ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

ভেরেইনের বীরত্বে কোণঠাসা বাংলাদেশ

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০০:৫০, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

ভেরেইনের বীরত্বে কোণঠাসা বাংলাদেশ

রেকর্ডগড়া চোখ ধাঁধানো সেঞ্চুরির পর দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটরক্ষক ব্যাটার কাইল ভেরেইনের উদযাপন

মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন বোলারদের দৌরাত্ম্য দেখেছে। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের সাফল্য পিছিয়ে দেয় বাংলাদেশকে। আর মঙ্গলবার ম্যাচের দ্বিতীয় দিন পরিস্থিতি ছিল উল্টো। ব্যাটাররাই দাপট দেখিয়েছেন। সাতে ব্যাট করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার কাইল ভেরেইন ১১৪ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার মাত্র তৃতীয় উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে এশিয়াতে সেঞ্চুরির গৌরব দেখিয়েছেন ভেরেইন।

সেই রান করার পথে তিনি সপ্তম উইকেটে উইয়ান মুল্ডারের সঙ্গে ১১৯ রানের জুটি গড়েন যা এশিয়া মহাদেশে দক্ষিণ আফ্রিকার রেকর্ড। এতেই মূলত দক্ষিণ আফ্রিকা ১০৮ রানে ৬ উইকেট হারালেও শেষ পর্যন্ত প্রথম ইনিংসে ৩০৮ রানে থেমেছে। অর্থাৎ টেল এন্ডার ৪ জন ভেরেইনকে সঙ্গ দিয়ে যোগ করেন আরও ২০০ রান। সে কারণেই ২০২ রানের লিড পেয়ে শক্ত অবস্থানে পৌঁছে দক্ষিণ আফ্রিকা। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম ইনিংস শেষে এগিয়ে থাকা দলই সাধারণত জয় পেয়ে থাকে। সেখানে বড় ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় দিনশেষে ৩ উইকেটে ১০১ রান তুলে সংগ্রাম করছে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে। এখনো ১০১ রানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।
আগের দিন দুর্দান্ত বোলিং করা তাইজুল ইসলাম দ্বিতীয় দিন কিছুই করতে পারেননি। ভেরেইন আর মুল্ডার বাংলাদেশী স্পিনারদের খুব সহজেই মোকাবিলা করেছেন। বিশেষ করে ভেরেইন একেবারে সাবলীল ছন্দে ব্যাট চালিয়েছেন, করেছেন সুইপ ও রিভার্স সুইপ। এশিয়ার মাটিতে স্পিনারদের জন্য সহায়ক উইকেট থাকে। মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন তাইজুল দেখিয়েছেন প্রোটিয়া বোলারদের জন্য তিনি কতটা সমস্যার সৃষ্টি করেছেন। তবে তাকেও স্বাচ্ছন্দ্যে মোকাবিলা করেছেন ভেরেইন। তার সঙ্গে উইয়ান মুল্ডারও দুর্দান্ত ব্যাট করেছেন। সপ্তম উইকেটে তাই ১১৯ রানের জুটি হয়েছে।

উপমহাদেশের মাটিতে এটাই দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্টে সপ্তম উইকেটের রেকর্ড জুটি। রাওয়ালপিন্ডিতে ১৯৯৭ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০৬ রানের সপ্তম উইকেট জুটি গড়েন শন পোলক ও ডেভিড রিচার্ডসন। বাংলাদেশের বিপক্ষে এর আগে সপ্তম উইকেটে প্রোটিয়াদের সেরা জুটি গড়েন মুল্ডার ও কেশব মহারাজ ২০২২ সালে গেবেহায় ৮০ রানের। আর বাংলাদেশের মাটিতে সপ্তম উইকেটে তাদের সেরা জুটি ছিল ২০০৩ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে।

সেবার রবিন পিটারসন ও পোলক ৪৫ রানের জুটি গড়েন। এবার ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক পেয়েছেন মুল্ডার। অথচ আগের দিন ১০৮ রানেই ৬ষ্ঠ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখান থেকে তারা দ্বিতীয় দিন সকালের আর্দ্রতার মধ্যেও বিন্দুমাত্র সমস্যায় পড়েননি। কারণ বাংলাদেশের একাদশে মাত্র একজন পেসার। 
অধিনায়ক শান্ত সকাল থেকেই স্পিনারদের ওপর আস্থা রেখেছেন। শেষ পর্যন্ত সেই একমাত্র পেসার হাসান মাহমুদই জোড়া আঘাতে ব্রেক থ্রু এনে দেন। যদিও ততক্ষণে ১০০ পেরিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার লিড। মুল্ডার ১১২ বলে ৮ চারে ক্যারিয়ারসেরা ৫৪ রানে এবং কেশব মহারাজ প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরেন। প্রথম সেশনে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে আগের দিনের সাথে ১০৩ রান যোগ করে প্রোটিয়ারা ৩০ ওভারে।

এরপর ডেন পিয়েটকে নিয়ে নবম উইকেটে ভেরেইন আরও ৬৬ রানের জুটি গড়েন যা দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে যায় ২০০ রানের লিডের কাছাকাছি। ভেরেইন তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যান। এশিয়ার মাটিতে ৬ ওয়ানডে খেলেছেন ভেরেইন, একটি মাত্র অর্ধশতক পেয়েছেন ৫ ইনিংস ব্যাট করে। তবে এই প্রথম এশিয়াতে টেস্ট খেলতে এসেছেন তিনি। অথচ তার মধ্যে এমন ধীরগতির স্পিনিং উইকেটে মোটেও বিচলিত অবস্থায় দেখা যায়নি। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পেয়ে যান তিনি ১৩৪ বল খেলে।

ভেরেইন এমন ব্যাটিং করতে পেরেছেন সতীর্থদের কাছ থেকে দারুণ সঙ্গ পাওয়ার কারণে। ২০১৩ সালে প্রথম প্রোটিয়া উইকেটরক্ষক হিসেবে এশিয়ায় সেঞ্চুরি করেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। পাকিস্তানের বিপক্ষে দুবাইয়ে ১৬৪ করেন তিনি। আর ২০১৯ সালে কুইন্টন ডি কক বিশাখাপত্তমে ভারতের বিপক্ষে করেন ১১১ রান।
পিয়েট ৮৭ বলে ২ চারে ৩২ রানে যখন মেহেদি হাসান মিরাজের অফস্পিনে বিদায় নেন ততক্ষণে ১৮৭ রানের লিড পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ পর্যন্ত মিরাজের অফস্পিনে ডাউন দ্য উইকেটে এসে তুলে মারতে গিয়ে স্টাম্পিং হন। ভেরেইন ১৪৪ বলে ৮ চার, ২ ছক্কায় করেন ১১৪ রান। তার অসাধারণ এই সেঞ্চুরির কল্যাণেই প্রথম ইনিংসে ৩০৮ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। হাসান ৩টি, মিরাজ ২টি ও তাইজুল ৫টি উইকেট নেন।

কিন্তু বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে কাগিসো রাবাদার পেস আক্রমণের সামনে ৪ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে বড় বিপর্যয়ের শঙ্কায় পড়ে। তবে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে ৩ উইকেটে ১০১ রান করতে পেরেছে বাংলাদেশ। মূলত ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ের ৮০ বলে ৫ চারে ৩৮ ও মুশফিকুর রহিমের ২৬ বলে ৩ চারে ৩১ রানের অপরাজিত ইনিংসটা স্বাগতিকদের আশা দিচ্ছে ঘুরে দাঁড়ানোর।

×