ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১

তহুরার হ্যাটট্রিক ॥ সাবিনার জোড়া গোল

গোল উৎসবে ফাইনালে বাংলাদেশ

জাহিদুল আলম জয়

প্রকাশিত: ২২:১৭, ২৭ অক্টোবর ২০২৪

গোল উৎসবে ফাইনালে বাংলাদেশ

কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালায় সাফের সেমিতে ভুটানের বিরুদ্ধে গোলের আনন্দ বাংলাদেশের মেয়েদের

দক্ষিণ এশিয়ার ‘নারী বিশ্বকাপ’ খ্যাত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। রবিবার দুপুরে প্রতিপক্ষ ভুটানকে রীতিমতো গোলের মালা পরিয়ে সপ্তম নারী সাফের শিরোপা মঞ্চে খেলা নিশ্চিত করেন বাংলার বাঘিনীরা। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালায় আসরের প্রথম সেমিফাইনালে বাংলাদেশের মেয়েরা ৭-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে ভুটানকে। বাংলাদেশের বিশাল জয়ে চোখ ধাঁধানো হ্যাটট্রিক করেন ফরোয়ার্ড তহুরা খাতুন।

স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন বাংলাদেশের ‘নাম্বার টেন’। এর আগে ভারতের বিরুদ্ধেও ৩-১ ব্যবধানের জয়ের ম্যাচে জোড়া গোল করে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন তহুরা। ভুটানের বিরুদ্ধে তহুরার হ্যাটট্রিক ছাড়াও জোড়া গোল করেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। একটি করে গোল করেন ফরোয়ার্ড ঋতুপর্ণা চাকমা ও ডিফেন্ডার শিউলি আজিম। বুধবার একই ভেন্যুতে শিরোপা ধরে রাখার মিশনে মাঠে নামবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
২০২২ সালে সবশেষ সাফে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে সেমিফাইনালে এই ভুটানকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন বাংলার মেয়েরা।

এবারো সাফল্যের সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেন সাবিনা-ঋতুপর্ণারা। ম্যাচে একটি পরিবর্তন এনে একাদশ সাজান বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলার। আক্রমণভাগে শামসুন্নাহার জুনিয়রের জায়গায় খেলান সাগরিকাকে। জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকে ভুটানের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক উপহার দিয়েছিলেন এই ফরোয়ার্ড। জ্বরের কারণে আগের দিনের অনুশীলনে না থাকলেও, সেরে উঠে সাবিনা খেলেন ম্যাচের শুরু থেকে। জয় পেতে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ ম্যাচের শুরু থেকেই ভুটানকে চেপে ধরে। 
ম্যাচের সপ্তম মিনিটে প্রথম গোল পায় বাংলাদেশ। তহুরার পাস ধরে ডি বক্সের ঠিক ওপর থেকে বাম পায়ের জোরাল শটে জাল খুঁজে নেন ঋতুপর্ণা। চলতি আসরে এই ফরোয়ার্ডের এটা প্রথম গোল। ১৫ মিনিটে দ্বিতীয় গোল আদায় করে বাংলাদেশ। এ সময় শিউলির কাছ থেকে বল পান তহুরা। ভারতের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করা এই ফরোয়ার্ড বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বাঁ পায়ের দারুণ শটে গোল করেন। ২৬ মিনিটে দলের তৃতীয় গোল করেন অধিনায়ক সাবিনা। এবারের টুর্নামেন্টে যা তার প্রথম গোল। আগের দিন অসুস্থ থাকায় অনুশীলন করতে না পারা সাবিনার খেলা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা ছিল।

কিন্তু মাঠে ঠিকই জ্বলে ওঠেন তিনি। ৩৫ মিনিটে আবারও ঝলক দেখান তহুরা। এবার বাঁ পায়ের চোখ ধাঁধানো বাঁকানো শটে স্কোরলাইন করেন ৪-০। দুই মিনিট পরই ভুটানের গোলরক্ষককে কাটিয়ে ফাঁকা পোস্টে বল পাঠিয়ে নিজের দ্বিতীয় ও দলের পঞ্চম গোল করেন সাবিনা। ম্যাচের ৪১ মিনিটে এক গোল পরিশোধ করে ভুটান। গোলটি করেন দলটির স্ট্রাইকার দেখি হাজম। ৫৮ মিনিটে তহুরা খাতুন নিজের তৃতীয় ও দলের ষষ্ঠ গোলটি করেন। বদলি নামা সানজিদার কর্নারে ডিফেন্ডার শিউলি আজিম ৭২ মিনিটে দলের সপ্তম ও শেষ গোলটি করেন। 
ম্যাচের বাকি সময়েও বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ পায়। সেগুলো কাজে লাগাতে পারলে হয়তো ভুটানের লজ্জা আরও বড় হতো। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের ইংলিশ কোচ পিটার বাটলার বলেন,  এখন আমাদেরকে একটা ভালো ফুটবল দলের মতো দেখাচ্ছে। এই টুর্নামেন্টে আমাদের আসলেই আরও ভালো হতে হবে। কোনো চোট নেই, গোলও পাচ্ছি। ভালো দিক হচ্ছে আমরা অনেক নতুন খেলোয়াড়কে খেলার সুযোগ দিতে পেরেছি। যেন তারা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। এই পারফরমেন্সে আমি খুব খুশি। মেয়েরাও খুশি। বাইরে থেকে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। সেগুলো কাটিয়ে এমন জয় সত্যিই আনন্দের। 
বাংলাদেশ প্রথমবার নারী সাফের ফাইনালে ওঠে ২০১৬ সালে। সেবার শিরোপা লড়াইয়ে ৩-১ গোলে হারতে হয় ভারতের কাছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বিদায় হয় সেমিতে। ২০২২ সালে সবশেষ সাফে ফাইনালে উঠে অবশ্য আর হতাশা নয়। স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাফ জেতে বাংলাদেশের মেয়েরা। এই ম্যাচের আগে আরেকবার অশান্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ দলের ভেতরের পরিবেশ। কোচ বাটলার অভিযোগ করে বসেন, সাবেক কোচরা মেয়েদেরকে প্ররোচিত করছেন দলে ভাঙন ধরানোর জন্য। এ নিয়ে কথার চালাচালিও কম হয়নি। কিন্তু সাবিনা-মারিয়া-তহুরাদের মাঠের পারফরম্যান্সে এসবের কোনো প্রভাব পড়েনি। 
এদিকে ফাইনালে ওঠা দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নবনির্বাচিত সভাপতি তাবিথ আউয়াল। নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে অভিনন্দন বার্র্তায় তাবিথ লিখেন, ‘আমরা আবারও দেখছি শিরোপার স্বপ্ন! সাফ নারী ফুটবল ২০২৪ এর প্রথম সেমিফাইনালে ভুটানকে ৭-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। অভিনন্দন আমাদের বাঘিনীদের, অভিনন্দন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। ফুটবল মাঠে আমাদের নারী দলের এই জয়রথ ফাইনালেও অব্যাহত থাকবে বলেই আমার বিশ্বাস।’

×