ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১

বাফুফে নির্বাচনে মোট পদ ২১টি

বহুল আলোচিত নির্বাচন আজ

​​​​​​​রুমেল খান

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ২৫ অক্টোবর ২০২৪

বহুল আলোচিত নির্বাচন আজ

.

বহুল আলোচিত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আজ শনিবার, দুুপুর ২টায়। ভেন্যু রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল। ভোট শুরুর আগে অনুষ্ঠিত হবে বার্ষিক সাধারণ সভা।

নির্বাচন পরিচালনা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন। বাফুফের নির্বাচনে সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি, চার সহসভাপতি ১৫ নির্বাহী সদস্যসহ মোট ২১টি পদের প্রার্থী হয়েছেন ৫০ জন। আর ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ১৩৩ কাউন্সিলর।

মনোনয়নপত্রের মূল্য পদ ভেদে ভিন্ন। সভাপতি পদে মনোনয়নপত্রের মূল্য এক লাখ, সিনিয়র সহসভাপতি পদে ৭৫ হাজার, সহসভাপতি পদে ৫০ হাজার সদস্য পদে ২৫ হাজার টাকা করে।

২১ পদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আগ্রহের পদ হচ্ছে সভাপতি পদ। এই পদে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন তাবিথ আউয়াল এবং এএফএম মিজানুর রহমান। এদের মধ্যে তাবিথ ২০১২ ২০১৬ সালে বাফুফের সহসভাপতি ছিলেন। আর মিজানুর হচ্ছেন দিনাজপুরের ফুটবল সংগঠক। অনেকের মতে পরিচিতি গ্রহণযোগ্যতার নিরিখে মিজানুরের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে আছেন তাবিথ। ফলে তার জয়লাভ করাটা বেশ সহজই হবে।

সিনিয়র সহসভাপতি পদে তরফদার রুহুল আমিন নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায় মাঠ ফাঁকা হয়ে গেছে ইমরুল হাসানের। বাফুফের বর্তমান সহসভাপতি তাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।

সভাপতি পদে প্রায় একতরফা এবং সিনিয়র সহসভাপতি পদে যেহেতু প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হবে না, সেহেতু সবচেয়ে বড় এই পদ দুটি নিয়ে তাই তেমন কোনো আকর্ষণ-আগ্রহ নেই। সেক্ষেত্রে সহসভাপতি সদস্যপদে কিছুটা আকষর্ণ থাকবে। এই পদে প্রার্থী ছয় জন। এরা হলেন ফাহাদ করিম, ওয়াহিদউদ্দীন চৌধুরী, নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, শফিকুল ইসলাম মানিক, সাব্বির আহম্মেদ আরেফ সৈয়দ রুম্মান বিন ওয়ালী সাব্বির। ধারণা করা হচ্ছে এদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

সদস্য পদপ্রার্থী ৪০ জন। এদের মধ্যে জয়ের ব্যাপারে এগিয়ে থাকবেন আমিরুল ইসলাম বাবু, জাকির হোসেন চৌধুরী, টিপু সুলতান, বিজন বড়ুয়া, মহিদুর রহমান মিরাজ, মানস চন্দ্র দাস ধলু, মাহফুজা আক্তার কিরণ, আমের খান, গোলাম গাউছ, ছাইদ হাছান কানন, মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম, শাহাদাত হোসেন, শাকিল মাহমুদ চৌধুরী, সত্যজিৎ দাশ রুপু, সাখাওয়াত হোসেন ভূঁঞা প্রমুখ।

এবার নতুন ভোটারের ছড়াছড়ি। গত টানা চার নির্বাচনের ভোটারদের বেশিরভাগই থাকছেন না। আওয়ামী লিগ সরকারের পতনের পর পাল্টে গেছে বাফুফে নির্বাচনের ভোটার তালিকার চিত্রও। চূড়ান্ত হওয়া ১৩৩ ভোটারের মধ্যে মাত্র ৪২ জন সর্বশেষ ২০২০ সালের নির্বাচনে ভোটার ছিলেন। বাকি ৯১ জনই এবার নতুন মুখ। যা মোট ভোটারের প্রায় ৬৯ শতাংশ।

এবার আগের নির্বাচনগুলোর মতো কোনো প্যানেল নেই। ফলে নির্র্বাচনের আকর্ষণও খানিকটা ম্লান হয়েছে। নিয়ে পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। ২০০৮, ২০১২, ২০১৬ ২০২০ সালে আগের চারটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এর আগে ১৯৭২-২০০৭ সাল পর্যন্ত বাফুফেতে যতগুলো কার্যনির্বাহী কমিটি দায়িত্ব পালন করেছে, সেগুলোর সবই ছিল সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত। পরে বিশ^ ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা নতুন নিয়ম প্রবর্তন করে। সেটা হলো কোনো দেশে ফুটবল ফেডারেশনে সরাসরি নির্বাচন হবে, এখানে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। 

ক্রিকেট, হকি বা অন্য কোনো ক্রীড়া ফেডারেশনে যে নিয়মে বা যেভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, ফুটবল ফেডারেশনে নির্বাচন সেভাবে হয় না। এখানকার নির্বাচনে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ বা চাপ প্রয়োগ থাকে না। ফিফার নিয়ম অনুযায়ীই নির্বাচন হতে হবে। চলবে না কোনো ধানাই-পানাই!

বাফুফের প্রতিটি নির্বাচনেই একটি বড় ভূমিকা থাকেফোরাম’-এর। ১৩৩ ভোটের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশিÑ ভোটই হচ্ছে ফোরামের। এই ফোরামকে বলা হয়ক্রীড়াঙ্গনের বিষফোঁড়া’! ফোরাম গঠনের পর থেকেই এমন নেতিবাচক বিশেষণে বিশেষিত করা হচ্ছে এই সংগঠনটিকে। এটা দিবালোকের মতো স্পষ্টÑ এই ফোরামের কারণেই প্রকৃত ক্রীড়াপ্রেমী, ক্রীড়া সংগঠকরা কোণঠাসা, বিপর্যস্ত এবং নিষ্ক্রিয়। ফোরামের ভোটারদের চরিত্রটাই এমনÑ তারা কোনো প্যানেলের প্রতিশ্রুতি বা মুখের কথায় বিশ^াসী নয়, তারা বিশ^াসী নগদ টাকায়!

নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টা আগে বাফুফে একটি নির্দেশনা জারি করেছে। কোনো প্রার্থী প্রচার-প্রচারণায় লোগো ব্যবহার করতে পারবে না।

ফেনী, গোপালগঞ্জ, লালমনিরহাট শেরপুর জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কাউন্সিলরশিপ বাতিল করেছিল বাফুফে। বাদ পড়াদের মধ্যে গোপালগঞ্জ জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা খসরু মামলা আবেদন করেন। শুনানি হলে আবেদনকারীর পক্ষে সিদ্ধান্ত গেলে নির্বাচন আয়োজন বড় শঙ্কার মধ্যে পড়ত। শুধু নির্বাচন নয় আদালতের নির্দেশনার ফলে বাফুফে ফিফার শাস্তির মধ্যেও পড়ার শঙ্কায় ছিল। বুধবার মধ্যরাতে নিয়ে ফুটবলের বিভিন্ন পক্ষ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ায় আদালতে মামলাটি শুনানির জন্য উঠেনি। ফলে আইনি জটিলতা না থাকায় আজ বাফুফে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে আর কোনো বাধা নেই।

এখন দেখার অপেক্ষা শেষ পর্যন্ত কাউন্সিলররা কাদের নির্বাচিত করেন, কার মুখে ফোটে বিজয়ের হাসি।

×