ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১

ক্রিকেটারের গায়েও হাত তুলতেন হাতুরু

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০০:৫৯, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

ক্রিকেটারের গায়েও হাত তুলতেন হাতুরু

বাংলাদেশের ক্রিকেটে আর দেখা যাবে না কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর এমন যুগলবন্দী

আরও আগেই এমনটা চেয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী ভক্ত-সমর্থকরা। কারণ চান্দিকা হাতুরুসিংহে কোচ হিসেবে দেখিয়েছেন ঔদ্ধত্য। এমনকি জুনিয়র একজন ক্রিকেটারের গায়ে হাত তুলেছেন গত বছর ওয়ানডে বিশ^কাপ চলার সময়ে। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড়ও হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত পার পেয়ে গেছেন হাতুরু, কারণ তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন তখনকার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।

কিন্তু বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদ সেই ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন এবং ব্যাখ্যা চেয়ে কারণ দর্শানো নোটিস দিয়ে ৪৮ ঘণ্টার জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। বিষয়টি মঙ্গলবার বিকেলে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হওয়া সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন ফারুক। তিনি দাবি করেছেন, একজন খেলোয়াড়কে কখনোই শারীরিকভাবে আঘাত করা যায় না এটার শাস্তিই এখন পেয়েছেন হাতুরু। এর বাইরে চুক্তির বাইরে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ছুটি কাটানোর বিষয়টিও রয়েছে। ফারুক জানিয়েছেন, সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিজ তারকা ফিল সিমন্স অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত কাজ করবেন।
হাতুরুসিংহের গত ওয়ানডে বিশ^কাপে নানা আচরণ নিয়ে একটি তদন্ত হয়েছে আগেই। সেই রিপোর্ট নতুন করে পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং বিভিন্ন ক্রিকেটারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন ফারুক। তিনি হাতুরু কর্তৃক একজন ক্রিকেটারকে শারীরিকভাবে হেনস্তার সত্যতা পেয়েছেন। তাই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘একজন জাতীয় দলের খেলোয়াড়কে আপনি কখনোই শারীরিকভাবে আঘাত করতে পারেন না।

এটার শাস্তি সেটাই, যেটা এখন হচ্ছে।’ এ ছাড়া হাতুরুসিংহে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ছুটি কাটিয়েছেন। বছরে ৪৫ দিন ছুটি কাটানোর কথা থাকলেও তিনি প্রথম বছরে কাটিয়েছেন ৬৭ দিন। দ্বিতীয় বছরে এখন পর্যন্ত ১৪ দিন ছুটি কাটিয়ে ফেলেছেন তিনি। তার চুক্তি আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত। তার আগেই গত বছর মার্চ থেকে দায়িত্ব পালন করা হাতুরুসিংহেকে বিদায় জানাল বিসিবি।

এ বিষয়ে ফারুক বলেন, ‘বরখাস্ত করার আগে আমরা তাঁকে নিয়ম মেনে শোকজ নোটিস করেছি। ৪৮ ঘণ্টার জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে তাঁকে। এরপর আমরা বরখাস্ত করব। কারণ এ বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে যাবে। আমরা চাই না বিষয়টা নিয়ে কোনো বিরূপ ঘটনার সূত্রপাত হোক। তাই আইনি প্রক্রিয়ায় আমরা বিষয়টি করছি। আপাতত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত কোচ ফিল সিমন্স।’ গত রবিবার রাতে ভারত সফর শেষ করে দলের সঙ্গে ফিরেছেন হাতুরুসিংহে।

ফারুক বিসিবি সভাপতি হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তার সঙ্গে কোনো দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। এবারও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিজামউদ্দিন চৌধুরীই সার্বিক বিষয়াদি আলোচনা করেছেন হাতুরুর সঙ্গে এবং তাকে শোকজের চিঠিও দিয়েছেন।
মূলত অসদাচরণের জন্যই হাতুরুসিংহের বিদায় ঘটছে, সঙ্গে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ। অথচ শৃঙ্খলার জন্য কড়া হিসেবে সমাদৃত হওয়ার কারণেই তাকে দ্বিতীয় মেয়াদে আবার কোচ হিসেবে নিয়োগ করে বিসিবি। এ বিষয়ে ফারুক বলেছেন, ‘দুই তিনটি ঘটনা ঘটেছে, যেগুলো আসলে একজন সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে আমার জন্য খুব পীড়াদায়ক ছিল। পাশাপাশি এটা দলের জন্যও খুব একটা ভালো উদাহরণ ছিল না।

সেগুলো বিবেচনা করে আজকে (মঙ্গলবার) আমরা তাঁকে একটা কারণ দর্শাও নোটিস এবং দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির চিঠি দিয়েছি।’ কিন্তু পারফর্ম্যান্সের জন্য হাতুরুকে বিদায় দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ফারুক। কারণ দলের পারফর্ম্যান্স সবসময়ই ওঠা-নামা করে। বরং বেশ কিছু ভালো সাফল্য এনে দিয়েছেন হাতুরুসিংহে সেটাও স্বীকার করেছেন ফারুক। তবে ওয়ানডে বিশ^কাপের ব্যর্থতা মানার মতো ছিল না সেটিও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রথম দফায় ২০১৪ সালের মে থেকে ২০১৯ সালের বিশ^কাপ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোচ হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েও নিজে থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন হাতুরু। আর এবার গত বছর মার্চ থেকে দায়িত্ব নেন। এবার তার পরিবর্তে আসছেন সিমন্স। এর আগে দুই দফা বাংলাদেশের কোচ হওয়ার আগ্রহ দেখিয়ে নিজের পরিকল্পনার প্রেজেন্টেশনও দিয়েছেন তিনি। তবে দুই পক্ষের সমঝোতা না হওয়ায় বিষয়টি এগোয়নি।

এবার ফারুক বলেছেন, ‘তার সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে। আপাতত আমরা অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব দিচ্ছি তাকে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই সিরিজ, এরপর আরব আমিরাতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কাজ করবেন তিনি।’ 
দুই দফায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচ ছিলেন তিনি, তার কোচিংয়েই ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপ জয় করে ক্যারিবিয়ানরা।

এর আগে-পরে মিলিয়ে জিম্বাবুইয়ে, আয়ারল্যান্ডের প্রধান কোচ ছিলেন তিনি, ব্যাটিং কোচ ছিলেন আফগানিস্তান দলের। এ ছাড়াও নানা সময়ে বিভিন্ন দলের পরামর্শক ও বিশেষজ্ঞ কোচ হিসেবে কাজ করেছেন, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোয় প্রধান কোচসহ নানা ভূমিকা পালন করেছেন।

×