.
দুজন দুধরনের বোলার। কাগিসো রাবাদা ডানহাতি পেসার আর তাইজুল ইসলাম বাঁহাতি স্পিনার। দুজনই দাপট দেখিয়েছেন সোমবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। উভয়ে পেরিয়েছেন নতুন মাইলফলক। টেস্টে ৩০০ উইকেট শিকারের গৌরব অর্জন করেছেন রাবাদা সবচেয়ে কম ডেলিভারি দিয়ে। আর তাইজুল দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ২০০ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। তবে সাকিব আল হাসানের চেয়ে দ্রুততম তাইজুল।
মিরপুরের উইকেটে ভিন্নধর্মী দুই বোলারের সাফল্যের রহস্যটা লুকিয়ে আছে সময়ে। সকালের আর্দ্রতায় নতুন বলে পেস আর সুইংয়ে রাবাদা ছাড়াও আরেক পেসার উইয়ান মুল্ডার ঝড় তুলেছেন। চা বিরতির পর তাইজুল ভেল্কি দেখিয়েছেন স্পিনে। বোলারদের এমন দাপটে বাংলাদেশ-ভারত প্রথম টেস্টের প্রথম দিন পতন ঘটেছে ১৬ উইকেটের। বাংলাদেশ গুটিয়ে গেছে ১০৬ রানে আর দিনশেষে দক্ষিণ আফ্রিকা তুলেছে ৬ উইকেটে ১৪০ রান। দুই দলের ব্যাটিং ব্যর্থতার পরও দিনশেষে ৩৪ রানে এগিয়ে থেকে স্বস্তিতে প্রোটিয়ারা।
মিরপুর টেস্ট শুরুর আগেই দুই দলের অধিনায়ক একমত হয়েছিলেন টস জেতাটা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখানে সাধারণত চতুর্থ ইনিংসে অর্থাৎ ম্যাচের শেষ ইনিংসে ব্যাট করতে চায় না কোনো দলই। যদি উইকেট খুবই ঝামেলাপূর্ণ থাকে সেক্ষেত্রে টস জিতলে ব্যাটিং না নিয়ে ফিল্ডিং নেয় কোনো দল। সকালের আর্দ্রতা আর নতুন বলে সমস্যা হতে পারে জেনেও অবশ্য নাজমুল হোসেন শান্ত টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছেন।
তাতে বিপদ আছড়ে পড়েছে বাংলাদেশের ইনিংসে। প্রথম থেকেই রাবাদা-মুল্ডার ভয়ানক হয়ে ওঠেন। দ্বিতীয় ওভারেই বিদায় নেন সাদমান ইসলাম (০)। তাকে সাজঘরে ফিরিয়ে আবার মুমিনুল হক (৪) ও শান্তকেও (৭) শিকার করেন মুল্ডার। ফলে শুরুতেই বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। তা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ দেননি রাবাদা। মুশফিকুর রহিমকে বোল্ড করে টেস্ট ক্যারিয়ারে ৩০০ উইকেটের দেখা পান রাবাদা। এই মাইলফলক ছুঁতে একটি উইকেটই প্রয়োজন ছিল তার।
পরে লিটন দাসও (১) তার শিকার হলে বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। লাঞ্চ বিরতির আগে মেহেদি হাসান মিরাজও (১৩) বাঁহাতি স্পিনার কেশব মহারাজের শিকার হন। ৬ উইকেটে ৬০ রানে লাঞ্চ বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। রাবাদা সবচেয়ে কম বল ছুঁড়ে টেস্টে ৩০০ উইকেট শিকারের বিশ্ব রেকর্ড গড়েন। পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার ওয়াকার ইউনুস ওয়াকার ১২ হাজার ৬০২ ডেলিভারি করে এই মাইলফলক পেরিয়ে বিশ্ব রেকর্ডধারী ছিলেন। এখন রাবাদা ১১ হাজার ৮১৭ ডেলিভারি করে ৩০০ উইকেট নিয়ে ওয়াকারের রেকর্ড ভেঙেছেন। উভয়ে অবশ্য ৬৫ টেস্টেই এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন।
মাহমুদুল হাসান জয় একাই লড়ে দীর্ঘক্ষণ উইকেটে থেকে ৯৭ বলে সর্বোচ্চ ৩০ রান করার পরও ৪০.১ ওভারে ১০৬ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। ৩টি করে উইকেট নেন মুল্ডার, রাবাদা ও মহারাজ। এটি দেশের মাটিতে বাংলাদেশের পঞ্চম সর্বনিম্ন ও মিরপুরে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রান। এর আগে মিরপুরে ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮৭ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই হাসান মাহমুদের পেসে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এইডেন মার্করাম বোল্ড হলেও দক্ষিণ আফ্রিকা ২ উইকেটে ৬৫ রান তুলে চা বিরতিতে যায়। টনি জর্জি ও ত্রিস্তান স্টাবসের মধ্যে ৪১ রানের জুটি অবশ্য এর আগেই ভেঙে দেন তাইজুল। ২৭ বলে ৪ চারে ২৩ রান করা স্টাবসকে সাজঘরে ফেরেন। চা বিরতির পর তাইজুলের ঘূর্ণি ছোবলে বিপর্যস্ত হয়ে যায় প্রোটিয়া ব্যাটাররা। তার দাপটে বড় কোনো জুটি হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার।
ডেভিড বেডিংহ্যাম (১১), জর্জি ৭২ বলে ৪ চারে ৩০ তার তাইজুলের শিকার হন। এরপর ম্যাথু ব্রিটজকে (০) তার স্পিনে বোল্ড হতেই দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে টেস্টে ২০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন তাইজুল। সাকিব এক্ষেত্রে প্রথম। তবে তাইজুল তারচেয়ে দ্রুত। তিনি ৪৮তম টেস্টে এই কৃতিত্ব দেখালেন ৮৫তম ইনিংসে। আর সাকিব ৫৪তম টেস্টের ৯১তম ইনিংসে ২০০ উইকেট পেরিয়েছেন। ইংলিশ স্পিনার গ্রায়েম সোয়ানও ৪৮ টেস্টে আর ৪৭ টেস্টে অনিল কুম্বলে, রঙ্গনা হেরাথ, চন্দ্রশেখর ও দানিশ কানেরিয়া ৪৭ টেস্টে এই কৃতিত্ব দেখান। ৪৯ বলে ৪ চারে ২৭ রান করা রিকেলটনকে কট বিহাইন্ড করে ক্যারিয়ারে ১৩তম বার ইনিংসে ৫ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখান তাইজুল। তবু তবু দিনশেষে ৬ উইকেটে ১৪০ রান তুলে স্বস্তিতে দক্ষিণ আফ্রিকা। কারণ ৩৪ রানের লিড পেয়েছে তারা। ৪৯ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। একদিনে ১৬ উইকেটের পতন মিরপুর এর আগে দেখেনি। বোলারদের দাপটেই সেটি হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর ॥ বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস- ১০৬/১০; ৪০.১ ওভার (মাহমুদুল ৩০, সাদমান ০, মুমিনুল ৪, শান্ত ৭, মুশফিক ১১, লিটন ১, মিরাজ ১৩, জাকের ২, নাঈম ৮, তাইজুল ১৬, হাসান ৪, অতিরিক্ত ১০; মুল্ডার ৩/২২, রাবাদা ৩/২৬, মহারাজ ৩/৩৪, পিট ১/১৯)।
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস- ১৪০/৬; ৪১ ওভার (মার্করাম ৬, জর্জি ৩০, স্টাবস ২৩, বেডিংহ্যাম ১১, রিকেলটন ২৭, ব্রিটজকে ০, ভেরেইন ১৮*, মুল্ডার ১৭*; অতিরিক্ত ৮; তাইজুল ৫/৪৯, হাসান ১/৩১)।
*প্রথম দিনশেষে।