বিধ্বংসী এক সেঞ্চুরিতে দলকে জেতালেন উইন্ডিজ ব্যাটার
প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ পকেটে পুরে নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে ছিল হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর চ্যালেঞ্জ। দারুণ এক সেঞ্চুরিতে সেই চ্যালেঞ্জ উতরে দলকে লজ্জা থেকে উদ্ধার করলেন এভিন লুইস। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বৃষ্টিবিঘ্নিত তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ডাকওয়ার্থ লুইস-স্টার্ন (ডিএলএস) পদ্ধতিতে ৮ উইকেটে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
পাল্লেকেলেতে এদিন টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৭.২ ওভারে শ্রীলঙ্কা ১ উইকেটে হারিয়ে ৮১ রান তোলার পর বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকে। বৃষ্টি থামলে ম্যাচের দৈর্ঘ্য নেমে আসে ২৩ ওভারে। পুনরায় ব্যাট করতে নেমে লঙ্কানরা পাথুম নিসাঙ্কা ও কুসাল মেন্ডিসের দারুণ দুটি ফিফটিতে ১৫৬ রান করে। জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৯৫। ২ উইকেট হারিয়ে ৬ বল হাতে রেখেই তারা লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। যেখানে শেষ ১০ ওভারে ১০১ রানের চ্যালেঞ্জ জিতে হোয়াইটওয়াশ এড়ায় সফরকারি ক্যারিবিয়রা।
২০০৫ সালের পর এই প্রথম শ্রীলঙ্কার মাটিতে ওয়ানডে ম্যাচে জয়ের স্বাদ পেল ক্যারিবিয়ানরা। এর আগে দেশটিতে তারা হেরেছিল টানা ১০ ম্যাচ। ২০২১ সালের জুলাইয়ের পর এই সংস্করণে খেলতে নেমে ৬১ বলে অপরাজিত ১০২ রানের ইনিংসে ক্যারিবিয়ানদের নায়ক লুইস। ৯ চার ও ৪ ছক্কায় গড়া ইনিংসে ম্যাচের সেরা তিনিই। তার পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরি এটি। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পরপরই পায়ে টান লাগে এই ওপেনারের। তারপরও চালিয়ে যান ব্যাটিং।
শেষ দিকে যখন ওভারপ্রতি রান লাগে দশের বেশি, তখন ২৬ বলে ৩ ছক্কা ও ৪টি চারে অপরাজিত ৫০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে জয়ে বড় অবদান রাখেন রাদারফোর্ড। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেও পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। লুইস ও রাদারফোর্ডের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৮৮ রান আসে স্রেফ ৪৫ বলে।
লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ৫ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করে বিনা উইকেটে ৩৫ রান। ১৯ বলে ১৬ রান করে পরের ওভারে বিদায় নেন ব্র্যান্ডন কিং। লুইস দলকে এগিয়ে নেন শেই হোপের সঙ্গে জুটি বেঁধে। ফিফটি করেন তিনি ৩৪ বলে। এরপর একটি রান নিতে গিয়ে পায়ে টান লাগে তার। মাঠে চিকিৎসা নিয়ে ব্যাটিং চালিয়ে যান তিনি।
শেষ ১০ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ১০১ রান। একটু পরই হোপের (২৭ বলে ২২) বিদায়ে ভাঙে ৭২ রানের জুটি। রাদারফোর্ড জীবন পান ১০ রানে। সুযোগ পেয়ে তাণ্ডব চালান তিনি। ৫ ওভারে দরকার যখন ৫৬, অফ স্পিনার মাহিশ থিকশানাকে রাদারফোর্ডের দুই ছক্কা ও একটি চারে ওভারে আসে ১৮ রান।
৮৮ থেকে দিলশান মাদুশাঙ্কাকে ছক্কা মেরে নম্বইয়ের ঘরে পৌঁছে যান লুইস। পরের ওভারে একটি ছক্কার পর এক রান নিয়ে ফিফটি পূর্ণ করেন রাদারফোর্ড। পরের বলেই ছক্কায় সেঞ্চুরি পূরণের পাশাপাশি ম্যাচের ইতি টানেন লুইস।
ম্যাচের প্রথমভাগটা অবশ্য ভালো ছিল না ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ২৩ ওভারে ক্যাচ ফেলে তারা ৫টি! দুবার করে জীবন পান নিসাঙ্কা, কুসাল মেডিস। প্রথম তিন ওভারেই নিসাঙ্কা ও আভিশকা ফার্নান্দোকে জীবন দেয় ক্যারিবিয়ানরা। সুযোগ কাজে লাগিয়ে শ্রীলঙ্কাকে এগিয়ে নেন দুই ওপেনার।
প্রথম ১০ ওভারে আসে বিনা উইকেটে ৪৯ রান। অষ্টাদশ ওভারের আভিশকাকে নিজের ফিরতি ক্যাচে বিদায় করে ৮১ রানের শুরুর জুটি ভাঙেন রোস্টন চেইস। এক বল পরই বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। পুনরায় খেলা শুরুর পর চেইসের বাকি চার বলে ৪টি বাউন্ডারি মারেন কুসাল মেন্ডিস। ২৯ রানে জীবন পেয়ে তিনি ফিফটি করেন কেবল ১৯ বলে। ২২ বলে ৯ চার ও এক ছক্কায় ৫৬ রানে অপরাজিত রয়ে যান মেন্ডিস। ৬২ বলে ৫৬ রান করা নিসাঙ্কা রান আউট হন শেষের আগের ওভারে।
বৃষ্টি-বিরতির পর ৩৪ বলে ৭৫ রান করে শ্রীলঙ্কা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য লক্ষ্য হয়ে যায় কঠিন। সেটি সহজ হয়ে গেল লুইস ও রাদারফোর্ডের দারুণ ব্যাটিংয়ে।
এই ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান জুয়েল অ্যান্ড্রুর। ব্যাটিংয়ে নামার জন্য তাকে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে আরও।
টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডে- দুটি সিরিজই শ্রীলঙ্কা জিতল ২-১ ব্যবধানে। ১৯ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে শেষটা অন্তত জয়ে রাঙাতে পারল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
মিরাজ/টুম্পা