ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১

পাকিস্তানের টেস্ট ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে ঘটেনি

স্পোর্টস রিপোর্টার 

প্রকাশিত: ২২:২৬, ২৬ অক্টোবর ২০২৪; আপডেট: ২২:৫২, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

পাকিস্তানের টেস্ট ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে ঘটেনি

শান মাসুদ-রিজওয়ানদের সিরিজ জয়ের আনন্দ

সিরিজের প্রথম টেস্টে পাঁচশর বেশি রান তুলেও ইনিংস ব্যবধানে হেরে বিব্রতকর এক ইতিহাস গড়েছিল পাকিস্তান। চারপাশে তখন সমালোচনার ঝড়। অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের কাছে সিরিজ হোয়াইটওয়াশড হওয়ার পর এভাবে আরেকটি পরাজয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট পৌঁছে যায় তলানিতে। মাথা তুলে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টায় তারা টার্নিং উইকেটের পথ বেছে নেয়। নোমান ও সাজিদকে ফেরানো হয় দলে। এরপর ভোজবাজির মতোই বদলে যায় সব কিছু। 

২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিল শান মাসুদের দল। সাড়ে তিন দিনেই রাওয়ালপিন্ড টেস্টে ইংল্যান্ডকে হারাল ৯ উইকেটে। তৃতীয় দিনে আজ (শনিবার) ১ উইকেটে ৩.১ ওভারেই জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ৩৬ রানে তুলে নেয় পাকিরা। প্রথম ইনিংসে তাদের সংগ্রহ ছিল ৩৪৪। ইংল্যান্ড গুটিয়ে যায় ২৬৭ ও ১১২ রানে। ভীষন চাপের মধ্যে টেল-এন্ডারদের নিয়ে পার্থক্য গড়ে দেওয়া ১৩৪ রানের দারুণ ইনিংসটির জন্য ম্যাচসেরাহ হয়েছেন সাউদ শাকিল। শেষ দুই টেস্টেই ১৯ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরা অফস্পিনার সাজিদ খান।

সর্বশেষ ১৯৯৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে হারের পর শেষ দুই টেস্ট জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছিল পাকিস্তান। ২০১৫ সালের পর এই প্রথম ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতল পাকিস্তান। দলকে এবার সিরিজ জিতিয়েছেন মোটাদাগে দুজন—নোমান আলী ও সাজিদ খান। শেষ দুই টেস্টে ইংল্যান্ডের ৪০ উইকেটের মধ্যে ৩৯টিই পেয়েছেন এই দুই স্পিনার। অন্য একটি উইকেট পেয়েছেন যিনি, স্পিনার তিনিও—জাহিদ মেহমুদ।

অবশ্য পাকিস্তানের পেসাররা উইকেট পাবেনই বা কীভাবে? উইকেট পেতে তো বোলিং করতে হবে! মুলতানে দ্বিতীয় টেস্টে ৬ ওভার বোলিং করা পেসার আমির জামালকে রাওয়ালপিন্ডিতে ১ ওভার বোলিংও করাননি অধিনায়ক শান মাসুদ। পাকিস্তানের টেস্ট ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে ঘটেনি। সব মিলিয়ে এই সিরিজে স্পিনাররা উইকেট নিয়েছেন ৭৩টি। পাকিস্তানের মাটিতে এক সিরিজে যা সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বোচ্চ ছিল ৭১, সেটি দেখা গেছে ১৯৬৯-৭০ মৌসুমে।

ইংল্যান্ডের ৪০ উইকেটের মধ্যে ৩৯টিই নিয়েছেন দুই স্পিনার সাজিদ খান ও নোমান আলি

প্রথম দুই দিনেই পাকিস্তানের জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন নোমান ও সাজিদ। বল হাতে তো দুজন অপ্রতিরোধ্য সিরিজজুড়েই, দ্বিতীয় দিনে ব্যাট হাতে নোমানের ৪৫ ও সাজিদের অপরাজিত ৪৮ রান বড় ভূমিকা রাখে পাকিস্তানকে লিড এনে দেওয়াতেও। এরপর নিজেদের আসল কাজেও ইংলিশদের পোড়াতে থাকেন দুজন। ৩ উইকেটে ২৪ রান নিয়ে দিন শুরু করে ইংল্যান্ড। দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান জো রুট ও হ্যারি ব্রুক দলকে এগিয়ে নেন কিছুটা। লড়াইয়ের ইঙ্গিত ছিল দুজনের ব্যাটে। কিন্তু নোমান ও সাজিদকে আর কতক্ষণ নিষ্ক্রিয় রাখা যায়!

ব্রুককে ২৬ রানে ফিরিয়ে ৪৬ রানের জুট ভাঙেন নোমান। এরপর ইংল্যান্ডের ব্যাটিংও ভেঙে পড়ে দ্রুতই। নোমানের বল দৃষ্টিকটূভাবে ছেড়ে দিয়ে এলবিডব্লিউ হন বেন স্টোকস। প্রথম ইনিংসে পাল্টা আক্রমণে দুর্দান্ত ইনিংস খেলা জেমি স্মিথ বোল্ড হন ক্রিজে ছেড়ে বেরিয়ে। লোয়ার অর্ডারে কেউ সেভাবে প্রতিরোধ গড়তে পারেননি। এক প্রান্ত আগলে রাখা জো রুটকে ৩৩ রানে থামান নোমান। রেহান আহমেদকে বোল্ড করে ম্যাচে ১০ উইকেট পূর্ণ করেন সাজিদ। জ্যাক লিচকে বিদায় করে ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ করেন নোমান।

জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারতে এরপর একদমই সময় নেয়নি পাকিস্তান। ওপেনার সাইম আইয়ুবকে যদিও ফেরান জ্যাক লিচ। তবে ক্রিজে গিয়েই টানা চারটি বাউন্ডারি মারেন শান মাসুদ। পরের ওভারে প্রথম বলে শোয়েব বাশিরকে ছক্কায় পাকিস্তান অধিনায়ক শেষ করে দেন ম্যাচ।এই জয় তার জন্যও বিশেষ কিছু। অধিনায়ক হওয়ার পর টানা ছয় ম্যাচ হেরে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে এখন সিরিজ জয়ের স্বস্তি। পাকিস্তান অধিনায়ককে কৃতজ্ঞ থাকতে হবে সাজিদ ও নোমানের প্রতি।

স্পিন স্বর্গেও ম্যাচের সেরা অবশ্য দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করা সাউদ শাকিল। সিরিজে নোমানের উইকেট ২০টি। তবে ১৯ উইকেটের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ রান করে সিরিজের সেরা সাজিদ।

শেষ দুই টেস্টে ইংল্যান্ডের ৪০ উইকেটের মধ্যে ৩৯টিই পেয়েছেন এই দুই স্পিনার সাজিদ খান ও নুমান আলি।

মিরাজ/শহিদ

×