ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১

মিরপুরে দ.আফ্রিকার সঙ্গে প্রথম টেস্ট শুরু আজ

জয়ের জন্যই খেলবে টাইগাররা

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ২২:১৯, ২০ অক্টোবর ২০২৪

জয়ের জন্যই খেলবে টাইগাররা

সিরিজের ট্রফি হাতে নাজমুল শান্ত ও এইডেন মার্করাম

মিরপুর মানেই রেকর্ডগুলো সাকিব আল হাসানের। তাকে ছাড়াই এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলতে নামছে বাংলাদেশ। সকাল ১০টায় ম্যাচটি শুরু হবে। স্কোয়াডে থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাদ পড়েছেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার সাকিব। কারণ, দেশে ফিরতে পারেননি তার পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ চলার কারণে। তিনি পূর্ব ঘোষণা মোতাবেক ক্যারিয়ারের শেষ এই টেস্ট খেলতে পারলে যেমন সবার আলোচনার কেন্দ্রে থাকতেন, তেমনি না খেললেও আলোচনায় আছেন।

যদিও উভয় দলেরই পুরো মনোযোগ মাঠের ক্রিকেটে। বাংলাদেশ দলেও যে স্কোয়াড আছে তা নিয়ে শতভাগ উজাড় করে দিয়ে জিততে মুখিয়ে আছে। কারণ প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ১৪ টেস্ট খেলে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ঘরের মাটিতে এবার একেবারে নতুন চেহারার দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর সুযোগ দেখছে স্বাগতিকরা।এটি হবে নতুন কোচ ফিল সিমন্সের প্রথম চ্যালেঞ্জ এবং তিনি জানিয়েছেন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলার সুযোগ আসবে পরবর্তী টেস্টগুলো জিতলে। তার লক্ষ্যটাও স্পষ্ট। আর দক্ষিণ আফ্রিকার চাওয়া স্পিন চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে রোমাঞ্চকর খেলা উপহার দেওয়ার। 
বোলিং রেকর্ডে তিন ফরম্যাটের প্রতিটিতে সাকিব সবাইকে ছাড়িয়ে অনেক ওপরে। তবে ব্যাটিংয়ে পিছিয়ে পড়েছেন। কারণ তিনি মিরপুরের স্পিন সহায়ক উইকেটে ব্যাটারদের যেখানে অনেক সংগ্রাম করতে হয়, সেখানে বল হাতে নিয়মিতই ভেল্কি দেখিয়েছেন। কিন্তু ২০২৩ সালে পুরো বছরে ১ টেস্ট এবং ভারত-পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ দুই টেস্ট সিরিজ বাদে চলতি বছর আরেকটি টেস্ট খেলা সাকিব মিরপুরে খেলার সুযোগ কমই পেয়েছেন। এবার তিনি এখানেই খেলে অবসরে যেতে চেয়েছিলেন। তবে সেটি হচ্ছে না।

গত আগস্টে পতন হওয়া সরকারের সংসদ সদস্য ছিলেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সেই সরকার পতনের বিক্ষোভে হামলা, গুলি হওয়ার পরও দেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় সাকিব বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ করেননি। তাই তারা কোনোভাবেই সাকিবকে খেলতে দিতে চান না দেশের মাটিতে। অবশ্য তাকে খেলানোর দাবিতেও ভক্ত-সমর্থকরা বিক্ষোভ করেছেন। সবমিলিয়ে ম্যাচের আগের দিন মিরপুর স্টেডিয়ামের সামনে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষও হয়েছে দফায় দফায়। আজ ম্যাচ চলাকালীনও সে ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও এর প্রভাব দুই দলের মধ্যে পড়েনি।

কারণ দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এইডেন মার্করাম জানিয়ে দিয়েছেন, সাকিবকে ছাড়াই চ্যালেঞ্জিং হবে বাংলাদেশ দল। কারণ বাংলাদেশের স্পিন বিভাগ বেশ শক্তিশালী। সাকিবের পরিবর্তে তরুণ বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদ এসেছেন, যার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে রেকর্ডটা বেশ ভালো। শান্তও তাকে নিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন। 
মিরপুরে চিরাচরিতভাবেই স্পিনাররা দাপট দেখান। তাই বাংলাদেশ দলের একাদশে ৪ স্পিনার এবং ১ পেসার দেখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মুরাদ অভিষেক ক্যাপ পেতে পারেন। তার সঙ্গে অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম, অফস্পিনার নাঈম হাসান ও অফস্পিন অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ খেলতে পারেন। একমাত্র পেসার হিসেবে হাসান মাহমুদ আসতে পারেন একাদশে। তবে ম্যাচের প্রতিদিনই বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় একজন স্পিনার কমিয়ে দুই পেসার নিয়েও একাদশ হতে পারে। সেক্ষেত্রে তাসকিন আহমেদ কিংবা নাহিদ রানার মধ্যে একজন সুযোগ পাবেন।

২০১৫ সালে সর্বশেষবার বাংলাদেশ সফরে আসা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই টেস্টেই ড্র করে স্বাগতিকরা বৃষ্টির আশীর্বাদে। তবে এবার খেলেই তাদের হারানোর সুযোগ দেখছে বাংলাদেশ দল। কারণ এবার প্রোটিয়া দলটি তেমন অভিজ্ঞ নয়। ৯ বছর আগের দলটির মাত্র দুজন এসেছেন। বাকি সবার জন্যই এবার বাংলাদেশের পরিবেশ ও উইকেট নতুন। এশিয়ায় ২০১৪ সালে সর্বশেষবার টেস্ট জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই জয়টি পেয়েছেন তারা।

এর পর গত ১০ বছরে ১৩ টেস্ট খেলে ১০টিতে হেরেছে আর ৩টি ড্র করেছে তারা। তবে মার্করাম বলেছেন, এই দলটা বেশ তরুণ ও উপমহাদেশে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতাও কম। যে কোনো ক্রিকেটার এ ধরনের চ্যালেঞ্জের জন্য মুখিয়ে থাকবে। আমরাও এই সিরিজটা খেলতে মুখিয়ে আছি, যা ভবিষ্যতে আমাদের উপমহাদেশ সফরেও কাজে লাগবে। তাছাড়া কেশব মহারাজের মতো অভিজ্ঞ স্পিনার আছে যিনি বিপিএল খেলেছেন। তার অভিজ্ঞতা থেকে দলের সবাই প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সাজাতে পারবে। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৪ টেস্ট খেলে ১২টিতেই জিতেছে তারা। সেই রেকর্ডেও তারা এগিয়ে।

কিন্তু শান্তর দাবি বাংলাদেশই এগিয়ে। এ বিষয়ে শান্ত বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে আমরা আগে কখনো জিতিনি। আমাদের ঘরের মাঠে খেলা, আমরা ঘরের মাঠে ভালো দল। আমি মনে করি, এটা আমাদের জন্য দারুণ কিছু করার ভালো সুযোগ। কোচ সিমন্সের অধীনে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের নতুন যুগ। মাত্র ৪ দিন সময় পেয়েছেন তিনি চান্দিকা হাতুরুসিংহে বরখাস্ত হওয়ার পর। খুব বেশি পরিকল্পনা দেননি তিনি। কিন্তু সিমন্সও জয় পাওয়ার দিকেই মনোযোগী। দক্ষিণ আফ্রিকাও স্পিন সহায়ক স্কোয়াড নিয়েই নামবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

তাই লড়াইটা মিরপুরে আরেকবার স্পিনেরই হবে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হওয়াই দুই দলই এই সিরিজে হারতে চায় না। ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে খুব বাজেভাবে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ দলের একাদশে কিছু পরিবর্তন নিশ্চিতভাবেই দেখা যাবে আজ। কারণ কন্ডিশন অনুসারে স্পিন নির্ভর একাদশ হবে এবং ওপেনিংয়ে ব্যর্থ জাকির হাসানের জায়গায় আসতে পারেন মাহমুদুল হাসান জয়।

×