ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১

আরেকবার হিমালয়ের চূড়ায় সাবিনারা

রুমেল খান

প্রকাশিত: ০০:১৯, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

আরেকবার হিমালয়ের চূড়ায় সাবিনারা

বুধবার রাতে কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালায় নারী সাফের ফাইনালে জয়সূচক গোলের পর সতীর্থদের নিয়ে ঋতুপর্ণা চাকমার (বাঁয়ে) বুনো উল্লাস

ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নেপালি দর্শকদের কানফাটানো চিৎকার ছিল। কিন্তু ভারতীয় রেফারি বর্মণ কনিকা খেলা শেষের বাাঁশি বাজাতেই তাদের মুখে যেন তালা পড়ল! মনে হচ্ছিল অধিক শোকে তারা পাথর বনে গেছে। এর কারণ একটু আগেই যে তাদের কাছ থেকে আবারও শিরোপা কেড়ে নিয়েছে বাংলাদেশ! বুধবার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে স্বাগতিক নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলার বাঘিনীরা। কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই ফাইনালের প্রথমার্ধের স্কোরলাইন ছিল ০-০। 
বাংলাদেশের মনিকা চাকমা (৫২ মিনিটে) এবং ঋতুপর্ণা চাকমা (৮১ মিনিটে) এবং নেপালের আমিশা কার্কি (৫৫ মিনিটে) একটি করে গোল করেন। সাফের এটি ছিল সপ্তম আসর। এটা লাল-সবুজ বাহিনীর দ্বিতীয় শিরোপা। সর্বশেষ ২০২২ আসরে এই ভেন্যুতেই একই প্রতিপক্ষকে ৩-১ গোলে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম ট্রফি জিতেছিল তারা। এবার সেই শ্রেষ্ঠত্ব তারা ধরে রাখল ‘দক্ষিণ এশিয়ার নারী বিশ্বকাপ ফুটবল’ খ্যাত সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে। 
টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হন বাংলাদেশের ঋতুপর্ণা চাকমা। সর্বোচ্চ গোলদাতা হন ভুটানের দেকি লাজোম (৮ গোল)। সেরা গোলরক্ষক হন বাংলাদেশের রূপনা চাকমা (গত ২০২২ আসরেও এই পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি)। ফেয়ার প্লে ট্রফি জেতে ভুটান। চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ও মেডেল পায় বাংলাদেশ। রানার্সআপ ট্রফি ও মেডেল পায় নেপাল। 
এটা ছিল দুদলের ত্রয়োদশ সাক্ষাৎ। নেপালকে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার হারাল বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত হেরেছে ৬ ম্যাচে। ড্র করেছে ৫ ম্যাচে।
নেপালকে অভাগা দল বলা যেতেই পারে। এ নিয়ে ছয়বার ফাইনালে উঠে প্রতিবারই হারল তারা! বাংলাদেশের ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলার সেমিফাইনালের একাদশ থেকে ফাইনালের একাদশে একটি পরিবর্তন আনেন। সেমিফাইনালে খেলেছিলেন বয়সভিত্তিক ফুটবলে দুর্দান্ত পারফর্ম করা ফরোয়ার্ড সাগরিকা। ফিট হয়ে তার পরিবর্তে ফাইনালের একাদশে ফেরেন শামসুন্নাহার জুনিয়র।
বাংলাদেশের পোস্টের নিচে রূপনা চাকমা। রক্ষণে আফঈদা, মাসুরা, শিউলি ও শামসুন্নাহার সিনিয়র। মাঝমাঠে মনিকা ও মারিয়া। দুই উইংয়ে ছিলেন ঋতুপর্ণা ও শামসুন্নাহার জুনিয়র। আক্রমণভাগে তহুরা, সাবিনা। ৪-৩-৩ ফর্মেশনে ম্যাচ শুরু করে বাংলাদেশ।
২০ হাজার আসনবিশিষ্ট দশরথ স্টেডিয়াম ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। প্রায় শতভাগই ছিল নেপালি দর্শক। চিৎকার করে তারা নিজ দলকে সমর্থন জোগায়। প্রথমার্ধে বাংলাদেশই তুলনামূলকভাবে বেশি আধিপত্য বিস্তার করে খেলে। 
এই অর্ধে দুদলই প্রতিপক্ষের পোস্টে বল লাগায়। বাংলাদেশের তহুরা ও নেপালের আমিশা কার্কি এই কাজটি করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ আরও কয়েকবার গোলের সুযোগ পেয়েও সেগুলো কাজে লাহাতে পারেনি। 
শেষদিকে গোলের জন্য মরিয়া নেপাল আপ্রাণ চেষ্টা করে গোল শোধ করার। কিন্তু বাংলাদেশ ডিফেন্ডারদের দৃঢ়তায় তাদের সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। 
ম্যাচ শেষে হতাশায় ভেঙে পড়ে হিমালয়কন্যারা। আর উল্লাসে ফেটে পড়ে বঙ্গকন্যারা। কোচ পিটার সিনিয়র খেলোয়াড়দের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেই সিনিয়রদের নৈপুণ্যেই শিরোপা অক্ষুণœ রাখল বাংলার বাঘিনীরা। এতে করে কোচেরা ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করলেন সাবিনারা। 
তবে পিটার সাফল্য পেয়ে তার পূর্বসূরি গোলাম রব্বানী ছোটনের পাশে বসলেন। ফাইনাল শুরুর আগে ছোটন নিজের ফেসবুকে তার সাবেক শিষ্যাদের শুভকামনা জানিয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন।

×