক্রিকেটাররা ব্যর্থ চরমভাবে। 
সিনিয়র পর্যায়ে জাতীয় পুরুষ ফুটবল দল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ যেখানে একবার (২০০৩) জিতেছেন, সেখানে নারী জাতীয় ফুটবল দল সেই ট্রফি জিতেছে দুবার (২০২২ ও ২০২৪)। পুরুষ ফুটবল দল এসএ গেমস ফুটবলেও স্বর্ণপদক জিতেছে দুবার (১৯৯৯ ও ২০১০)। এ ছাড়া একবার প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ (১৯৮৯) এবং একবার জিতেছে চার জাতি আমন্ত্রণমূলক টাইগার ট্রফি (১৯৯৫)। 
এর বিপরীতে বাংলাদেশ জাতীয় পুরুষ ক্রিকেট দল কোন বৈশ্বিক ট্রফি দূরে থাক, এশিয়া কাপের মতো কোন আঞ্চলিক ট্রফিও জিততে পারেনি! তবে এশিয়া গেমস ক্রিকেট একবার (২০১০) ও এসএ গেমসে দুবার (২০১০ ও ২০১৯) স্বর্ণপদক জিতেছে। ১৯৮৬ সালে ওয়ানডে, ২০০০ সালে টেস্ট ও ২০০৫ সালে টি২০ স্ট্যাটাস পাওয়ার এত বছর পরেও সব ধরনের ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের এমন ব্যর্থতা বেশ দৃষ্টিকটুই বটে। সে তুলনায় বরং জাতীয় নারী ক্রিকেট দলই বেশি সফল। ওমেন্স এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছে তারা (২০১৮ সালে)। এ ছাড়া এসএ গেমসে জিতেছে স্বর্ণপদক (২০১৯)। 
বহু বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে পুরুষ ক্রিকেট দল কোন ওয়ানডে বা টেস্ট ম্যাচ জিতলে বা সিরিজ জিতলে এ নিয়ে ব্যাপক মাতামাতি করা হয়। ক্রিকেটারদের তখন প্রশংসা-অভিনন্দনে সিক্ত করে ফেলা হয়। তাদের টাকা, বাড়ি, গাড়িসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে সরকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্পন্সর প্রতিষ্ঠান। ভাবখানা এমন যে, একটি সিরিজ জিতেই যেন বিশ্বজয় করে ফেলেছে ক্রিকেটাররা! এমনিতেই ক্রিকেটাররা খেলে ক্রিকেট বোর্ড থেকে প্রচুর অর্থ পান। সেই সঙ্গে আছে বিপিএল-আইপিএলে খেলে আরও মোটা অঙ্কের অর্থ। অথচ জাতীয় দলে তাদের কোনো সাফল্য বা ট্রফি নেই! তারপরও তাদের জন্য অবারিত অর্থের হাতছানি। সে তুলনায় ফুটবলাররা এত সমস্যা-সীমাবদ্ধতা নিয়েও দেশের জন্য কিছু তো সাফল্য কুড়িয়ে আনছেন। 
ক্রীড়ামোদীরা মনে করেন এমন অবস্থার পরিবর্তন হওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক গুরুত্বের নিরিখে শুধু ফুটবল নয়, বরং সব খেলার সফল খেলোয়াড়দেরই যোগ্য মূল্যায়ন করতে হবে। গত আগস্টে পট পরিবর্তনের পর ক্রীড়াঙ্গনেও এসেছে পরিবর্তন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আপ্রাণ চেষ্টা করছে দেশের ঘুণেধরা খেলাধুলাকে সংস্কারের মাধ্যমে চাঙ্গা করার। সবার প্রত্যাশা, ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সব খেলা ও খেলোয়াড়দের সঠিক ও যোগ্য মূল্যায়ন করবে। 

×