ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১

টি২০-তে বাংলাদেশের উন্নতি না হওয়ার কারণ

প্রকাশিত: ২১:০৫, ১০ অক্টোবর ২০২৪

টি২০-তে বাংলাদেশের উন্নতি না হওয়ার কারণ

১৮ বছরেও টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের উন্নতি নেই

আলোচনাটা বারবারই এসেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টি২০ ফরম্যাটে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি দৃশ্যমান হয়নি। এবার ভারতের বিপক্ষে চলমান টি২০ সিরিজের দুই ম্যাচেও বাংলাদেশের দুর্বলতা স্পষ্ট। ব্যাটিং কিংবা বোলিং কোনো বিভাগেই ভারতের তারুণ্য নির্ভর দলের সঙ্গে বিন্দুমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারেনি বাংলাদেশ ক্র্রিকেট দল। উভয় ম্যাচে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ভারতীয় দল ওভারপ্রতি ১১ রানের বেশি করে তুলতে পারলেও বাংলাদেশ করেছে ওভারপ্রতি ৬+ হারে। এই উন্নতি না হওয়ার কারণটাই মূলত দেশের মাটিতে ক্রিকেটাররা ভালো উইকেটে না খেলা। 

এবার বাংলাদেশ-ভারত টি২০ সিরিজে অভিজ্ঞতার দিক থেকে অনেক এগিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। কিন্তু তারা মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অধিকাংশ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটেরও সিংহভাগ ম্যাচ সেই উইকেটে খেলেন। সেই উইকেটে রান তুলতে সংগ্রাম করতে হয় ব্যাটারদের। আর বোলাররা সুবিধামতো উইকেটে দুর্দান্ত পারফর্ম করে আত্মতুষ্টিতে ভোগেন। যার সম্পূর্ণ বিপরীতমুখি প্রভাব দেখা যায় দেশের বাইরে বাংলাদেশ দল খেলতে গেলে।

এবার ভারতের বিপক্ষে টি২০ সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে যেভাবে ব্যাটে-বলে ভারতের অনভিজ্ঞরা ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত করেছেন। কারণ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) মতো আসরে তারা নিয়মিত হাই-স্কোরিং ম্যাচ খেলেন। সেসব ম্যাচে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কিভাবে বোলিং ও ব্যাটিং করতে হবে তা অনেকবারই পরীক্ষা দিয়েছেন তারা। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা মিরপুরের লো-স্কোরিং ধীরগতির উইকেটে খেলে পরবর্তীতে আর মানিয়ে নিতে পারেনা। সে কারণেই আসলে বাংলাদেশের উন্নতি নেই টি২০-তে। 

মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট নিয়ে সমালোচনা অনেক আগে থেকেই। বিশেষ করে টি২০ ফরম্যাটের জন্য উপযুক্ত উইকেট নয় বলে দাবি করা হয় সবসময়ই। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাাও বিভিন্ন সময়ে এই মাঠের উইকেট নিয়ে অভিযোগ করেছেন। এমনকি তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিমের মতো মহা তারকারাও দাবি করেছেন এমন উইকেটে খেলতে থাকলে ক্যারিয়ার হুমকির মধ্যে পড়বে। 

এমন উইকেটে সংগ্রাম করতে করতে ব্যাটিংয়ের স্বাভাবিক স্কিলও নষ্ট হয়ে যায়। তাই দেশের বাইরে কোনো উইকেটে খেলতে নামলে আর মানিয়ে উঠতে পারেন না বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এ বিষয়ে ডানহাতি পেসার তাসকিন বলেছেন,‘’ওরা বিশ্বের সেরা দল। ওরা আমাদের চেয়ে অভিজ্ঞ। ওদের কন্ডিশনে তো ওরা ভালোই। উইকেট পড়লেও ওরা আমাদের বোলারদের বিপক্ষে চড়াও হয়েছে। বড় স্কোর হওয়ায় মারতে গিয়ে আমরা দ্রুত উইকেট হারিয়েছি, ছন্দ হারিয়েছি।’’

ভালো উইকেটে খেলার অভ্যাস না থাকেলে কোনোভাবেই মানিয়ে নেওয়া যায় না। সেখানেই বড় পার্থক্য। এ বিষয়ে তাসকিন বলেছেন,’‘ওদের মতো শুয়ে-বসে খেলতে গেলে আমাদের দেশে হয়তো বল মুখে লাগবে। ওরা ছোট থেকেই ভালো উইকেটে খেলে এভাবে খেলার অভ্যাস করেছে। আইপিএলে বেশির ভাগ ম্যাচই হাই স্কোরিং হয়। ওরা জানে কিভাবে হাই স্কোরিং রান তাড়া করতে হয়, হাই স্কোর কিভাবে করতে হয়। ওদের কাছে ১৮০-২০০ রান খুবই স্বাভাবিক। আমাদের জন্য যেটা ঘরের মাঠে ১৩০, ১৪০, ১৫০ রান।’’

বাংলাদেশের তাই টি২০ ফরম্যাটে উন্নতি নেই। বরং বিভিন্ন সময়ে অবনতি হওয়া নিয়েই কথা হয়। এ বিষয়ে তাসকিন বলেছেন,‘‘সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টিতে আমাদের উন্নতি কম। আসলে আশা আর চেষ্টা ছাড়া কিছুই করার নেই এই মুহূর্তে আমাদের হাতে। সবকিছুর সিদ্ধান্ত বোর্ড নেয়, আমরা খেলোয়াড়েরা শুধুমাত্র সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টাই করতে পারি। ব্যর্থ হলে প্রত্যেকবার উন্নতির চেষ্টাটাই শুধু হাতে আছে, আর কোন কিছু হাতে নেই।’’

দেশের উইকেটে উন্নতি ঘটানোর বিষয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা হচ্ছে। তবে সেটি ফলপ্রসু হয়নি। এখন তাই স্কিলেই উন্নতি ঘটাতে হবে। ক্রিকেটাররাও সেটি উপলব্ধি করছেন। তাই এ বিষয়ে তাসকিন বলেছেন,‘‘যদি বলেন তাহলে আমাদের স্কিলে হয়তো আরও উন্নতি করতে হবে। একই সাথে দেশে আরও ভালো উইকেটে খেলতে পারলে আরও উন্নতি হবে। এগুলোই বিভিন্ন কারণ। ’’

মোঃ মামুনুর রশীদ

×