ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১

মিরাজের ব্যাটে আশা দেখছে বাংলাদেশ

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ২২:১৯, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

মিরাজের ব্যাটে আশা দেখছে বাংলাদেশ

টেস্টের তৃতীয় দিনে ১৩৮ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফিরিয়েছেন জাকের আলী ও মেহেদি হাসান মিরাজ

লড়াইয়ের মঞ্চটা মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। সেজন্যই বিশ্বাস হারাচ্ছে না বাংলাদেশ দল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চলমান প্রথম টেস্টের বৃষ্টি বিঘ্নিত তৃতীয় দিনশেষে ৮১ রানের লিড পেয়েই জয় তুলে নেওয়ার বিশ্বাস বুকে বেঁধেছে স্বাগতিকরা। সেই আশাটা বাস্তবে রূপ নিতে পারে যদি আজ ৮৭ রানে অপরাজিত মেহেদি হাসান মিরাজ যদি লিডটাকে আরও বাড়িয়ে নিতে পারেন। তার সঙ্গে অবশ্য স্বীকৃত আর কোনো ব্যাটার নেই।

নাঈম হাসান ১৬ রানে ব্যাট করছেন তার সঙ্গে। দ্বিতীয় ইনিংসে এখন পর্যন্ত ৭ উইকেটে ২৮৩ রান তুলেছে বাংলাদেশ। সেজন্য দক্ষিণ আফ্রিকাও জেতার আশাই করছে। তবে শেষ ইনিংসে মিরপুরের ভয়াল উইকেটে ছোট টার্গেট পেরিয়ে যাওয়া হবে খুবই চ্যালেঞ্জিং। তৃতীয় দিন সকালে কাগিসো রাবাদার পেসে যেভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে বাংলাদেশ, সেখান থেকে সপ্তম উইকেটে মিরাজ আর জাকের আলী অনিক ১৩৮ রানের রেকর্ড জুটি গড়েন। ফলে ইনিংস ব্যবধানে হারের শঙ্কা পেরিয়ে উল্টো লিড নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। অভিষেকেই অর্ধশতক হাঁকিয়ে দলকে বাঁচিয়েছেন জাকের।
মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন থেকেই বোলাররা দাপট দেখিয়েছেন এবং ১৬ উইকেটের পতন ঘটেছে। তবে প্রথম দিন ৮১.১ ওভার খেলা হয়। দিনশেষে ৩৪ রানে এগিয়ে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় দিন পেয়েছে পুরোপুরি বদলে যাওয়া উইকেট। সেখানে তারাপ কাইল ভেরেইন ও উইয়ান মুল্ডারের সপ্তম উইকেটে ১১৯ রানের রেকর্ড জুটিতে বড় লিড পেয়ে যায়। ব্যাটিং সহায়ক হয়ে ওঠা উইকেটে ভেরেইন-ডেন পিট নবম উইকেটে আরও ৬৬ রানের জুটি গড়লে প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা করে ৩০৮ রান।

এরপর দিনশেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ১০১ রান তুলে আরও ১০১ রানে পিছিয়ে থাকে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিন মাত্র ৭৪.৫ ওভার খেলা হয়েছে। দুদিনই আলোর স্বল্পতায় পুরো সময় খেলা হয়নি। তবে সেখান থেকে ভালো কিছুর আশাই করেছে স্বাগতিকরা। কারণ তখনো মাহমুদুল হাসান জয় ৩৮ ও মুশফিকুর রহিম ৩১ রানে অপরাজিত ছিলেন। তবে তৃতীয় দিন সকালে রাবাদার পেসে আবারও বিপর্যস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। দুজনই আর মাত্র ২ রান করে যোগ করার পর বিদায় নেন। দিনের পঞ্চম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন রাবাদা।

আগের দিন প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে টেস্টে ৬ হাজার রান করা মুশফিক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে এক ভেন্যুতে একমাত্র ব্যাটার হিসেবে ৫ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এরপর লিটন কুমার দাসও ৭ রানে কেশব মহারাজের বাঁহাতি স্পিনে সাজঘরে ফিরলে ইনিংস পরাজয়ের শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। তখন দলের রান ৬ উইকেটে ১১২। ৯০ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। ওই সময় হাল ধরেছেন মিরাজ-জাকের।

সপ্তম উইকেটে অবিশ^াস্য ব্যাটিং করেছেন মিরাজ ও জাকের। তারা প্রোটিয়া বোলিংয়ের সামনে বিচলিত না হয়ে দলের রান দুইশ’ পার করে নিয়ে যান। ৬ উইকেটে ২০১ রান নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে গেছে বাংলাদেশ। তখনো ১ রানে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। মিরাজ ক্যারিয়ারের নবম অর্ধশতক পেয়েছেন। লাঞ্চ বিরতির পরও তারা স্বাচ্ছন্দ্যেই ব্যাট চালিয়ে যান। অভিষেকেই অর্ধশতক পেয়ে যান জাকের। দেশের ১৮তম ব্যাটার হিসেবে অভিষেক টেস্টে হাফ সেঞ্চুরির কৃতিত্ব দেখান তিনি। জাকেরকে এলবিডব্লিউ করে ১৩৮ রানের জুটি ভেঙে দেন মহারাজ। তিনি ১১১ বলে ৭ চারে ৫৮ রান করেন।

ততক্ষণে বাংলাদেশ ৪৮ রানের লিড পেয়েছে। মিরাজের সঙ্গে উইকেটে যোগ দিয়ে নাঈম হাসান দারুণ ব্যাট করেছেন। দুজনের জুটি বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে যেতে থাকে। বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ২৬৭ রান করার পর কিন্তু চা বিরতির ৪০ মিনিট আগে বৃষ্টি নামলে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। সবমিলিয়ে ৮২ মিনিট পর আবার খেলা শুরু হলে মাত্র ৫ ওভার পরই তা আলোর স্বল্পতায় বন্ধ হয়েছে। তা আর মাঠে গড়ায়নি। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় দিনের খেলা সমাপ্তি ঘোষণার পর বাংলাদেশ ছিল ৭ উইকেটে ২৮৩ রান নিয়ে। ৮১ রানের লিড পেয়েছে স্বাগতিকরা।

এখন পর্যন্ত অষ্টম উইকেটে ৩৩ রান যোগ করে টিকে আছেন মিরাজ ও নাঈম। নাঈম ২৮ বলে ১৬ আর মিরাজ ১৭১ বলে ৯ চার, ১ ছয়ে ৮৭ রানে ব্যাট করছেন। মূলত মিরাজের ওপরেই সব ভরসা বাংলাদেশ দলের। সাকিব আল হাসান না থাকায় তার ব্যাটিং পজিশন একধাপ ওপরে উঠেছে। এর আগে আটে নেমে টেস্ট ক্যারিয়ারের একমাত্র সেঞ্চুরি করেছেন মিরাজ ৩ বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রামে।

এবার দ্বিতীয় শতকের অপেক্ষায় তিনি। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করার পরেও এই মুহূর্তে তার ওপরই আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে পুরো বাংলাদেশ। তিনি নাঈম, তাইজুল ইসলাম আর হাসান মাহমুদকে নিয়ে যত বেশি রান করতে পারবেন ততোই শক্ত হবে স্বাগতিক দলের অবস্থান। 
এ বিষয়ে স্পিন কোচ মুশতাক আহমেদ বলেছেন, ‘পাকিস্তান সিরিজে ২৬ রানে ৬ উইকেট থেকে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। সবাই বিশ্বাস রাখে আমরা জিততে পারি, যে কোনো পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারি। ২০০ রান, কেন নয়? ২৬/৬ থেকে আমরা টেস্ট জিতেছি। এই বিশ্বাস রাখতে হবে। তৃতীয়বারের মতো বলছি ২৬/৬ থেকে ম্যাচ জিতেছি, ইনশাআল্লাহ এই ম্যাচও জিততে পারে। এই বিশ্বাসটাই শুধু রাখতে হবে। বিশ্বাস হলো সেই জিনিস, আপনি জানেন কোন প্রক্রিয়ায় জিততে হবে এবং হাল ছেড়ে দেবেন না। নাঈম দারুণ ব্যাট করেছে। ১৬ রানের মতো করেছে। এটাই লড়াই। হাল ছাড়া যাবে না।’ তবে আজ চতুর্থ দিনের উইকেটে খুব সহজ হবে না ব্যাট করা।

সকালের ভেজা পরিবেশে রাবাদার পেসে আবারও বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে। সেজন্য প্রোটিয়ারাও যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশের বাকি ৩ উইকেট তুলে নিতে চাইছে। রাবাদা ৪টি, মহারাজ ৩টি উইকেট নিয়ে বাংলাদেশী ব্যাটারদের ঝামেলায় ফেলেছেন। মহারাজ মনে করেন ম্যাচে এগিয়ে আছে তারাই। তিনি বলেছেনও, ‘অবশ্যই বাংলাদেশ অনেক ভালো ব্যাট করেছে আজকে। কন্ডিশন কিছুটা ভালো হয়েছে মনে হয় যেহেতু বল কিছুটা পুরনো। তবে আমি এখনো মনে করি আমরা এগিয়ে আছি।

অবশ্যই বাংলাদেশ লিডে রয়েছে। ৩ উইকেট এখনো হাতে তাদের। যদি তাদের অল্প রানের মধ্যে আটকে রাখতে পারি, তবে আমি এখনো মনে করি আমরা ভালো জায়গায় রয়েছি। তিনি অবশ্য বাংলাদেশী ব্যাটারদের বিপর্যয়ের মুখে এমন কন্ডিশনে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রশংসাই করেছেন। আজও সেই প্রশংসনীয় কাজ করতে হবে মিরাজসহ বাকিদের।

×