ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১

নান্দনিক জয়ে শিরোপা মঞ্চে সাবিনারা

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ২৩:৪৮, ২৭ অক্টোবর ২০২৪

নান্দনিক জয়ে শিরোপা মঞ্চে সাবিনারা

সাফের সেমিফাইনালে ভুটানের বিরুদ্ধে গোলের উৎসব বাংলাদেশের ফুটবলারদের

উইমেন্স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা ধরে রাখার দৃপ্ত প্রত্যয়ে হিমালয় কন্যা নেপালে পা-রাখা বাংলাদেশের মেয়েরা এগিয়ে চলেছে দুর্বার গাতিতে। গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের সঙ্গে অপ্রত্যাশিত সেই ড্রয়ের (১-১এ) পর প্রবল প্রতিপক্ষ ভারতের বিপক্ষে ৩-১ গোলের দারুণ জয়ে সেরা চারে নাম লেখায় সাবিনা খাতুনের দল। এবার প্রথম সেমিফাইনালে ৭-১ গোলে জয়ের পথে ভুটানকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছে বাংলার বাঘিনীরা। রবিবার কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে গোল উৎসবের দিনে হ্যাটট্রিক করেছেন তহুরা খাতুন।

জোড়া গোল পেয়েছেন অধিনায়ক সাবিনা। এছাড়ার ঋতুপর্ণা চাকমা ও মাশুরা পারভীনের কাছ থেকে এসেছে একটি করে গোল। ছন্দময় আর দুরন্ত ফুটবলের অনন্য প্রদর্শনীতে একের পর এক আক্রমণে ভুটান রক্ষণকে দিশাহারা করে রাখেন তারা। একাদশে একটি পরিবর্তন এনে মাঠে নামা লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা শুরু থেকেই গোছানো ফুটবল উপহার দেয়। আগামী বুধবার ফাইনালে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। 
প্রতিপক্ষ হিসেবে ভুটান যেন বরাবরই বাংলাদেশের গোল উৎসবের উপলক্ষ! গত সাফে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে সেমিফাইনালে তাদের ৮-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন সাবিনা-ঋতুপর্ণারা। এবারও একই প্রতিপক্ষের গোল উৎসব করলেন তহুরারা। হ্যাটট্রিক পূরণের পথে এ তারকা গোল তিনটি করেন যথাক্রমে ১৫, ৩৫ ও ৫৮ মিনিটে। সপ্তম মিনিটে অসাধারণ গোলে শুরুতেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নেন ঋতুপর্ণা চাকমা। তহুরা দারুণ বডি ডজে মার্কারদের পেছনে ফেলে বল নিয়ে আক্রমণে উঠে বাঁদিকে ঋতুকে পাস দিয়েছেন। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সের ঠিক বাইরে থেকে বাঁ পায়ের জোরালো শটে ভুটানের গোলকিপারকে পরাস্ত করেন ঋতু।

১২ মিনিটে আরেকটি আক্রমণ হয়েছিল। বাঁদিক থেকে ঋতুপর্ণার ক্রস থেকে সাগরিকা হেড করলেও তা গোললাইন থেকে রক্ষা করেছেন দরজি এদন। তিন মিনিট পর অবশ্য কোনো ভুল হয়নি। গোলের খাতা খোলেন তহুরা খাতুন। শিউলি আযিমের ক্রস নামিয়ে চকিতে ঘুরে বক্সের ঠিক বাইরে থেকে বাঁ পায়ের বাঁকানো শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ভারত জয়ের নায়ক। ১৮ মিনিটে খানিকটা নড়বড়ে হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের রক্ষণ। সতীর্থের কাছ থেকে থ্রু পেয়ে যান ভুটানের দেকি লাজম। বিপদ বুঝে রুপনা বের হয়ে এসে তার শট নেওয়ার কাজটা কঠিন করে তোলেন। তারপরও শট নিয়েছিলেন ভুটান ফরোয়ার্ড। শেষ পর্যন্ত পোস্ট রেখে বাইরে দিয়ে বেরিয়ে গেছে তার সেই শট। 
হাই প্রেস ফুটবল খেলাতে গিয়ে অবশ্য বারবার আলগা হয়েছে বাংলাদেশের রক্ষণ ভাগ। সেই সুযোগে ২৩ মিনিটে নামগিল দেমা জোরালো শট নিলেও তা রুখে দেন রুপনা। ২৫ মিনিটে তহুরার পাস ধরে সাবিনা বাঁদিক দিয়ে বক্সে ঢুকে দূরের পোস্টে শট নিয়েছিলেন। তবে তা সাইডবারের নিচে আঘাত হানলে হতাশ হতে হয় তাদের। পরের মিনিটে অবশ্য হতাশ হতে হয়নি বাংলাদেশ অধিনায়ককে।

মনিকা চাকমার কাটব্যাক থেকে সাবিনার প্লেসিং জালে জড়ালে স্কোরলাইন হয় ৩-০। ৩৫ মিনিটে মারিয়া মান্দার ক্রস পেয়ে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সের বাইরে বাঁ পায়ের পায়ের শটে ভুটান কিপারের ওপর দিয়ে লক্ষ্যভেদে দর্শনীয় এক গোল করেন তহুরা। দুই মিনিট পর একক প্রচেষ্টায় নিজের দ্বিতীয় গোলের দেখা পান সাবিনাও। মাঝমাঠে দুই ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে দ্রুত আক্রমণে ওঠে আগুয়ান কিপারকে কাটিয়ে ঠান্ডামাথায় বল পোস্টে জমা করেন দেশের সর্বকালের সেরা গোলদাতা। ৪১ মিনিটে বাজে ডিফেন্ডিংয়ের সুযোগ নিয়ে ভুটান এক গোল শোধ করে। বাংলাদেশের দুই ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে শেরিং হাদেন ক্রস ফেলেন গোলমুখে। তাতে দেকি লাজমের প্লেসিং রুপনা রুখতে পারেননি। 
বিরতির পরও বাংলাদেশের দাপট অব্যাহত থাকে। ৫৮ মিনিটে তহুরা খাতুন তার স্মরণীয় হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন। দারুণ এক প্লেসিংয়ে গোলে উৎসবের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন। ৭২ মিনিটে সানজিদার কর্নার থেকে মাশুরা পারভীন হেড করে জালে বল জড়িয়ে জড়ালে বড় জয়ের উল্লাসে মাতে বাঘিনীরা। দক্ষিণ এশিয়ার ‘নারী বিশ্বকাপ’ নামে খ্যাত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবার বাংলাদেশ ফাইনালে ওঠে ২০১৬ সালে। সেবার শিরোপা লড়াইয়ে ৩-১ গোলে হারতে হয় ভারতের কাছে। ২০১৯ সালে বিদায় নিতে হয় সেমিতে। অবশেষে ২০২২ সালে সর্বশেষ সাফে শিরোপা জয় করে।

×