.
গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট। যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে লুকিয়ে থাকে রোমাঞ্চ ও নাটকীয়তা। তাই তো যুগে যুগে খেলাটি আবেদন এতটুকু কমেনি। টেস্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে যারা শঙ্কায় ছিলেন, ধুন্ধুমার ‘বাজবল স্টাইলে’ তাদের মুখে চুনকালি দিচ্ছে ইংল্যান্ড। মুলতান টেস্টের প্রথম ইনিংসে তিন সেঞ্চুরিতে ৫৫৬ রান তোলার পর পাকিস্তান নিশ্চয়ই বাংলাদেশের কাছে ‘হোয়াইটওয়াশ’ হওয়ার দুঃখ ভোলার স্বপ্ন দেখছিল। জো রুটের ডাবল সেঞ্চুরি ও হ্যারি ব্রুকের অনবদ্য ট্রিপল সেঞ্চুরির সৌজন্যে ৭ উইকেটে ৮২৩ রানে ইনিংস ঘোষণা করে উল্টো ২৬৭ রানে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। সেই রান শোধ করে লিড নেওয়া দূরের কথা, দ্বিতীয় ইনিংসে ২২০ রানে অলআউট হয়ে ইনিংস ও ৪৭ রানে হার মানে পাকিস্তান! টেস্ট ক্রিকেটের প্রায় দেড়শ’ বছরের ইতিহাসে পাঁচশ’র ওপরে রান তুলে ইনিংস ব্যবধানে হারের ঘটনা এটিই প্রথম। ৩১৭ রানের ম্যারাথন ইনিংস খেলে ব্রুক হয়েছেন ম্যাচসেরা।
পাকিস্তান যে হারতে যাচ্ছে চতুর্থ দিনেই সেটি বোঝা যাচ্ছিল। দেখার ছিল ইনিংস হার এড়াতে পারে কি না। ৬ উইকেটে ১৫২ রান নিয়ে শুক্রবার পঞ্চম ও শেষ দিন শুরু করা মাসুদদের দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে গেছে ২২০ রানে। ৬৮ রান যোগ করতে বাকি ৪ উইকেট হারিয়ে অলআউট হয় পাকিস্তান। ৪১ রান নিয়ে নামা সালমান আগা ব্যক্তিগত ৬৩ রান করে আউট হন। ২৭ রান নিয়ে নামা আমের জামাল অপরাজিত থাকেন ৫৫ রানে। ইংল্যান্ডের হয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন স্পিনার জ্যাক লিচ। দুটি করে শিকার গাস অ্যাটকিনসন ও ব্রাইডন ক্রেসের। রেকর্ডের জন্য ঐতিহাসিক এই টেস্টের গল্পটা আসলে কেবলই ব্রুক ও রুটের। ৩৭৫ বলে ১৭ চারে ২৬২ রান করে আউট হয়েছেন রুট। এর মধ্য দিয়ে গ্রেট অ্যালিস্টার কুককে (১২৬৬৪) পেছনে ফেলে টেস্টে ইংল্যান্ড ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের মালিক বনে গেছেন রুট (১২৪৭২)। ক্যারিয়ারের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরির পথে ২৯ চার ও ৩ ছক্কায় মাত্র ৩২২ বলে ৩১৭ রানের ম্যারাথন ইনিংস উপহার দিয়েছেন ব্রুক। দুজনে যোগ করেছেন ৪৫৪ রান- চতুর্থ উইকেট জুটিতে যা বিশ্বরেকর্ড। বেন স্টোকসের ইনজুরিতে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ওলি পোপ এই দুজনের পাশাপাশি মুলতানের ফ্ল্যাট উইকেটে দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানকে সহসা গুটিয়ে দেওয়ায় বোলারদেরকেও বিশেষ কৃতিত্ব দিয়েছেন।
অন্যদিকে পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদ বোলারদের ব্যর্থতাকে বড় করে দেখছেন,‘আমরা তৃতীয় বা চতুর্থ ইনিংসের ব্যাপারে কথা বলছি। কিন্তু দিনশেষে এটি দলীয় খেলা। দল হিসেবে সবকিছুরই নিজস্ব সুবিধা ও প্রতিক্রিয়া আছে। আপনি ৫৫০ রান করবেন, তখন এর বিপরীতে ১০ উইকেট নিতে হবে। আমরা যদি ১০ উইকেট নিতে পারতাম ও ইংল্যান্ডকে আমাদের রানের আশপাশে রাখতে পারতাম, তাহলে পঞ্চম দিনে এই ২২০ রান চ্যালেঞ্জিং হতে পারত। দল হিসেবে আমাদের এটি বের করতে হবে যে কীভাবে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং- বোলিংয়ে অবদান রেখে ম্যাচের গতিপ্রকৃতি ঠিক করা যায়। এই জায়গায় আমরা ধুঁকছি।’ ২০২১ থেকে এ নিয়ে ঘরের মাঠে টানা ১১টি টেস্টে জিততে পারল না পাকিস্তান। নেতৃত্বের প্রথম ছয় টেস্টেই হারের স্বাদ পেলেন শান মাসুদ। পাকিস্তানের ইতিহাসে এমন নজির আর নেই।’ একই ভেন্যুতে ১৫ অক্টোবর শুরু তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট।