ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১

সাকিববিরোধী স্লোগানে উত্তাল শেরেবাংলা

স্পোর্টস রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫৩, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

সাকিববিরোধী স্লোগানে উত্তাল শেরেবাংলা

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সাকিবকে না খেলানোর দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকেও সবকিছু প্রস্তুত করা হয়। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলবেন সাকিব আল হাসান। তাকে নিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচের দল ঘোষণা করে বিসিবি। এমনকি সাকিবকে বিদায় দেওয়ার সব পদক্ষেপও নেয়। সাকিবও যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে আসবেন বৃহস্পতিবার রাতে এমনটাই শোনা যায়।

এরপরই সাকিবকে খেলতে না দেওয়ার জন্য বিক্ষোভ শুরু হয়। ছাত্র-জনতার ব্যানারে মিরপুর স্টেডিয়ামের মূল গেটে আন্দোলন করে বিপুল সংখ্যক মানুষ। সাকিববিরোধী নানা বক্তব্য সংবলিত ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়ায় তারা। এরপর বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয় যেখানে বলা হয়েছে, সাকিব খেললে ম্যাচের দিন কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। দেশের এমন পরিস্থিতিতে সাকিবকে জানানো হয় আপাতত দেশে আশা নিরাপদ নয়। তাই তিনি দুবাই থেকে ফিরে যান। 
ভারত সফরে বাংলাদেশ দলের দুই টেস্টের সিরিজে ছিলেন সাকিব। কানপুরে দ্বিতীয় টেস্টের আগে তিনি ঘোষণা করেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলবেন। এরপরই তার দেশে ফেরা নিয়ে শুরু হয় জল্পনা-কল্পনা। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকেও সেভাবে ইতিবাচক কিছু বলা হয়নি। তাই দেশে খেলে অবসর নেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়ে। তবে বিষয়টি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক আলোচনা ও সমালোচনা হওয়ার পর কিছুটা সহনীয় হয় পরিস্থিতি।

তখনো মিরপুরে চলেছে বিষয়টি নিয়ে বিক্ষোভ। সাকিবের পক্ষে তার ভক্ত-সমর্থকরা মানববন্ধন করেছেন। আবার তার বিরোধীরাও সাকিবকে খেলতে না দেওয়ার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। সবমিলিয়ে বেশ ঘোলাটে হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। মিরপুর স্টেডিয়ামের দেওয়ালে গ্রাফিতি এঁকে সাকিববিরোধী নানা স্লোগান লেখা হয় এবং সাকিবের ছবি টানিয়ে জুতাপেটা করা হয়।

কিন্তু পরবর্তীতে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়ে দেন, গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে যে কেউ আইন ভঙ্গ না করে বিক্ষোভ করতে পারে এবং দেওয়াল লিখন করতে পারে। ওই সময় তিনি সাকিব দেশে আসা ও যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আইনি বাধা নেই বলে জানিয়ে দেন। এ ছাড়া খেলার ক্ষেত্রেও পরিপূর্ণ নিরাপত্তা পাবেন বলে জানানো হয়। 
সর্বশেষ এই ঘোষণার কারণে সাকিবের দেশে এসে টেস্ট খেলে অবসর নেওয়ার পথ উন্মুক্ত হয়। জানা যায় তিনি বৃহস্পতিবার রাতে ফিরবেন। বুধবার তাই সাকিবের ভক্ত-সমর্থকরা মিরপুর স্টেডিয়ামের দেওয়াল তার বিরোধীদের খেলা গ্রাফিতি সাদা রঙে ঢেকে দিয়ে যান। কিন্তু রাতে আবার সাকিববিরোধীরা তার কুশপুতুল জ¦ালিয়ে প্রতিবাদ করে। বৃহস্পতিবার দুপুরে আরও উত্তাল হয়ে ওঠে মিরপুর। সাকিবকে বাংলাদেশ দলে না খেলানোর দাবি জানিয়েছেন একদল বিক্ষোভকারী।

স্টেডিয়ামের মূল ফটকের সামনে ‘মিরপুর ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। স্টেডিয়ামের সামনে জড়ো হওয়া শ’খানেক মানুষ ‘নো এন্ট্রি সাকিব’, ‘সাকিব তুমি মিরপুরের ক্রিকেট পিচ চিনতে পার। কিন্তু আমরা মিরপুরের রাজপথ চিনে বড় হইছি’, ‘আমার ভাই কবরে, সাকিব কেন বাইরে’, ‘হাসিনার দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ এমন লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।

এ সময় মূল ফটক বন্ধ করে সেখানে বিপুল পরিমাণ আনসার ও পুলিশ সদস্য অবস্থান নেন। পরে বিসিবি সভাপতি বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে কর্মসূচির জেরে কোনো অরাজকতা সৃষ্টি হলে বা দেশের ক্রিকেট কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিসিবিকে এর দায়ভার নিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এই বিক্ষোভ চলার সময়েই দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল অনুশীলন করছিল একাডেমি মাঠে। তাই নিশ্চিতভাবেই বিষয়টি তাদেরও নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলে দেয়। যদিও সেনাবাহিনীর দুটি গাড়ি ছিল তাদের জন্য ভেতরেই। 
সার্বিক পরিস্থিতিতে দেশের পথে থাকা সাকিবকে জানানো হয় আপাতত দেশে না ফেরার জন্য। দুবাই পর্যন্ত এসে তাই ফিরেই যান এ অলরাউন্ডার। এ বিষয়ে এক জনপ্রিয় ক্রিকেট ভিত্তিক ওয়েবসাইটে সাকিব বলেছেন, ‘পরবর্তী সময়ে কোথায় যাব জানি না। তবে এটা প্রায় নিশ্চিত যে আমি দেশে ফিরছি না।’

×